নতুন দলের নিবন্ধন পেতে কী শর্ত পূরণ করতে হবে, রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জ কী
Published: 5th, March 2025 GMT
নতুন মুখ, তরুণ নেতৃত্ব। তাঁদের নিয়েই আত্মপ্রকাশ করল নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মূলত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে গঠিত হয়েছে এ দল।
চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসাবে নতুন দলটির হাতে সময় ১০ থেকে ১১ মাস।
এর মধ্যেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন দলের সামনে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ—নির্বাচন কমিশনের শর্ত পূরণ, পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ভোটের মাঠের লড়াই, ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জনসহ নানা বিষয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করার পরই আলোচনা হচ্ছে, নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে কতটা সফল হবে তারা।
আরও পড়ুনতরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫নিবন্ধনের যত শর্ত
কোনো দল দলীয় প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে প্রথমে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে হয়।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৯০ ক ধারা অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে চাইলে তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করতে হবে।
১.
২. সেসব নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা যেসব আসনে অংশ নিয়েছেন, সেসব আসনে মোট ভোটের ৫ শতাংশ অর্জন।
৩. কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকতে হবে। দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় জেলা অফিস থাকতে হবে। আর অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার থানায় অফিস থাকতে হবে, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার থাকবে।
আরও পড়ুনজাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের কে কোন পদে২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এসব ছাড়াও নিবন্ধন পেতে আগ্রহী দলটির গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা; কমিটিতে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখা (২০৩০ সালের মধ্যে পূরণ)—এসবসহ আরও কিছু বিধান রাখার শর্ত রয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টিকে নিবন্ধন পেতে এসব শর্ত পূরণ করতে হবে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ‘নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন’ নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য কিছু শর্ত শিথিলের প্রস্তাব করেছে। তাদের প্রস্তাব হলো, নিবন্ধন পেতে ১০ শতাংশ জেলা ও ৫ শতাংশ উপজেলা বা থানায় দলের অফিস এবং দলটির কমপক্ষে পাঁচ হাজার সদস্য থাকতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘(রাজনীতিতে) নতুন হওয়ায় এতগুলো জেলা, এতগুলো উপজেলায় অফিস করা তো একটু কষ্টকর, কঠিন ব্যাপার। আসলে রাজনৈতিক দল বেশি আসুক, নতুন নতুন কার্যক্রম করুক, এটাকেই উৎসাহিত করার জন্য মূলত শর্তটাকে শিথিল করা (সুপারিশ) হয়েছে।’
আরও পড়ুন‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বলতে কী বোঝাতে চাইছে জাতীয় নাগরিক পার্টি০১ মার্চ ২০২৫জেসমিন টুলী আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন পেতে হলে অবশ্যই তিন বছর দলের সদস্য হতে হবে। কিন্তু নতুন রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না, যেহেতু তারা নতুন।’
বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়, তখন সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করবে। আর তা না হলে আগের আইন অনুসারেই নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে হবে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে।
আরও পড়ুননাহিদকে আহ্বায়ক করে ১৭১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ তৃণমূলে
জাতীয় নাগরিক পার্টি তৃণমূল গোছানোকে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে। দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তৃণমূলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলের ঘোষণা এসেছে। সেটিকে পুনর্গঠিত করা, সাংগঠনিক কাঠামোতে এনে নিবন্ধন পাওয়ার কিছু শর্ত পূরণ করা, সার্বিকভাবে রাজনৈতিক দলটিকে সাংগঠনিক কাঠামোতে আনার প্রক্রিয়াটি দলের ‘প্রাথমিক বৈতরণী’।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ ওই অর্থে, রাজনৈতিক একটা টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদের দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় যেতে হয়েছে। বিরাজনীতিকরণের মধ্য দিয়ে যে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, সেটি উত্তরণ করে একটি সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া, এটিই হচ্ছে আমাদের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসংখ্যা ২১৬। সেখানে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আসা নেতার সংখ্যা প্রায় সমান।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সারা বাংলাদেশে ৪৫০টির বেশি কমিটি রয়েছে।
আরও পড়ুনকমিটির আকার বাড়বে, লক্ষ্য তৃণমূলে বিস্তৃতি ০২ মার্চ ২০২৫বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি রয়েছে ১২০টির বেশি।
যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি রাজনৈতিক কোনো দল হিসেবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেনি। তবে জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়েও জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিগুলোই দলের কমিটিতে রূপান্তরিত হবে কি না, সেই আলোচনাও রয়েছে।
এ বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যদি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে কেউ জাতীয় নাগরিক পার্টিতে আসতে চান, অবশ্যই পদত্যাগ করে আসতে হবে। যারা নতুন রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চায়, সবার জন্যই এ প্ল্যাটফর্ম উন্মুক্ত।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির, যিনি জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পাওয়ার জন্য পুরাতন আইনে যে নিয়ম আছে, ২১টা জেলা, ১০০টা উপজেলায় কমিটি থাকা লাগবে, তার থেকে বেশি আমাদের আছে।’
আরও পড়ুনগণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি১৬ ঘণ্টা আগেজয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, ‘আমরা এখন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেওয়ার পর ওই বিপ্লবীরা যাঁরা বিচ্ছিন্ন, ছন্নছাড়া ছিলেন এত দিন, তাঁরা আবার এসে এক হবেন। যদি আবার এক হয়ে যাই, এটা বিশাল একটা রাজনৈতিক শক্তি হবে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটিগুলোর প্রতিটিতে গড়ে দেড় শর মতো সদস্য রয়েছেন বলে জানান জয়নাল আবেদীন শিশির। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক কমিটির লোকজনের জাতীয় নাগরিক পার্টিতে বেশি আগমন ঘটবে, স্বেচ্ছায় আসবে তারা।’
এনসিপির জন্য ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোঁজার কাজ চলছে। দলের প্রতীক এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে কিছু প্রতীকের প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়েছে দলটির কয়েকজন নেতা।
হাসনাত আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কীভাবে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে তারপর এই কার্যক্রমগুলো পরিচালিত করতে পারি এবং শহর থেকে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত মানুষের কাছে যেতে পারি, সেটি নিয়েই আমাদের এখন পরিকল্পনা চলছে।’
হাসনাত আরও বলেন, ‘নির্বাচন যখনই হোক না কেন, আমরা আমাদের রাজনৈতিক যে কর্মসূচি, সেটিকে অব্যাহত রেখে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করতে পারব।’
আরও পড়ুনজাতীয় নাগরিক পার্টির লক্ষ্য ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫নতুন দলের সম্ভাবনা কতটা
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৯টি। পুরোনো দলের ভিড়ে নতুন এসে আলোচনা তৈরি করেছে এনসিপি। তাদের সম্ভাবনা কতটুকু?
এ বিষয়ে লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ প্রাসঙ্গিক দুটি শর্তের কথা বলেছেন। প্রথমত, সব জায়গায় সংগঠন থাকা। কারণ, নির্বাচনে অনেক কাজ করতে হয়। কাজেই এনসিপি কত দ্রুত তৃণমূলে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবে, তার ওপর নির্ভর করছে। দ্বিতীয়ত, ভালো প্রার্থী দেওয়া। কারণ, আগে যাঁরা রাজনীতি করেছেন, বিভিন্ন দলের মনোনয়ন পেয়েছেন, ‘তাঁদের ভূমিকা অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ’।
মহিউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, এনসিপি যদি সংগঠন তৈরি করতে পারে এবং ভালো প্রার্থী দিতে পারে, তাহলে অনেক জায়গায় লড়াই জমিয়ে তুলতে পারবে।
আরও পড়ুনআলোচনায় ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’, কী বলছে জাতীয় নাগরিক পার্টি০১ মার্চ ২০২৫ভোটের মাঠে আরেকটি বিষয় হচ্ছে জনপ্রিয়তা। পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোতে অনেক জনপ্রিয় প্রার্থী রয়েছেন। সেখানে নতুন দল হিসেবে এনসিপির কমিটির মুখগুলো খুবই তরুণ।
অতীতের অনেক প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ছিল না উল্লেখ করে মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘টাকা ও পেশির জোরে অনেকে নির্বাচন করে। বড় দলগুলো তো বরাবর তা–ই করেছে। এবার যদি টাকার ছড়াছড়িটা নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আর পেশিশক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাহলে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’
আরও পড়ুন‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ নিয়ে সমর্থকদের প্রত্যাশা২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫যেসব বাধা আসতে পারে
রাজনৈতিক গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অনেক রাজনৈতিক দল আছে, যারা পুরোনো ধারার রাজনীতি করে। তারা নিজেরা বদলাবে না। সুতরাং তারা একটা চ্যালেঞ্জ দেখছে নিজেদের মধ্যে। এবং সেখান থেকেই বাধাটা আসবে।’
মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, এ ক্ষেত্রে নতুন রাজনৈতিক দল নানাভাবে হেনস্তার শিকার হতে পারে। তবে কতটুকু হবে, সেটা নির্ভর করে তাদের শক্তিমত্তার ওপর। কারণ ’৭২ সাল বা তারপর দেখা গেছে জাসদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রচণ্ড নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।
কিন্তু এখন যেহেতু অরাজনৈতিক সরকার আছে, সরকারের তরফ থেকে সে রকম কোনো চ্যালেঞ্জ দেখেন না মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ক্যাওটিক (বিশৃঙ্খলা), মারামারি, পিটাপিটি, মিটিং ভেঙে দেওয়া, টাকা দিয়ে লোক ভাগিয়ে নেওয়া—এগুলো তো হয় আমাদের দেশে। এ ধরনের হয়তো কিছু কিছু হতে পারে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২৮ ফ ব র য় র প রথম আল ক র র জন ত জনপ র য় র সদস য কমপক ষ ন দল র র কম ট র জন য আম দ র দল র স ন বন ধ দলগ ল দলট র সরক র উপজ ল এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন শেখ মইনউদ্দিন ও ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হলেন শেখ মইনউদ্দিন ও ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। আজ বুধবার এই দুইজনকে বিশেষ সহকারী করা হয়েছে। (বিস্তারিত আসছে।)