সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাবেষ্টনী ও নিরাপত্তা টহল সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রায় ১৫১ একর জমি অধিগ্রহণ করতে নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর চার বছর পার হলেও এখনো ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে পাননি জমির মালিকেরা। অধিগ্রহণের নোটিশ জারি হওয়ায় জমি কেনাবেচা বা খাজনাও দিতে পারছেন না মালিকেরা। ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় তাঁরা নতুন ঠিকানায়ও যেতে পারছেন না।

সদর উপজেলার বড়শালা মৌজার ধুপাগুল এলাকার রাজীব হোসেনের ১১ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু চার বছর ধরে আশ্বাস পেলেও এখনো ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। তিনি বলেন, বর্ষায় পানি বাড়লে ঘরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। অধিগ্রহণ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে ঘর মেরামতও করতে পারছেন না। অধিগ্রহণের পর ঘরের ছবি ও ভিডিও নেওয়া হয়েছে। এখন নতুন করে মেরামত করলে মেরামতের টাকা বৃথা যাবে।

ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য চার বছর ধরে সিলেট জেলা প্রশাসন, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকার ধরনা দিয়েও কোনো সুরাহা পাননি বিমানবন্দর এলাকার আবদুল হাকিম (৪৮)। তিনি বলেন, তাঁরা ভুক্তভোগীরা একত্র হয়ে একাধিকবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়েছেন। বিভিন্ন কর্মসূচি করেছেন। কিন্তু কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছেন না। প্রশাসন শুধু সময় নিচ্ছে। একেকবার একেক ধরনের কথা বলছে। বিষয়টি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কাগজের জন্য আটকে আছে বলে জানাচ্ছে জেলা প্রশাসন। আবার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে জেলা প্রশাসন বিষয়টি দেখছে।

আবদুল হাকিম বলেন, অনেক ভুক্তভোগী আছেন, যাঁদের জমিগুলোই শেষসম্বল। কিন্তু চার বছরের বেশি সময় ধরে তাঁরা জমি নিয়ে কিছুই করতে পারছেন না। এতে অনেকের ঘরের জন্য ছেলেমেয়েদের বিয়েও দিতে পারছেন না।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ‘সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাবেষ্টনী ও নিরাপত্তা টহল সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পের জন্য ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ১৫১ একর জায়গা অধিগ্রহণের জন্য নোটিশ জারি করে জেলা প্রশাসন। স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন ২০১৭ (২০১৭ সালের ২১ নম্বর আইন)–এর ৪ ধারা অনুযায়ী এ নোটিশ জারি করা হয়। এ নোটিশ জারির প্রকল্প এলাকার কোনো জমি বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যায়।

ভুক্তভোগীদের কয়েকজন বলেন, সামনে বর্ষাকাল। তাঁদের মধ্যে যাঁদের ঘরবাড়িসহ জমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়েছে, চার বছর ধরে মেরামত বা সংস্কার না হওয়ায় সেগুলোর অবস্থা ভালো না। বর্তমানে ঘরগুলো মেরামত না করা গেলে বর্ষা মৌসুম কাটানো সম্ভব হবে না। অন্যদিকে ক্ষতিপূরণের টাকাও পাওয়া যাচ্ছে না। টাকা পেলে তাঁরা নতুন জায়গায় স্থায়ী হতে পারতেন। ঘরগুলো মেরামতের প্রয়োজন পড়ত না।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জমির মালিকদের সঙ্গে নিজ কার্যালয়ে বৈঠক করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মো.

হাফিজ আহমেদ ও সার্ভেয়ার উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ ও অধিগ্রহণের জায়গাসংক্রান্ত বিষয় আগামী এক মাসের মধ্যে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ৭ এপ্রিল ওসমানী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগীদের নিয়ে চূড়ান্ত শুনানি হবে। সেই শুনানিতে অধিগ্রহণের বিষয়গুলো সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

মাঝখানে বেশ কিছুদিন ভূমি অধিগ্রহণ বন্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে বিশেষ অনুমোদন আনা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হয়েছে।হাফিজ আহমেদ, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক

জানতে চাইলে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমেদ বলেন, অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় সংশোধন করতে হয়েছে। কিছু অপ্রয়োজনীয় বিষয় বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হয়েছে। বিষয়টি সিভিল এভিয়েশনের প্রশাসন শাখা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তদারকি করছে। তিনি বলেন, এ ছাড়া মাঝখানে বেশ কিছুদিন ভূমি অধিগ্রহণ বন্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে বিশেষ অনুমোদন আনা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় চার বছর আগে জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিশ জারি করার মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বর্তমানে অধিগ্রহণের জায়গাগুলো চিহ্নিত হওয়ার চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে আছে। জায়গা চিহ্নিত হয়ে গেলে যেগুলো অধিগ্রহণের বাইরে থাকবে, সেগুলো মালিকেরা বেচাকেনা করতে পারবেন। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যাশী সংস্থা একাধিকবার প্রস্তাব পরিবর্তন করায় প্রক্রিয়া কিছুটা দীর্ঘ হয়ে গেছে। এরপরও আগামী ৭ এপ্রিল অধিগ্রহণের জায়গা চূড়ান্ত হবে বলে তিনি আশা করছেন। এরপর মূল্য নির্ধারণের পর চলতি বছরের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ র বছর প রকল প ম র মত র জন য র পর চ ওসম ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘বিনা লাভের দোকানে’ নিম্নবিত্তের স্বস্তি

খুলনা নগরীর শিববাড়ী মোড়। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টায় সেখানে দেখা মেলে একদল মানুষের জটলা। এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল, নতুন একটি দোকানে বসে চিড়া, মুড়ি, সয়াবিন তেল, আলু-পেঁয়াজসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি করছেন তিন-চার যুবক।

দোকানের ওপরে ব্যানারে লেখা– ‘পবিত্র মাহে রমজানে জনমনে স্বস্তি ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে বিনা লাভের দোকান। কেনা দামে পণ্য বিক্রি। আয়োজনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও টাস্কফোর্স টিম, খুলনা।’ সেখান থেকে বেশ আগ্রহ নিয়ে পণ্য কিনছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

বিক্রেতারা জানান, তারা সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী। কোনো লাভ ছাড়াই মোট ১৬ ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি আলু ১৭ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, শসা ২৫ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, ছোলা ৯৫ টাকা, মুড়ি ৬৫ টাকা, বেসন ৬০ টাকা, চিড়া ৬০ টাকা, টমেটো সাড়ে ৭ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা, রসুন ১০০ টাকা, ডিম প্রতি পিস ১০ টাকা, সয়াবিন তেল এক লিটারের বোতল ১৭৫ টাকা এবং লেবু প্রতি হালি ২৭ টাকায় বেচছেন। এ ছাড়া রয়েছে ধনিয়া পাতা ও বোম্বাই মরিচ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের সদস্য হৃদয় ঘরামী জানান, গত অক্টোবরে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে তারা নগরীর শিববাড়ী মোড়, বয়রা বাজার, নতুন বাজার, গল্লামারী, দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ড ও খালিশপুর চিত্রালী মার্কেটে ‘বিনা লাভের দোকান’ চালু করেছিলেন। তখন ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পান। রোজার সময় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আবারও সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে তারা আবারও এ দোকান চালু করেছেন।

তিনি আরও জানান, প্রথমে শিববাড়ী মোড়ে এ দোকান চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি পয়েন্টে চালু করা হবে। রমজানজুড়ে তাদের এ কার্যক্রম চলবে। হৃদয় বলেন, তারা পণ্য কেনার পর পরিবহন খরচসহ মূল্য নির্ধারণ করছেন। শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমে এগুলো বিক্রি করছেন। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ দোকান চালু থাকবে। 

বাজার মনিটরিং কন্ট্রোল টিম সদস্য ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাঈম মল্লিক, টিম সদস্য আরিফুল ইসলাম সানি ও রাইসা ইসলাম জানান, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূলত বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না কমা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।   

শিক্ষার্থীরা জানান, নিজেদের টাকায় পণ্য কিনে এনে বিক্রি করছেন তারা। কারও কাছ থেকে কোনো অনুদান নেননি।

এই দোকান থেকে আলু, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল ও মুড়ি কেনার পর ইজিবাইক চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, বাজারের তুলনায় এখানে দাম অনেক কম। নগরীর আরও কিছু পয়েন্টে এ ধরনের দোকান চালু করলে লোকজন রোজায় কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পারত।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আলম শেখ বলেন, বাড়ি যাওয়ার সময় লোকের ভিড় দেখে এলাম। আমি ছয় আইটেম কিনেছি। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে আরও কিছু পণ্য এবং বিক্রির পয়েন্ট বৃদ্ধি করলে ভালো হবে। তাহলে আরও অনেকে উপকৃত হবেন। শিক্ষার্থীরা অসাধারণ একটি উদ্যোগ নিয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ