হবিগঞ্জ জেলার হাওর এলাকাখ্যাত আজমিরীগঞ্জ। এই উপজেলায় কাঁচা মরিচের ক্ষেতে এবার দেখা দিয়েছিল ব্লাস্ট ও ছত্রাকজনিত রোগ। পাশাপাশি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বাজারে দাম না মেলায় কাঁচা মরিচ চাষ করে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।

উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ইউনুস আলী তার ৫৬ শতক জমিতে ব্র্যাক শিখা জাতের কাঁচা মরিচ চাষ করেছেন। এবার জমি থেকে প্রথম দফায় ৭ মণ মরিচ উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন। এখন দ্বিতীয় দফায় মরিচ উত্তোলন চলছে। পাইকারের কাছে প্রতিমণ কাঁচা মরিচ ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি। আরো কয়েক দফা মরিচ বিক্রি করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন এই কৃষক।

গত বছর মরিচ চাষে লাভবান হলেও এবার বীজ রোপণের সময় ব্লাস্ট ও ছত্রাকজনিত রোগ দেখা দেওয়ায় দুই দফায় জমি চাষ করতে হয়েছে বলে দ্বিগুণ খরচ পড়েছে। এজন্য এবার মরিচ চাষে লোকসানের মুখে পড়েছেন ইউনুস আলী। একইভাবে লোকসানের কথা জানিয়েছেন নোয়াগাঁও গ্রামের অন্যান্য চাষিরা।

আরো পড়ুন:

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার
হাওর পাড়ের জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

মাঠভরা সবুজের হাসি, মাঘের বৃষ্টিতে বেড়েছে ঝিলিক

আজমিরীগঞ্জ-পাহাড়পুর রোডের পিরিজপুর গ্রাম সংলগ্ন বোরো ধানের কাছে শুকনো ফসলের জমিতে অনেকে কাঁচা মরিচ আবাদ করেছেন। বর্তমানে মালিক-শ্রমিক, নারী-পুরুষ মিলে জমি থেকে মরিচ উত্তোলনের কাজ করছেন।

সোমবার (৩ মার্চ) সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, পরিবারের নারী-পুরুষ সদস্যদের নিয়ে জমি থেকে কাঁচা মরিচ উত্তোলন করছেন শিহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, “গত বছর মরিচ চাষে লাভ হয়েছিল। এবার লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২৮ শতক জমিতে ব্র্যাক শিখা জাতের মরিচ চাষ করতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করতে পেরেছি। সামনে জমি থেকে আরো কিছু পরিমাণে মরিচ উত্তোলন করতে পারব। আশা করছি, ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারব। এরপরও লোকসান হবে।” 

অপর চাষি শরীফ উদ্দিনের ৫৬ শতক জমির কাঁচা মরিচ চারা প্রথম দফায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। দ্বিতীয় দফায় চারা রোপণের পর ফের ছত্রাকজনিত সমস্যা দেখা দেয়। ফলে তৃতীয় দফায় ফসলটি আবাদ করতে হয়েছে তাকে। এতে তার ৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। অল্প কয়েকদিন পর মরিচ বিক্রি করতে পারলেও লাভবান হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

পাইকারি মরিচের বিক্রেতা আজমান মিয়া বলেন, “আমরা কৃষকদের কাছ থেকে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ দরে কাঁচা মরিচ কিনছি। পরে অল্প লাভে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে মরিচ বিক্রি করে দিচ্ছি। সামনে কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৮০ হেক্টর জমিতে নানা জাতের সবজি চাষ হয়েছে। তার মধ্যে কাঁচ মরিচের আবাদ হয়েছে ১০ হেক্টর জমিতে।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফে আল মুঈজ বলেন, ‘‘উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১০ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকরা ক্ষেত থেকে মরিচ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছেন।”

ঢাকা/মামুন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ ওর চ ষ কর কর ছ ন উপজ ল করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘বিনা লাভের দোকানে’ নিম্নবিত্তের স্বস্তি

খুলনা নগরীর শিববাড়ী মোড়। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টায় সেখানে দেখা মেলে একদল মানুষের জটলা। এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল, নতুন একটি দোকানে বসে চিড়া, মুড়ি, সয়াবিন তেল, আলু-পেঁয়াজসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি করছেন তিন-চার যুবক।

দোকানের ওপরে ব্যানারে লেখা– ‘পবিত্র মাহে রমজানে জনমনে স্বস্তি ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে বিনা লাভের দোকান। কেনা দামে পণ্য বিক্রি। আয়োজনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও টাস্কফোর্স টিম, খুলনা।’ সেখান থেকে বেশ আগ্রহ নিয়ে পণ্য কিনছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

বিক্রেতারা জানান, তারা সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী। কোনো লাভ ছাড়াই মোট ১৬ ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি আলু ১৭ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, শসা ২৫ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, ছোলা ৯৫ টাকা, মুড়ি ৬৫ টাকা, বেসন ৬০ টাকা, চিড়া ৬০ টাকা, টমেটো সাড়ে ৭ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা, রসুন ১০০ টাকা, ডিম প্রতি পিস ১০ টাকা, সয়াবিন তেল এক লিটারের বোতল ১৭৫ টাকা এবং লেবু প্রতি হালি ২৭ টাকায় বেচছেন। এ ছাড়া রয়েছে ধনিয়া পাতা ও বোম্বাই মরিচ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের সদস্য হৃদয় ঘরামী জানান, গত অক্টোবরে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে তারা নগরীর শিববাড়ী মোড়, বয়রা বাজার, নতুন বাজার, গল্লামারী, দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ড ও খালিশপুর চিত্রালী মার্কেটে ‘বিনা লাভের দোকান’ চালু করেছিলেন। তখন ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পান। রোজার সময় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আবারও সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে তারা আবারও এ দোকান চালু করেছেন।

তিনি আরও জানান, প্রথমে শিববাড়ী মোড়ে এ দোকান চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি পয়েন্টে চালু করা হবে। রমজানজুড়ে তাদের এ কার্যক্রম চলবে। হৃদয় বলেন, তারা পণ্য কেনার পর পরিবহন খরচসহ মূল্য নির্ধারণ করছেন। শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমে এগুলো বিক্রি করছেন। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ দোকান চালু থাকবে। 

বাজার মনিটরিং কন্ট্রোল টিম সদস্য ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাঈম মল্লিক, টিম সদস্য আরিফুল ইসলাম সানি ও রাইসা ইসলাম জানান, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূলত বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না কমা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।   

শিক্ষার্থীরা জানান, নিজেদের টাকায় পণ্য কিনে এনে বিক্রি করছেন তারা। কারও কাছ থেকে কোনো অনুদান নেননি।

এই দোকান থেকে আলু, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল ও মুড়ি কেনার পর ইজিবাইক চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, বাজারের তুলনায় এখানে দাম অনেক কম। নগরীর আরও কিছু পয়েন্টে এ ধরনের দোকান চালু করলে লোকজন রোজায় কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পারত।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আলম শেখ বলেন, বাড়ি যাওয়ার সময় লোকের ভিড় দেখে এলাম। আমি ছয় আইটেম কিনেছি। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে আরও কিছু পণ্য এবং বিক্রির পয়েন্ট বৃদ্ধি করলে ভালো হবে। তাহলে আরও অনেকে উপকৃত হবেন। শিক্ষার্থীরা অসাধারণ একটি উদ্যোগ নিয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ