অন্য কারও জন্য নিজের মেজাজ বিগড়ে যেতে না দেওয়াটাই এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। সব সময় মনে রাখবেন, আপনার জীবনের প্রশান্তির চাবিকাঠি আপনার হাতে রয়েছে। অন্যের কথা বা কাজকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। যাঁর কারণে আপনার মেজাজ বিগড়ে গেল, তিনি যদি আপনার কাছের কেউ হয়ে থাকেন, পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে তাঁর সঙ্গে পরে বিষয়টি আলাপ করতে পারেন। আর তিনি যদি কাছের মানুষ না-ই হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকে এত ‘পাত্তা’ দেওয়ারই–বা কী আছে!

এই জীবনবোধকে যদি অন্তরে ধারণ করতে পারেন, তাহলে হুটহাট মেজাজ গরম হয়ে যাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। তারপরও চোখের সামনে এমন কিছু যদি ঘটতে দেখেন, মেজাজ গরম হতে শুরু করে, তখন নিজেকে সামলানোর উপায়গুলোও জেনে রাখুন। এমনকি কখনো কখনো মেজাজ হারালেও পরবর্তী সময়ে নিজেকে নিয়ে কিছু কাজ করতে পারেন। তাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অশান্তি এড়ানো আরও সহজ হবে। এ প্রসঙ্গে জানালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক

আরও পড়ুনকর্মক্ষেত্রে রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন কীভাবে ১৮ আগস্ট ২০২৩

সময় নিন

যত খারাপ আচরণই কেউ আপনার সঙ্গে করুন না কেন, প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে সময় নিন। লম্বা করে শ্বাস নিন, গভীরভাবে। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যাওয়ার মতো ঠিক কী ঘটেছে, তা ভাবুন। ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলাতে চেষ্টা করুন। হুট করে একটা ‘উচিত জবাব’ দিয়ে কিংবা চিৎকার-চেঁচামেচি করে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করাটা আদতে কোনো ভালো সমাধানের দিকে আপনাকে নিয়ে যাবে না। আর ও রকম আচরণে আপনার সম্মানও বাড়বে না।

ইতিবাচক হোন

সাময়িকভাবে যেটিকে ‘উচিত জবাব’ ভাবছেন, আদতে সেটি হয়তো ইতিবাচক কিছু নয়। তাই জবাব দিতে হলে ইতিবাচকভাবেই দিন। কোন বিষয়টা আপনাকে ব্যথিত করছে, অপর পক্ষকে বুঝিয়ে বলতে পারেন। কিংবা চুপ করে থাকতে পারেন। কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠে রাগ প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে মনে হলে থেমে যান। প্রয়োজনে পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে তারপর কথা বলুন। কেউ আপনাকে বা আপনার পরিবারকে অসম্মান করলেই তো আর আপনি বা আপনার পরিবার অসম্মানিত হয়ে যাচ্ছে না! বরং নিজের পরিবারের সম্মানের জায়গাটা বুঝিয়ে দিতেই মাথা ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করুন। এ ছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রাখুন। অন্যের জন্য কিছু করতে পারার মহত্ত্ব কিন্তু সবার থাকে না।

আরও পড়ুনরাগী মানুষের মন কি আসলেই ভালো?০১ মার্চ ২০২৪

মন নিয়ন্ত্রণ করুন

মেজাজ হারাচ্ছেন বলে অনুভব করলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। অন্য কোনো বিষয়ের দিকে মন সরিয়ে নিন। বাড়িতে মেজাজ খারাপ হলে ঘরের কাজে মন দিতে পারেন। অফিসে মেজাজ বিগড়ে যেতে থাকলে ওই মুহূর্তে হয়তো টেবিল গোছালেন অথবা পাঁচ মিনিটের বিরতি নিন। ঘরে–বাইরে যেকোনো জায়গায় ওই মুহূর্তে সুযোগ পেলে নিজের পছন্দের অডিও ক্লিপ চালাতে পারেন, কানে দিতে পারেন এয়ারফোন। চোখ বুজে কল্পনা করতে পারেন প্রিয় কোনো দৃশ্য। আধ্যাত্মিক কোনো ভাবনাও ভাবতে পারেন। মেজাজ হারাতে থাকলে ওই জায়গা থেকে একটু দূরে সরে যাওয়া, হাঁটাহাঁটি বা অন্য ধরনের শরীরচর্চা, বই পড়া, টেলিভিশন দেখা, এগুলো ভালো কৌশল। একটা পিংপং বল ছোড়া আর ধরাও কিন্তু একটি চমৎকার কৌশল।

কখনো মেজাজ হারিয়ে ফেললে নিজে নিজে সেটির পর্যালোচনাও করুন। কোন পরিস্থিতিতে মেজাজ হারিয়েছিলেন, ঠিক কী কী ঘটেছিল, সেই সময় আপনি কেমন বোধ করছিলেন এবং আপনার কী ধরনের শারীরিক পরিবর্তন হয়েছিল, আপনি কী করেছিলেন, কী করতে পারতেন, এসব নিয়ে ভাবুন। ‘রাগের জার্নাল’ বানিয়ে সেই সময়কার প্রতিক্রিয়াগুলো লিখে রাখতে পারেন। তাতে পরবর্তী সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।

আরও পড়ুনএই পাঁচ সময়ে চুপ থাকুন২৫ অক্টোবর ২০২৩.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া

আজ ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্তদিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম, ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর অসংখ্য নীরব ত্যাগের মধ্যদিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের কুষ্টিয়া থেকে বিতাড়িত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। কালেক্টরেট চত্বরে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। 

মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই কুষ্টিয়া ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের প্রথম দিকে এখানে ইপিআর, পুলিশ এবং সাধারণ মানুষ মিলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

আরো পড়ুন:

টাঙ্গাইল শত্রুমুক্ত হয় ১১ ডিসেম্বর

৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর

কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রতিরোধে যোগ দেন, যা পরবর্তীতে সুসংগঠিত মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীতে রূপ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস জুড়ে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা হামলা, সম্মুখযুদ্ধ ও প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় চূড়ান্ত মুক্তির পথ।

ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১৬ এপ্রিল থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, খোকসা, কুমারখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর সুসজ্জিত ঘাঁটির বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই চালান। পাকবাহিনীর ক্যাম্প, ব্রিজ, সড়ক ও রসদ সরবরাহ লাইনে ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়। প্রতিটি যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনীরও বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। তারা কুষ্টিয়ায় অবস্থান টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের প্রবেশমুখ, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনার আশপাশে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। ভোর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে গোলাগুলি, মর্টার শেল ও ভারী অস্ত্রের প্রচণ্ড গর্জনে পুরো শহর কেঁপে ওঠে। কৌশলগত স্থানে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর প্রতিরক্ষা ভেঙে দেন। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটতে ও আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। তাদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয় এবং দিনটিকেই ‘কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

১১ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত কুষ্টিয়া শহরের কালেক্টরেট চত্বরে তৎকালীন রাজনৈতিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময় প্রাদেশিক পরিষদের জোনাল চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত থেকে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানান। এই পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই প্রতীকীভাবে স্বাধীন কুষ্টিয়ার জন্ম এবং মুক্তাঞ্চল হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালুর সূচনা ঘটে। ।

প্রতি বছরের মতো এবারো কুষ্টিয়া মুক্তদিবস উপলক্ষে কালেক্টরেট চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত, র‌্যালি পরবর্তী শহীদ স্মৃতিস্মম্ভ চত্বরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিবসটি উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। শহীদ পরিবার ও জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সামনে যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরছেন। 

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিউনিসিয়ার গুপ্তহত্যা, ওসমান হাদিকে গুলি ও বিপজ্জনক রাজনীতি
  • সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সব কার্যক্রম স্থগিত
  • রিয়ালের ৪ তারকা ফুটবলার নিষিদ্ধ
  • ২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া