তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর বাসায় তল্লাশির নামে ঢুকে পড়েছেন ২০–২৫ জন, আটক ৩
Published: 5th, March 2025 GMT
তল্লাশির নামে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর গুলশানের বাসায় গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে একদল লোক ঢুকে পড়েছেন। পুলিশ ওই ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে। তাঁরা হলেন শাকিল খন্দকার (২৪), জুয়েল খন্দকার (৪৮) ও শাকিল আহমেদ (২৮)। জুয়েল খন্দকারের ছেলে হলেন শাকিল খন্দকার।
আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলেছে, গুলশানের ওই বাসায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ, অস্ত্র ও আওয়ামী লীগের দোসরদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল মধ্যরাতে ‘তল্লাশির’ নামে ২০ থেকে ২৫ জন লোক দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে পড়েন। তাঁরা তল্লাশির অজুহাতে বাসায় ঢুকে মালামাল তছনছ, ভাঙচুর ও লুটপাটের চেষ্টা করেন।
জাতীয় জরুরি সেবা–৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে গুলশান জোনের পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। সেখান থেকে শাকিল খন্দকার, জুয়েল খন্দকার ও শাকিল আহমেদ নামের তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রেস উইং থেকে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে শাকিল আহমেদ একসময় ওই বাসায় কেয়ারটেকারের (তত্ত্বাবধায়ক) কাজ করতেন। তিনিই মূলত জনতাকে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে, এমন তথ্য দিয়ে বাসায় তল্লাশি চালাতে উসকানি দেন।
প্রেস উইং থেকে আরও বলা হয়, এর আগে গত পরশু রাত সাড়ে ১০টার দিকেও একই অজুহাতে একদল জনতা বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ এসে তাঁদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মর্মে আবারও সতর্ক করছে যে কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। কোথাও কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে যেন সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী থানাকে জানায়। সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট রয়েছে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বদ্ধপরিকর।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কয়েক ঘণ্টার যুদ্ধে পিছু হটে পাকিস্তানিরা
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত বদলপুর। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই এলাকা ৩ নম্বর সেক্টরের আওতাভুক্ত ছিল। কিন্তু এই এলাকার বেশ কিছু যুদ্ধ ৫ নম্বর সেক্টরের বড়ছড়া সাব-সেক্টর থেকে পরিচালিত হয়েছে। ১৫ নভেম্বর জগৎজ্যোতি দাসের নেতৃত্বে একদল বীর মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ নিয়ে টেকেরঘাট থেকে নৌকাযোগে বানিয়াচংয়ে আসছিলেন। টেকেরঘাট সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানার অন্তর্গত। ১৬ নভেম্বর সকালে তাঁরা বদলপুরে পৌঁছান। সেখানে এসে জগৎজ্যোতি জানতে পারেন, একদল রাজাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে বসে চাঁদা আদায় করছে। এ কথা শুনে তিনি তাদের ওপর আক্রমণ করেন। তাঁদের আক্রমণে দুজন রাজাকার নিহত হয় এবং দুজন আত্মসমর্পণ করে। বাকি সবাই পালিয়ে যায়।
এমন সময় পাশের জলসুখা গ্রাম থেকে গুলি আসতে থাকে। এ গ্রামেই জগৎজ্যোতির বাড়ি। তিনি কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে সেদিকে রওনা হন। বাকিদের দুই ভাগে ভাগ করে একদল পাঠান পিটুয়াকান্দি, অন্য দল পাঠান আজমিরীগঞ্জের দিকে। এর মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুটি দল শাল্লা ও আজমিরীগঞ্জ থেকে এসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। অবস্থা প্রতিকূল দেখে জগৎজ্যোতি জলসুখায় না গিয়ে পিটুয়াকান্দিতে চলে আসেন। সেখানে কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকে। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের ধাওয়া করেন। ধাওয়ার এক পর্যায়ে জগৎজ্যোতি মাত্র তিনজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে তাঁদের কাছ থেকে অনেক তফাতে চলে যান। মূল দল বেশ পেছনে পড়ে থাকে এবং তারা সত্যিকার অর্থেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পশ্চাদপসরণরত পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের ওপর আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে। জগৎজ্যোতি তাঁর তিন সহযোদ্ধাকে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিরোধ করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন। দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধের এক পর্যায়ে তাঁর সহযোদ্ধা আবু লাল, গোপেন্দ্র ও উপেন্দ্র শহীদ হন। তাঁর বাঁ পাঁজরে গুলি লাগে। আহত জগৎজ্যোতিকে ধরার জন্য পাকিস্তানি সেনারা এগিয়ে আসতে থাকে। কারণ, তিনি তাদের কাছে ‘টেরর’ হিসেবে পরিচিত। অনেক অপারেশন পরিচালনা করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। আহত জগৎজ্যোতি পাকিস্তানি সেনাদের কাছে ধরা পড়ার চেয়ে আত্মাহুতি দেওয়াই শ্রেয় মনে করেন। নিজের গুলিতে শহীদ হন তিনি। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বরের। ঘটেছিল বদলপুরে।
জগৎজ্যোতি দাস ১৯৭১ সালে শিক্ষকতা করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ৫ নম্বর সেক্টরের বড়ছড়া সাব-সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন।
জগৎজ্যোতি দাস, বীর বিক্রম
গ্রাম জলসুখা (ইছবপুর), আজমিরীগঞ্জ, হবিগঞ্জ। বাবা জিতেন্দ্র দাস, মা হরিমতি দাস। অবিবাহিত। খেতাবের সনদ নম্বর ১৫৪। শহীদ ১৬ নভেম্বর ১৯৭১।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা। প্রথম খণ্ড। প্রথমা প্রকাশন।