মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হাওয়া এক রোগীর চিৎকার-চেঁচামেচিতে অতিষ্ঠ ডাক্তার, নার্স এবং রোগীরা।
গত সোমবার (৩ মার্চ) রাতে শাহনাজ নামের ওই নারী হাসপাতালে আসেন। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ভর্তি রাখেন। এ সময় তার স্বামী আল-আমিন সঙ্গে ছিলেন।
মঙ্গলবার সকালে তার স্বামী বাড়িতে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীদের মারধর, তাদের জিনিসপত্র ও হাসপাতালের আসবাবপত্র ভাঙচুর এবং চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকেন।
হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স কয়েক দফায় তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে আশপাশের রোগীদের নিরাপত্তা স্বার্থে তাকে হাসপাতালে একপাশে জানলার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আফিয়া বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘‘তার অস্বাভাবিক আচরণে আমরা অতিষ্ঠ। কখনো রোগীদের তেড়ে গিয়ে মারধর করছেন, কখনো জিনিসপত্র ভেঙে ফেলছেন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে তার যন্ত্রণায় হাসপাতালে টেকা দায়।’’
আরেক রোগী সালমা আক্তার বলেন, ‘‘রোগীদের হাত থেকে ইনজেকশন দেওয়ার ক্যানোলা খুলে ফেলছেন। স্যালাইন টাঙানোর স্ট্যান্ড, ব্যাগ, খাবার নিয়ে ফেলে দিচ্ছেন। পুরো মহিলা ওয়ার্ডের ভেতরে হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন তিনি।’’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা.
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত রয়েছি। একজন রোগীর জন্য যাতে অন্য রোগীদের সমস্যা না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’’
ঢাকা/রতন/রাজীব
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের পায়ে কুড়াল!
কোনো জাতি কি তার কূটনৈতিক পুঁজি নষ্ট করেছে; তার নিজস্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থা লুণ্ঠন করেছে কিংবা তার অংশীদারদের আক্রমণ করেছে? ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের মতো এত দ্রুত ও নির্লজ্জভাবে তার দুর্বল শত্রুদের সামনে নিজেকে সমর্পণ করেছে?
শুক্রবার ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে ওভাল অফিসে অগ্নিময় বৈঠক হয়েছে। এতে মার্কিন নেতা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এমন এক জাতির নেতাকে জনসমক্ষে অপমান করার চেষ্টা করেছেন, যা একটি জঘন্য ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের মুখোমুখি।
এসবের কারণ জেলেনস্কি আত্মসমর্পণের একটি আইনি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেছিলেন, আর পুতিনের সমালোচনা করেছিলেন, যিনি বহুবার জেলেনস্কিকে হত্যা করার চেষ্টা করেছেন; এবং তিনি আত্মস্বীকৃত রাজা ট্রাম্পের কাছে হাঁটু গেড়ে নত হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো, ট্রাম্পের উদ্ভট আচরণ এখন স্বাভাবিকভাবে দেখা হচ্ছে। তাঁর প্রশিক্ষিত কুকুর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে ট্রাম্প জনসাধারণের কাছে রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে তুলে ধরেন।
দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর ট্রাম্পের ধ্বংসাত্মক বল ইতোমধ্যে বিশ্বে ভূমিকম্পের মতো প্রভাব ফেলেছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার জন্য রাশিয়ার নিন্দা করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভোট দিয়েছিল। অন্যপক্ষে ছিল রাশিয়া, বেলারুশ ও উত্তর কোরিয়া। এমনকি চীনও ভোট দেয়নি।
যুক্তরাজ্যে ইউগভ জরিপে পাঁচ হাজারেরও বেশি উত্তরদাতাকে দেখা গেছে, ৪৮ শতাংশ ব্রিটিশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেয়ে ইউক্রেনকে সমর্থন করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। মাত্র ২০ শতাংশ ইউক্রেনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে।
ট্রাম্প এক উদ্ভট পরামর্শ দেন। তাঁর মতে, রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজ নিজ প্রতিরক্ষা বাজেট অর্ধেকে নামিয়েছে। নিশ্চিতভাবেই তা শক্তির পরিবর্তে তাদের দুর্বলতার লক্ষণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। যেখানে ট্রাম্পের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী প্রতিপক্ষকে শক্তিশালী করেছে, একই সঙ্গে তারা নিজেদের বন্ধুদেরও দুর্বল ও শঙ্কিত করে তুলেছে।
সহজ কথা হলো, ইউরোপ বা এশিয়ায় কোনো মার্কিন মিত্র এখন ওয়াশিংটন তাদের নিরাপত্তা-প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে সম্মান দেখাবে বলে আস্থা রাখতে পারে না। ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ন্যাটো সদস্যদের কাছে এটি স্পষ্টভাবে আনা হয়েছিল। এ সময় মার্কিন প্রতিনিধিরা হতবাক দর্শকদের জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে আর ইউরোপীয় নিরাপত্তার প্রধান গ্যারান্টার হিসেবে দেখতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতার অর্থ হলো, ইউরোপীয় দেশগুলোকে দ্রুত নিজেদের সশস্ত্র করার ইচ্ছা ও উপায় খুঁজে বের করতে হবে। শুধু তাই নয়, বরং ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য সম্মিলিতভাবে নেতৃত্ব দিতে হবে।
তারা তা করতে পারবে কিনা, তা অস্পষ্ট রয়ে গেছে। ইউরোপের নিষ্ক্রিয়তার ইতিহাস ভালো কিছু বয়ে আনবে না। মার্কিন মিত্রদেরও এশিয়ায় কাউকে বেছে নিতে হবে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এখন সাহসী চীনকে ঠেকাতে সব বিকল্প, এমনকি হয়তো পারমাণবিক অস্ত্রের কথা ভাববে। অস্ট্রেলিয়াতেও উদ্বেগ রয়েছে। এটা কি ভান করতে পারে যে কিছুই পরিবর্তন হয়নি এবং পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে?
যখন হোয়াইট হাউস ইউরোপে তার বন্ধুদের মতো একই উদাসীনতার সঙ্গে তাইপে, টোকিও, সিউল ও ক্যানবেরার প্রতি আচরণ করে, তখন মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে পূর্ণ জোট বাঁধার কৌশলগত অর্থ কী?
শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ২.০ এত অল্প সময়ের মধ্যে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, তা নজিরবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প বিকৃতভাবে তাঁর পতন ত্বরান্বিত করছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে তাঁর নিকটতম বন্ধুদের দ্বারা বিচ্ছিন্ন এবং অবিশ্বস্ত করেই চলেছেন। এটি করতে গিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটিও বিশ্বকে আরও বিপজ্জনক, অনিশ্চিত এবং শেষ পর্যন্ত একটি কুৎসিত জায়গায় পরিণত করেছে।
ম্যাথিউ সাসেক্স: অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডিফেন্স স্টাডিজ সেন্টারের ফেলো; দ্য কনভারসেশন থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম