স্থানীয় সরকার ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ২ প্রকল্পে অনুমোদন
Published: 5th, March 2025 GMT
স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ওয়াটার পাম্পিং স্টেশন এবং পাইপলাইন স্থাপন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কমিউনিটি ওয়ার্কফেয়ার এবং সার্ভিসেস সাপোর্ট, নন-কনসাল্টিং সার্ভিস ক্রয় সংক্রান্ত পৃথক দুটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৫৪৭৩ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪২১ টাকা।
বুধবার (৫ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড.
সভা সূত্রে জানা যায়, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ‘র’ ওয়াটার পাম্পিং স্টেশন এবং ‘র’ ওয়াটার পাইপলাইন স্থাপনে পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ৩টি প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে বিড ডক্যুমেন্ট ইস্যু করা হয়। দর প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে চায়না মেশিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, কুজু টপলু কোনাট এ.এস এবং ইয়োলো রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্ট কোম্পানি লি. প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৫ হাজার ৩৩ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪২১ টাকা।
সভায় আইএসও কম্পোনেন্ট-৬ বিল্ডিং কমিউনিটি রেসিলিয়েন্স অ্যান্ড সেলফ-রিলায়েন্সের আওতায় কমিউনিটি ওয়ার্কফেয়ার অ্যান্ড সার্ভিসেস সাপোর্ট, নন কনসাল্টিং সার্ভিস-১ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের জন্য সিঙ্গেল সোর্স সিলেকশন পদ্ধতিতে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বরাবর আরএফপি আহ্বান করা হলে প্রস্তাব দাখিল করে। পিইসি কর্তৃক প্রস্তাবটি উপযুক্ত বিবেচেনা করা হয়। পরবর্তীতে পিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত উপযুক্ত দরদাতা প্রতিষ্ঠান বিশ্ব খাদ্য সংস্থাকে ৪৪০ কোটি টাকায় প্রকল্পের নির্ধারিত কার্যক্রম বাস্তবায়নে ক্রয় প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রতিমাসে অতি দরিদ্র ৩ লাখ ৯০ হাজার জন রোহিঙ্গাকে খাদ্য সহায়তা প্রদান, প্রতিমাসে ৯৫,৯৪৪ জন রোহিঙ্গা মহিলাকে পুষ্টি বিষয়ক শিক্ষাপ্রদান, ১৪,৫০০ জন রোহিঙ্গা পরিবারকে সবজি বাগান তৈরিতে সহায়তা প্রদান এবং সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কাজ সম্পাদন করবে। প্রকল্প দলিলে বিশ্ব খাদ্য সংস্থাকে একক উৎসভিত্তিক নিয়োগের কথা বলা আছে।
ঢাকা/হাসনাত
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র আওত য়
এছাড়াও পড়ুন:
গরুর হাট বসাতে শ্মশান ভরাট
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নে দেড়শ বছরের পুরোনো শ্মশানে বালু ভরাট করে গরুর হাট তৈরির কাজ চলছে। ইউএনও এরশাদুল আহমেদের নির্দেশে এমনটি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের। এ ঘটনায় ইউএনওর বিচার ও অপসারণ দাবিতে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন।
রোববার দুপুরে ঘণ্টাখানেক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে দু’পাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষুব্ধরা। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউএনওর অপসারণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন শ্রীশ্রী করুণাময়ী কালীবাড়ি মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক অলক ঘোষ ছোটন, রাজিপুর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জনি দে, ঈশ্বরগঞ্জ মহাশ্মশানের সাধারণ সম্পাদক পিন্টু চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব গৌড়, উচাখিলা ইউনিয়নের সার্বজনীন শ্মশান কালীমন্দির কমিটির সভাপতি পরেশ চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক রাজীব সাহা রাজু প্রমুখ।
তাদের ভাষ্য, দেড়শ বছরের পুরোনো শ্মশানে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মানুষের শেষকৃত্য হয়ে আসছে। সেখানে তাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের শেষকৃত্য হয়েছে। প্রতিবছর তাদের স্মরণে এখানে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। তাদের এই স্মৃতিচিহ্ন মুছে দিতে ইউএনও যে পরিকল্পনা করেছেন, জীবন থাকতে তা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। বিক্ষুব্ধ লোকজন বলেন– দফা এক দাবি এক, ইউএনওর পদত্যাগ। দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউএনওকে অপসারণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এর আগে শনিবার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, উচাখিলা ইউনিয়নের বাজারের পাশেই কাঁচামাটিয়া নদী। নদীপাড় ঘেঁষে শ্মশানের অবস্থান। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের ফেলা বালুর নিচে চাপা পড়ে গেছে শ্মশানের নির্মাণাধীন কালীমন্দির। শ্মশানের দাহকার্য সম্পন্ন করার স্থানটির পাশের পিলারও ভেঙে ফেলা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার এই শ্মশানে শেষবারের মতো একজনের দাহকার্য সম্পন্ন হয়। চুল্লির পাশে মাটির কলসে সেই চিহ্ন পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৬ শতক জমি প্রায় দেড়শ বছর আগে শ্মশানের নামে দান করেন একজন। এর পর ১৯৪৭ সালের সিএস এবং ১৯৬২ সালের আরওআর শ্মশানের নামেই হয়। তবে ১৯৮৪-৮৫ সালের বিআরএসে শ্মশানের নাম না এসে সেটি সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানে উঠে যায়। ওই অবস্থায়ও শ্মশানে দাহকার্য হতো। এক পর্যায়ে চারপাশের বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে যায়। এর পর গত বছরের নভেম্বরে সাবেক ইউএনও সারমিনা সাত্তার এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইনসহ সেটি উদ্ধার করে শ্মশান কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেন। এর পর শ্মশানের নিজস্ব অর্থায়নে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে সীমানা প্রাচীরের নির্মাণকাজ শুরু হয়, যা চলমান। এ অবস্থায় দেড়শ বছরের পুরোনো শ্মশানে গরুর হাট বসানোর জন্য বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে।
উচাখিলা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আবেদীন খান সেলিম বলেন, ‘শ্মশানটি পুরোনো। আমি চাই শ্মশানের জায়গায় শ্মশান থাকুক। সেটি উচ্ছেদ না হোক। গরুর হাটের জায়গায় গরুর হাট থাকুক। ইতোমধ্যে গরুর হাটের জন্য অনেকটা খাসজমি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও উদ্ধার করা হোক। তবুও শ্মশান স্থানান্তর না হোক।
এদিকে মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ওসি ওবায়দুর রহমান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানান, শ্মশানের বিষয়টি নিয়ে শনিবার রাতেই ইউএনও শ্মশান-সংশ্লিষ্টসহ স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে আসেন। ওই আলোচনায় রোববার যারা মানববন্ধন, বিক্ষোভ করছেন তারা ছিলেন না। সেটাই তাদের আক্ষেপ। কারণ তাদের ছাড়াই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের আশ্বস্ত করে বলেছি, আপনারা একটা তারিখ এবং তালিকা দেন। আপনাদের সঙ্গেও বসা হবে। এর পর আপনারা যে সিদ্ধান্ত দেন, সেটাই মানা হবে।’
জানতে চাইলে ইউএনও এরশাদুল আহমেদ বলেন, শ্মশানের কোনো কিছুতেই হাত দেওয়া হয়নি। এটা নিয়ে এক ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। উচাখিলা বাজারের গরুর হাটের ইজারা হচ্ছিল না। সরকারের রাজস্ব আয়ের স্বার্থে উদ্ধারকৃত (শ্মশানের পাশেই) সরকারি খাসজমি বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। বালু ভরাটের সময় নির্মাণাধীন মন্দিরের ৩টি পিলার ভেঙে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে শনিবার রাতেই শ্মশান-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আপাতত কাজ বন্ধ রেখে সোমবার (আজ) পরিদর্শন করে শ্মশান, মন্দির, স্নানঘর অক্ষত রেখে একটি স্থায়ী উদ্যোগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরও একটি পক্ষ ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে বিক্ষোভ করেছে। তাদের সঙ্গেও আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।