এবারের লালন স্মরণোৎসবে লালনের মাজার ও এর আশপাশে গাঁজা ও মাদক সেবন নিষিদ্ধ বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান। স্মরণোৎসবকে কেন্দ্র করে যদি কোনো ব্যক্তি সেখানে মাদক সেবন বা বিক্রি করেন, তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

লালন স্মরণোৎসব-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে বুধবার (৫ মার্চ) বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রস্তুতি সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহা.

আব্দুল ওয়াদুদ, স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক মিজানুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম শীল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদ, বাউল ফিরোজ সাঁই, রাজ্জাক সাঁই, শফি সাঁই, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু প্রমুখ।

সভায় বলা হয়, লালন একাডেমির উদ্যোগে প্রতিবছর দোল পূর্ণিমায় তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব উদযাপন করা হয়ে থাকে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে থাকে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলা। তবে এবার পবিত্র রমজান মাসের কারণে তিন দিনের পরিবর্তে মাত্র একদিনের অনুষ্ঠান হবে। এবার আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলা থাকছে না। 

লালন একাডেমির পক্ষ থেকে আগামী ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় এবং রাতে বাউল ভক্ত ফকিরদের বাল্যসেবা প্রদান করা হবে। তবে পরের দিন ১৪ মার্চ দুপুরে খেলাফতধারী বাউল ফকিরদের নিজস্ব উদ্যোগে পূর্ণসেবা প্রদান করা হবে। 
বাউল সম্রাট লালন ফকির তার জীবদ্দশায় প্রতিবছর ভক্ত ও অনুসারীদের নিয়ে দোল পূর্ণিমা তিথিতে স্মরণোৎসব পালন করতেন। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর দোল পূর্ণিমায় লালন ভক্ত, অনুসারী ও বাউলরা অনুষ্ঠান উদযাপন করে আসছেন। একইসঙ্গে প্রতিবছর অক্টোবর মাসে তিন দিনব্যাপী লালন তিরোধান দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে।

ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘বিনা লাভের দোকানে’ নিম্নবিত্তের স্বস্তি

খুলনা নগরীর শিববাড়ী মোড়। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টায় সেখানে দেখা মেলে একদল মানুষের জটলা। এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল, নতুন একটি দোকানে বসে চিড়া, মুড়ি, সয়াবিন তেল, আলু-পেঁয়াজসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি করছেন তিন-চার যুবক।

দোকানের ওপরে ব্যানারে লেখা– ‘পবিত্র মাহে রমজানে জনমনে স্বস্তি ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে বিনা লাভের দোকান। কেনা দামে পণ্য বিক্রি। আয়োজনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও টাস্কফোর্স টিম, খুলনা।’ সেখান থেকে বেশ আগ্রহ নিয়ে পণ্য কিনছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

বিক্রেতারা জানান, তারা সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী। কোনো লাভ ছাড়াই মোট ১৬ ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি আলু ১৭ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, শসা ২৫ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, ছোলা ৯৫ টাকা, মুড়ি ৬৫ টাকা, বেসন ৬০ টাকা, চিড়া ৬০ টাকা, টমেটো সাড়ে ৭ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা, রসুন ১০০ টাকা, ডিম প্রতি পিস ১০ টাকা, সয়াবিন তেল এক লিটারের বোতল ১৭৫ টাকা এবং লেবু প্রতি হালি ২৭ টাকায় বেচছেন। এ ছাড়া রয়েছে ধনিয়া পাতা ও বোম্বাই মরিচ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের সদস্য হৃদয় ঘরামী জানান, গত অক্টোবরে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে তারা নগরীর শিববাড়ী মোড়, বয়রা বাজার, নতুন বাজার, গল্লামারী, দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ড ও খালিশপুর চিত্রালী মার্কেটে ‘বিনা লাভের দোকান’ চালু করেছিলেন। তখন ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পান। রোজার সময় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আবারও সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে তারা আবারও এ দোকান চালু করেছেন।

তিনি আরও জানান, প্রথমে শিববাড়ী মোড়ে এ দোকান চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি পয়েন্টে চালু করা হবে। রমজানজুড়ে তাদের এ কার্যক্রম চলবে। হৃদয় বলেন, তারা পণ্য কেনার পর পরিবহন খরচসহ মূল্য নির্ধারণ করছেন। শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমে এগুলো বিক্রি করছেন। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ দোকান চালু থাকবে। 

বাজার মনিটরিং কন্ট্রোল টিম সদস্য ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাঈম মল্লিক, টিম সদস্য আরিফুল ইসলাম সানি ও রাইসা ইসলাম জানান, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূলত বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না কমা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।   

শিক্ষার্থীরা জানান, নিজেদের টাকায় পণ্য কিনে এনে বিক্রি করছেন তারা। কারও কাছ থেকে কোনো অনুদান নেননি।

এই দোকান থেকে আলু, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল ও মুড়ি কেনার পর ইজিবাইক চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, বাজারের তুলনায় এখানে দাম অনেক কম। নগরীর আরও কিছু পয়েন্টে এ ধরনের দোকান চালু করলে লোকজন রোজায় কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পারত।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আলম শেখ বলেন, বাড়ি যাওয়ার সময় লোকের ভিড় দেখে এলাম। আমি ছয় আইটেম কিনেছি। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে আরও কিছু পণ্য এবং বিক্রির পয়েন্ট বৃদ্ধি করলে ভালো হবে। তাহলে আরও অনেকে উপকৃত হবেন। শিক্ষার্থীরা অসাধারণ একটি উদ্যোগ নিয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ