সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) নিয়োগকর্তার শিশুসন্তানকে হত্যায় দোষী সাব্যস্ত এক ভারতীয় নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

শাহজাদি খান নামের ওই নারী দেশটির রাজধানী আবুধাবিতে ভারতীয় এক দম্পতির গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। গত মাসে শাহজাদি খানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ভারত সরকার।

আবুধাবি আদালতের নথি অনুসারে, শাহজাদি খান ওই শিশুকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেছিলেন। তবে বিচারে সাক্ষ্যদানকারী এক চিকিৎসক বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি। কারণ, তাঁকে ময়নাতদন্তের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

শাহজাদি খানের পরিবারের দাবি, সে নির্দোষ। ভুল টিকা দেওয়ার কারণে চার মাস বয়সী শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।

পরিবারটি আরও বলেছে, বিচারের সময় শাহজাদি খান আত্মপক্ষে ‘পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব’ পাননি।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বিবিসি সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শাহজাদি খানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে শাহজাদি খানের মা–বাবা তাঁদের মেয়ের তথ্য চেয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করার পর ৩ মার্চ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এ খবর নিশ্চিত করে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি গোপন করায় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

ইউএইর সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। লাখ লাখ ভারতীয় ওই দেশে বাস করেন এবং কাজ করেন।

শাহজাদি খানের পরিবারের দায়ের করা আবেদন অনুসারে, তিনি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ভুক্তভোগী ভারতীয় দম্পতির গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার জন্য আবুধাবিতে চলে যান। তাঁকে ওই দম্পতির নবজাতককে দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

শাহজাদির বাবা বলেছেন, তিনি (শাহজাদি) প্রায়ই উত্তর ভারতের উত্তর প্রদেশে তাঁর পরিবারকে ফোন করতেন এবং ভিডিও কলে শিশুটিকে দেখাতেন।

কিন্তু শিশুটির মৃত্যুর পর ফোনকল আসা বন্ধ হয়ে যায়। পরিবার পরে জানতে পারে যে শাহজাদি খান কারাগারে আছেন। তারা বলেছে, টিকা নেওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর শিশুটি মারা যায়।

দুই মাস পর পুলিশ শাহজাদিকে গ্রেপ্তার করে। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন যে জোর করে তাঁর কাছ থেকে শিশুটিকে হত্যার স্বীকারোক্তি নিয়ে একটি ভিডিও করা হয়েছিল। আর আদালতে তাঁকে যথাযথ আইনি সহায়তাও দেওয়া হয়নি।

২০২৩ সালের জুলাই মাসে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর আপিল খারিজ করা হয়।

শাহজাদির পরিবার জানিয়েছে, তারা শেষবার এ বছরের গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর গলা শুনেছিল। সে কারাগার থেকে ফোন করে বলেছিল যে পরের দিন তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে।

শাহজাদির বাবা শাব্বির খান বিবিসিকে বলেন, ‘সে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল যে তাকে একটি পৃথক কক্ষে রাখা হয়েছে। আর সে জীবিত অবস্থায় বের হবে না। এটিই তার শেষ ফোন হতে পারে।’

এরপর শাহজাদির পরিবার আর কোনো খোঁজখবর না পেয়ে দিল্লি হাইকোর্টে একটি আবেদন করে সরকারের কাছে তথ্য চায়।

প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাব্বির খান বলেন, ‘সে ন্যায়বিচার পায়নি। গত বছর থেকে আমি সর্বত্র চেষ্টা করেছি। দৌড়াদৌড়ি করেছি। কিন্তু সেখানে (আবুধাবি) আইনজীবী নিয়োগের জন্য আমার কাছে টাকা ছিল না।’

ফেব্রুয়ারিতে ভারত সরকার সংসদকে জানিয়েছিল যে মোট ৫৪ জন ভারতীয় বিদেশে মৃত্যুদণ্ডের সাজা ভুগছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতেই আছে ২৯ জন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হজ দ র র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পর্কের ৫০ বছর: বাংলাদেশে প্রথমবার চীনা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী

বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে চীনা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টাশালী এক্সিবিশন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় এই প্রদর্শনীর।

‘দ্য ল্যানটিং লিগ্যাসি’ প্রতিপাদ্যে সাত দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস, বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন চীনা দূতাবাসের অ্যাটাশে সুন খ্যংনিং ও বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম জাহাঙ্গীর আলম রানা।

উদ্বোধনী বক্তৃতায় সুন খ্যংনিং বলেন, “আমরা এই বছর প্রথমবারের মতো চীনা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। তাড়াহুড়া করে এই আয়োজন করা হয়েছে, তাই সুন্দরভাবে আয়োজন করতে পারিনি। এর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী; তবুও আশা করি, দর্শকরা চীনা ক্যালিগ্রাফির সৌন্দর্য উপভোগ করবেন।”

চীন-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকীতে দুই দেশের সম্পর্ক আরো উচ্চ স্তরে পৌঁছাবে এবং গভীর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

জাহাঙ্গীর আলম রানা বলেন, চীনা ক্যালিগ্রাফি তিন হাজার বছরের পুরোনো। তুলি, কালি, কলম ও কাগজ দিয়ে চীনা শিল্পীরা নান্দনিক ক্যালিগ্রাফি তৈরি করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে চীনা ক্যালিগ্রাফিভক্ত লিউ চেন, কো তাহাই, হু সংসহ বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ