এমন শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা দেশের ভেতরেই নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাবে: নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা
Published: 5th, March 2025 GMT
শপথ নেওয়ার পর শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার)। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও মানবাধিকারকর্মী।
দায়িত্ব নেওয়ার পর আজ বুধবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, ‘আমি এমন শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি, যেখানে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা দেশের ভেতরেই তার ভবিষ্যৎ দেখতে পাবে এবং বাংলাদেশ থেকেই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। এটা হয়তো একদিনে হবে না, এ বছরে হবে না, ৫ বছরে হবে না। কিন্তু তার জন্য ভিত্তিটি তৈরি করে দেওয়া, ইতিমধ্যে অনেকগুলো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে বঙ্গভবনে সি আর আবরারকে উপদেষ্টা হিসেবে শপথবাক্য পড়ান রাষ্ট্রপতি মো.
এত দিন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সি আর আবরার শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়ার পর এখন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শুধু পরিকল্পনা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ধরনের পরিসরে এসে বসবেন, তা জীবনে ভাবেননি বলে মন্তব্য করেন নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, শিক্ষা হচ্ছে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাহন। আমি এমন এক শিক্ষাব্যবস্থার কথা ভাবি, যা হবে ব্যক্তির কর্মদক্ষতা অর্জন, তার আত্মোন্নয়নের উপযুক্ত পথ। যা হবে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও বিজ্ঞান প্রযুক্তিভিত্তিক উৎকর্ষের সহায়ক এবং যা হবে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিক তৈরির উপায়।’
নতুন উপদেষ্টা হওয়া সি আর আবরার অভিবাসন ও উদ্বাস্তু বিশেষজ্ঞ। অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক ছিলেন তিনি। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর সভাপতির দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ের জন্য গত বছরের শেষ দিকে ছয় সদস্যের যে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার, সেই কমিটির সদস্য ছিলেন সি আর আবরার।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
গত প্রায় সাত মাসে কয়েক দফায় উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল ও নতুন নিয়োগ হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারে এখন উপদেষ্টাসংখ্যা ২৩।
অন্তর্বর্তী সরকারে এখন উপদেষ্টার পদমর্যাদায় একজন বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক), একজন বিশেষ দূত (আন্তর্জাতিকবিষয়ক-সংক্রান্ত) ও একজন হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ (রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত) রয়েছেন।
এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তিনজন বিশেষ সহকারী রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারে। তাঁরা স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক হয়েছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট র দ য় ত ব ন উপদ ষ ট আর আবর র মন ত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কিন অস্ত্রসহায়তা স্থগিত, বিপদে ইউক্রেন
হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বিতণ্ডার পর ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সামরিক সহায়তা স্থগিত হতে পারে—এমন আশঙ্কা ছিল। অবশেষে তা সত্যি হলো। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনে আপাতত কোনো সামরিক সহায়তা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। একই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে রাশিয়ার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পরিকল্পনা করছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের পর গতকাল মঙ্গলবার জেলেনস্কি এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ইউক্রেনে টেকসই শান্তির লক্ষ্যে তিনি ট্রাম্পের শক্তিশালী নেতৃত্বে কাজ করতে চান। ওয়াশিংটনের সঙ্গে খনিজ চুক্তি করতেও প্রস্তুত আছেন।
তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৬৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা পেয়েছে ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সহায়তা দিয়েছিলেন। গত ডিসেম্বরে ক্ষমতা ছাড়ার আগে কিয়েভের জন্য আরও ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র, সামরিক যান ও অন্যান্য সরঞ্জাম অনুমোদন দেন বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন মূলত সেই অস্ত্র ও সরঞ্জামগুলোর চালান স্থগিত করেছে। প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে বলেছেন, অস্ত্রগুলোর চালান পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি, সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
আর ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়েছে, পুরোনো চালানের যেসব অস্ত্র ইউক্রেনে যাচ্ছিল, তার সবই যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা হবে। যেসব অস্ত্র এরই মধ্যে সরবরাহের জন্য উড়োজাহাজে তোলা হয়েছে এবং পোল্যান্ডের ট্রানজিট এলাকায় জাহাজে মজুত রয়েছে, সেগুলোও ফেরত আনা হবে।
অস্ত্রের এই চালান স্থগিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। ওই নির্দেশের পর হেগসেথের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড ও ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ। এরপর ইউক্রেনে অস্ত্রসহায়তা স্থগিত করার পাকা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন ট্রাম্প ও জেলেনস্কি। আলোচনার এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এরপর জেলেনস্কি ও তাঁর দলকে ওভাল অফিস ছেড়ে যেতে বলেন মার্কিন কর্মকর্তারা। সেদিন দুই দেশের মধ্যে খনিজ সম্পদবিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
আরও পড়ুনট্রাম্প সামরিক সহায়তা স্থগিতের আগে ইউক্রেনকে যেসব অস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৫২ মিনিট আগেট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে চান জেলেনস্কিট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে জেলেনস্কি গতকাল এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ইউক্রেনে টেকসই শান্তির জন্য তিনি ও তাঁর দল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শক্তিশালী নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠক যেভাবে এগোনোর কথা, সেভাবে এগোয়নি। এটা ঠিক করার এখনই সময়।
জেলেনস্কি আরও লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তি করতে প্রস্তুত কিয়েভ। যেকোনো সময় ও যেকোনো উপযুক্ত কাঠামোয় সেই চুক্তি করতে রাজি ইউক্রেন।
আরও পড়ুন‘অনুতাপ’ জানিয়ে জেলেনস্কি বললেন, ট্রাম্পের ‘বলিষ্ঠ নেতৃত্বের’ অধীনে কাজ করতে প্রস্তুত আছেন২ ঘণ্টা আগে‘ইউক্রেনকে আত্মসমর্পণের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন ট্রাম্প’এর আগে মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিতের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ইউক্রেন। জেলেনস্কির এক্স বার্তার আগে ইউক্রেনের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রি জাগোরোদনিয়ুক বলেন, মস্কোর পাশবিক শর্তের ভিত্তিতে তৈরি একটি খারাপ শান্তিচুক্তি মেনে নিতে ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর জোর খাটাচ্ছে হোয়াইট হাউস। কিয়েভ যদি এই চুক্তিতে রাজি না হয়, তাহলে মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ট্রাম্প ইউক্রেনকে আত্মসমর্পণের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন বলে মনে করেন ইউক্রেনের পার্লামেন্টের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির প্রধান ওলেকসান্দ্র মেরেঝকো। তিনি বলেন, এখন অস্ত্রসহায়তা বন্ধের অর্থ হলো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সহায়তা করা। ট্রাম্প ইউক্রেনকে রাশিয়ার দাবিগুলো মেনে নেওয়ার চাপ দিচ্ছেন।
পরিখায় বিশ্রাম নেওয়ার সময় কফি বানাচ্ছেন ইউক্রেনের ২৪তম সাঁজায়ো ব্রিগেডের এক সদস্য। দোনেৎস্ক অঞ্চলের চাসিভ ইয়ার এলাকায়; ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫