গান থেকে দূরে থাকা সম্ভব না’: দিলরুবা খান
Published: 5th, March 2025 GMT
বেশ বিরতির পর বাংলাদেশ টেলিভিশনে [বিটিভি] একক কোনো সংগীতানুষ্ঠানে গান গেয়েছেন ফোক গানের নন্দিত কণ্ঠশিল্পী দিলরুবা খান। ‘সুরের মালা’ সংগীতানুষ্ঠানটির রেকর্ডিং সম্প্রতি বিটিভির নিজস্ব স্টুডিওতে হয়েছে। অনুষ্ঠানটির প্রযোজক তারিকুজ্জামান মিলন। মকসুদ জামিল মিন্টুর সংগীত পরিচালনায় এর গ্রন্থনা ও গবেষণা করেছেন কাজী ফারুক বাবুল। জানা গেছে, এতে দিলরুবা খান গেয়েছেন ‘নির্জনও যমুনার কূলে’, ‘ভ্রমর কইয়ো গিয়া’, ‘পাগল মন’, ‘তোমার আমার দুই মেরুতে বাস’, ‘দরদী’সহ আরও কয়েকটি গান। শিগগিরই বিটিভিতে অনুষ্ঠানটি প্রচার হবে।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে দিলরুবা খান বলেন, ‘বেশ বিরতির পর বিটিভির জন্য গান গাইতে পেরে ভালো লেগেছে। এতে আমার বেশির ভাগ জনপ্রিয় গানগুলো করেছি। ক্যারিয়ারের এই সময় এসেও গান করছি। বিটিভি আমার প্রাণের জায়গা। এ চ্যানেলটি থেকে যখন কোনো গানের প্রস্তাব আসে আর না করতে পারি না। তাছাড়া সবসময় গানের মধ্যেই থাকতে ভালোবাসি। গান থেকে দূরে থাকা অসম্ভব। অনুষ্ঠানে ৮টি গানই লাইভ গেয়েছি। লাইভ গাওয়ার আলাদা একটা মজা আছে।’
শিল্পী আবদুল আলীমের গান গেয়ে গানের জগতে যাত্রা শুরু দিলরুবা খানের। তাঁর বাবা সৈয়দ হামিদুর রহমান রাজশাহী ও রংপুর বেতারের শিল্পী হলেও তিনি চাননি তাঁর মেয়ে গান করুক। তবুও গানের প্রতি প্রবল আকর্ষণ আর নিজস্ব প্রতিভার কল্যাণে লোকগানে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন দিলরুবা। তাঁর গাওয়া ‘দুই ভূবনের দুই বাসিন্দা, বন্ধু চিরকাল’ গানটি গাওয়ার পর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯১ সালে তাঁর গাওয়া ‘পাগল মন’ এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে, তাঁর নামই হয়ে যায় পাগল মন দিলরুবা। সংগীতের প্রতি ভালোবাসা, সুরের মায়া তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এক শ্রুতিমাধুর্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে।
গান গাওয়ার পাশাপাশি বাসায় গাছের যত্ন, রান্নাবান্না ও সংগীতচর্চা করে কাটে দিলরুবা খানের সময়। মাঝে মাঝে নিজের ‘দিলরুবা খান অফিসিয়াল’ ইউটিউব চ্যানেলে নতুন নতুন গান প্রকাশ করে থাকেন তিনি। সম্প্রতি ‘পথিকের পথ’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর গাওয়া গান ‘দরদি’। গানটি লিখেছেন পথিক। পাশাপাশি সুরও করেছেন তিনি।
‘দরদি’ গান প্রসঙ্গে দিলরুবা খান বলেন, ‘‘আমি ভেতর থেকে গান গাইতে পছন্দ করি। ‘রেললাইন’, ‘ভ্রমর কইয়ো গিয়া’, ‘নির্জন যমুনার কূলে’– এ জাতীয় গান গাইতে আমার বেশ ভালো লাগে। ‘দরদি’ গানটি তেমনই। গানটি যারা শুনেছেন তাদের কাছ থেকে প্রশংসা পাচ্ছি। ভালো গানের শ্রোতা সবসময়ই থাকেন। এর প্রমাণ বার বার পাচ্ছি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘বিনা লাভের দোকানে’ নিম্নবিত্তের স্বস্তি
খুলনা নগরীর শিববাড়ী মোড়। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টায় সেখানে দেখা মেলে একদল মানুষের জটলা। এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল, নতুন একটি দোকানে বসে চিড়া, মুড়ি, সয়াবিন তেল, আলু-পেঁয়াজসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি করছেন তিন-চার যুবক।
দোকানের ওপরে ব্যানারে লেখা– ‘পবিত্র মাহে রমজানে জনমনে স্বস্তি ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে বিনা লাভের দোকান। কেনা দামে পণ্য বিক্রি। আয়োজনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও টাস্কফোর্স টিম, খুলনা।’ সেখান থেকে বেশ আগ্রহ নিয়ে পণ্য কিনছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বিক্রেতারা জানান, তারা সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী। কোনো লাভ ছাড়াই মোট ১৬ ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি আলু ১৭ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, শসা ২৫ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, ছোলা ৯৫ টাকা, মুড়ি ৬৫ টাকা, বেসন ৬০ টাকা, চিড়া ৬০ টাকা, টমেটো সাড়ে ৭ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা, রসুন ১০০ টাকা, ডিম প্রতি পিস ১০ টাকা, সয়াবিন তেল এক লিটারের বোতল ১৭৫ টাকা এবং লেবু প্রতি হালি ২৭ টাকায় বেচছেন। এ ছাড়া রয়েছে ধনিয়া পাতা ও বোম্বাই মরিচ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের সদস্য হৃদয় ঘরামী জানান, গত অক্টোবরে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে তারা নগরীর শিববাড়ী মোড়, বয়রা বাজার, নতুন বাজার, গল্লামারী, দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ড ও খালিশপুর চিত্রালী মার্কেটে ‘বিনা লাভের দোকান’ চালু করেছিলেন। তখন ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পান। রোজার সময় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আবারও সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে তারা আবারও এ দোকান চালু করেছেন।
তিনি আরও জানান, প্রথমে শিববাড়ী মোড়ে এ দোকান চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি পয়েন্টে চালু করা হবে। রমজানজুড়ে তাদের এ কার্যক্রম চলবে। হৃদয় বলেন, তারা পণ্য কেনার পর পরিবহন খরচসহ মূল্য নির্ধারণ করছেন। শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমে এগুলো বিক্রি করছেন। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ দোকান চালু থাকবে।
বাজার মনিটরিং কন্ট্রোল টিম সদস্য ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাঈম মল্লিক, টিম সদস্য আরিফুল ইসলাম সানি ও রাইসা ইসলাম জানান, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূলত বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না কমা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।
শিক্ষার্থীরা জানান, নিজেদের টাকায় পণ্য কিনে এনে বিক্রি করছেন তারা। কারও কাছ থেকে কোনো অনুদান নেননি।
এই দোকান থেকে আলু, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল ও মুড়ি কেনার পর ইজিবাইক চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, বাজারের তুলনায় এখানে দাম অনেক কম। নগরীর আরও কিছু পয়েন্টে এ ধরনের দোকান চালু করলে লোকজন রোজায় কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পারত।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আলম শেখ বলেন, বাড়ি যাওয়ার সময় লোকের ভিড় দেখে এলাম। আমি ছয় আইটেম কিনেছি। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে আরও কিছু পণ্য এবং বিক্রির পয়েন্ট বৃদ্ধি করলে ভালো হবে। তাহলে আরও অনেকে উপকৃত হবেন। শিক্ষার্থীরা অসাধারণ একটি উদ্যোগ নিয়েছে।