দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ক্রেতারা যখন দিশাহারা, তখন মাত্র এক টাকায় ইফতারসমগ্রী বিক্রি করে সাড়া ফেলেছেন খুলনার দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশার চা দোকানী ইকবাল। প্রায় ২৪ বছর ধরে তিনি চা বিক্রি করছেন ওই এলাকায়। রমজান আসলেই তিনি এক টাকা করে ইফতার সামগ্রী বিক্রি করতে শুরু করেন।

ইকবালের দোকানে আলুর চপ, পিয়াজু, মরিচের চপ ও বেগুনি যাই কিনবেন প্রতিপিসের মূল্য নেওয়া হয় এক টাকা করে। রয়েছে ছোলাও। শুধুমাত্র ভাজা ছোলা বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। ১২০ টাকা করে ছোলার কেজি বিক্রি করেন তিনি।

ইকবাল জানান, শুধুমাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি এ কাজটি করছেন। প্রথম কয়েক বছর তিনি একাই এ কাজটি করলেও ৩-৪ বছর পর থেকেই তার সাথে যুক্ত হয়েছেন স্থানীয় কিছু স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তি। নিজেরাই সেখানে শ্রম দিচ্ছেন তারা। ক্রেতাদের কাছে ইফতার সামগ্রী নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বিক্রি করছেন তারা। এবারের রমজানের প্রথম দিন থেকেই ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার দোকানে। 

আরো পড়ুন:

রমজানের আমল এবং পাপমুক্ত হওয়ার পথ 

মাহে রমজানের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য ও ইফতারের মাসয়ালা

ইকবাল হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্টে রমজানের প্রথম দিন সাত হাজার টাকার ইফতারির পাশাপাশি দুই কেজি ছোলা বিক্রি হয়। দ্বিতীয় দিন ৩ মার্চ বিক্রি হয় তিন কেজি ছোলা এবং আট হাজার টাকার ইফতারি। 

প্রতিদিন জোহরের নামাজের পরই ইফতারি তৈরি শুরু করেন ইকবালসহ তার সহকর্মীরা। বিকেল ৪টা থেকেই শুরু হয় বিক্রি। আশপাশের ক্রেতারাই কিনে নিয়ে যান ইকবালের ইফতারি। 

ইকবালের সহযোগিতা করছেন এমন একজন পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ী মো.

পর্বত। তিনি জানান, প্রতিদিনের ইফতার বিক্রিতে তাদের ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকার মতো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ইকবালসহ তারা সবাই এ ভর্তুকি দিয়ে থাকেন। এর ফলে যারা চড়া দামে ইফতারি কিনতে সামর্থ্য রাখেন না তারাও এখান থেকে ইফতারি কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। 

তিনি আরো জানান, প্রতিদিন একটি পরিবারের ইফতারি কিনতে ১৫০ টাকার বেশি খরচ হয়। সেখানে ইকবালের দোকান থেকে মাত্র ৩০ টাকার মধ্যেই মিলছে প্রায় সব ধরনের ইফতারি পণ্য। 

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ জানান, ইকবালের এমন কাজে এলাকার অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন। বিশেষ করে রিকশা-ভ্যানচালক ও শ্রমিকসহ সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে অনেক সাড়া দেখা দিয়েছে ইকবালের ইফতারি নিয়ে। এতে ইকবালের অনেক লোকসান হয় ঠিকই কিন্তু মানুষ উপকৃত হয়।

ইকবাল জানান, প্রায় ২৪ বছর ধরে তিনি সেখানে চা দোকান দিয়ে আসছেন। রমজানে দিনের বেলায় হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকার ফলে তিনি একমাস ইফতারি তৈরি করে বিক্রির উদ্যোগ নেন। সব ধরনের ক্রেতার কথা চিন্তা করে তিনি প্রতিটি আইটেম মাত্র এক টাকা দাম নির্ধারণ করেন। এতে লাভ নয়, বরং ভর্তুকি দিতে হচ্ছে তাকে। 

মানসিক প্রশান্তি পান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১১ মাস তিনি ব্যবসা করেন আর রমজানের একমাস রোজাদারদের সেবা করেন। 

ইকবালের এ কাজটিকে মহৎ কাজ উল্লেখ করে স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ীও এগিয়ে আসেন। বিগত ১৮/১৯ বছর ধরে পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীরাও ইকবালকে আর্থিক ও শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন। এতে ইকবালের ‘এক টাকার ইফতার’ বিক্রির পরিমাণও বাড়ছে। আশেপাশের অনেকেই এখন ইকবালের ইফতারির নিয়মিত ক্রেতা। 

ইকবাল জানান, গরিব-ধনী বলে কোনো কথা নেই। যিনিই ক্রেতা হিসেবে আসবেন তিনিই পাবেন প্রতিটি আইটেম এক টাকায়। তাকে সহযোগিতা করছেন পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক, গোবিন্দ দাস, ট্রাক চালক শিবু, ইলেকট্রিক কোদানকার রাহান, স্কুল শিক্ষক সোহেল, স্কুল কর্মচারী শেখ রুবেল, ব্যবসায়ী পর্বত, কাঠ ব্যবসায়ী নিরঞ্জন, গ্যাসের দোকানদার জনি, মুদি দোকানদার জুয়েল, আইসক্রীম ব্যবসায়ী মিজানসহ অনেকেই। গত বছর রমজানে তার ৫৫ হাজার টাকা ভর্তুকি যায়।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রমজ ন ইফত র ন ইকব ল র ইফত র ব যবস য় রমজ ন র ইকব ল র এক ট ক করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মাদারীপুর প্রশাসনের ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা

মাদারীপুরে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের সময় প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অন্যের মালিকানাধীন খাস ও অর্পিত সম্পত্তির ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে এমনটা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় সাবেক ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা প্রমথ রঞ্জন ঘটকসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ঢাকার সহকারী পরিচালক। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুসহ ৫টি এল এ কেসের সরকারি খাস, ভিপি সম্পত্তি ও বিভিন্ন মালিকের সম্পত্তির কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বিল তুলে নেওয়া হয়। ২৩ চেকের বিপরীতে ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার ৫৪ টাকা বিভিন্ন নামে তুলে নেয় একটি চক্র। মাদারীপুর ডিসি অফিসের সাবেক এলএও প্রমথ রঞ্জন ঘটক এই জালিয়াতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। একই সময় কর্মরত দুই সার্ভেয়ার মো. রাসেল আহমেদ ও মো. নাসিরউদ্দিন জড়িত ছিল।

এই তিনজন ছাড়াও স্থানীয় আলো পত্তনদার, আব্দুল মালেক মৃধা, সুরুজ মিয়া, রাজিয়া বেগম, আব্দুল কাদির কাজী, শাহিন বেপারি, কুলসুম বিবি, আতিকুর রহমান, মো. মিলন শেখ, জিল্লুর রহমান, মনির মিয়া, জোছনা বেগম, আঁখি বেগম, আলম আলী বেপারি, হাসিনা বেগম, আসমা বেগম, আওলাদ হোসেন, ফরিদা বেগম, মতিউর রহমান ও সুধাংশু কুমার মণ্ডলকে আসামি করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ