মিত্র মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণের প্রশংসা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গতকাল মঙ্গলবার মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রশংসা করেন তিনি। মস্কোকে ছয়টি হাতি উপহার দেওয়ার জন্য তিনি হ্লাইংকে ধন্যবাদ দেন।

সামরিক বিশ্লেষকেরা এ উপহারকে ‘হাতি কূটনীতি’ বলেছেন। তাঁদের মতে, ঠিক একই সময়ে মিয়ানমারকে ছয়টি যুদ্ধবিমান সরবরাহ করেছে রাশিয়া। সেই যুদ্ধবিমানগুলো ইতিমধ্যে মিয়ানমারে পৌঁছে গেছে।

শান্তিতে নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির দলের সরকারকে উৎখাত করে ২০২১ সালে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।

ক্রেমলিনের ওই বৈঠকে মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী মিন অং হ্লাইংকে পুতিন বলেছেন, ‘এ বছর আমরা আমাদের দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরের ২৫তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন করছি। এখন পর্যন্ত আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে।’

এ সময় পুতিন দুই দেশের মধ্যে গত বছর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

এবারের বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে একটি চুক্তি সই হয়েছে। রাশিয়া মিয়ানমারে ছোট আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে চায়।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কোম্পানি ‘রোসাটম’ থেকে বলা হয়েছে, এ কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াট হবে এবং এর উৎপাদনক্ষমতা তিন গুণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

আগামী ৯ মে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়ের ৮০তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন করবে রাশিয়া। সেদিন মিয়ানমারের একটি সামরিক দল মস্কোয় কুচকাওয়াজে অংশ নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন। মিন অং হ্লাইংও সেদিন কুচকাওয়াজে থাকবেন।

চীনের মতো রাশিয়াও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করে এবং এ সহযোগিতা দিন দিন আরও বাড়ছে।

বৈঠকের শেষে পুতিন বলেছেন, ‘আপনার খুবই উষ্ণ উপহারের জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারছি না। আপনি গত বছর আমাদের জন্য ছয়টি হাতি এনেছিলেন। সেগুলোকে মস্কো চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

জবাবে মিন অং হ্লাইং তাঁর দেশে রাশিয়ার পাঠানো সামরিক যন্ত্রাংশের মানের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে তিনি রাশিয়াকে সমর্থন করেন এবং বিশ্বাস করেন, মস্কো দ্রুতই সেখানে বিজয় অর্জন করবে।

মিন অং হ্লাইংয়ের বয়স ৬৮ বছর। তিনি খুব একটা বিদেশ সফরে যান না। রাশিয়া সফরে গতকাল মঙ্গলবার তিনি মস্কোয় পৌঁছান। প্রেসিডেন্ট পুতিনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একজন সের্গেই শোইগু তাঁকে স্বাগত জানান।

মিন অং হ্লাইংয়ের জান্তা সরকার এ বছর মিয়ানমারে  নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে। যদিও সমালোচকেরা নির্বাচন আয়োজনকে প্রক্সির মাধ্যমে জেনারেলদের ক্ষমতায় রাখার একটি প্রহসন বলে উপহাস করেছেন।

আরও পড়ুনমিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব কেন বাড়ছে০৬ নভেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

‘বিনা লাভের দোকানে’ নিম্নবিত্তের স্বস্তি

খুলনা নগরীর শিববাড়ী মোড়। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টায় সেখানে দেখা মেলে একদল মানুষের জটলা। এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল, নতুন একটি দোকানে বসে চিড়া, মুড়ি, সয়াবিন তেল, আলু-পেঁয়াজসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি করছেন তিন-চার যুবক।

দোকানের ওপরে ব্যানারে লেখা– ‘পবিত্র মাহে রমজানে জনমনে স্বস্তি ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে বিনা লাভের দোকান। কেনা দামে পণ্য বিক্রি। আয়োজনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও টাস্কফোর্স টিম, খুলনা।’ সেখান থেকে বেশ আগ্রহ নিয়ে পণ্য কিনছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

বিক্রেতারা জানান, তারা সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী। কোনো লাভ ছাড়াই মোট ১৬ ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি আলু ১৭ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, শসা ২৫ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, ছোলা ৯৫ টাকা, মুড়ি ৬৫ টাকা, বেসন ৬০ টাকা, চিড়া ৬০ টাকা, টমেটো সাড়ে ৭ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা, রসুন ১০০ টাকা, ডিম প্রতি পিস ১০ টাকা, সয়াবিন তেল এক লিটারের বোতল ১৭৫ টাকা এবং লেবু প্রতি হালি ২৭ টাকায় বেচছেন। এ ছাড়া রয়েছে ধনিয়া পাতা ও বোম্বাই মরিচ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের সদস্য হৃদয় ঘরামী জানান, গত অক্টোবরে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে তারা নগরীর শিববাড়ী মোড়, বয়রা বাজার, নতুন বাজার, গল্লামারী, দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ড ও খালিশপুর চিত্রালী মার্কেটে ‘বিনা লাভের দোকান’ চালু করেছিলেন। তখন ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পান। রোজার সময় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আবারও সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে তারা আবারও এ দোকান চালু করেছেন।

তিনি আরও জানান, প্রথমে শিববাড়ী মোড়ে এ দোকান চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি পয়েন্টে চালু করা হবে। রমজানজুড়ে তাদের এ কার্যক্রম চলবে। হৃদয় বলেন, তারা পণ্য কেনার পর পরিবহন খরচসহ মূল্য নির্ধারণ করছেন। শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমে এগুলো বিক্রি করছেন। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ দোকান চালু থাকবে। 

বাজার মনিটরিং কন্ট্রোল টিম সদস্য ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাঈম মল্লিক, টিম সদস্য আরিফুল ইসলাম সানি ও রাইসা ইসলাম জানান, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূলত বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না কমা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।   

শিক্ষার্থীরা জানান, নিজেদের টাকায় পণ্য কিনে এনে বিক্রি করছেন তারা। কারও কাছ থেকে কোনো অনুদান নেননি।

এই দোকান থেকে আলু, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল ও মুড়ি কেনার পর ইজিবাইক চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, বাজারের তুলনায় এখানে দাম অনেক কম। নগরীর আরও কিছু পয়েন্টে এ ধরনের দোকান চালু করলে লোকজন রোজায় কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পারত।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আলম শেখ বলেন, বাড়ি যাওয়ার সময় লোকের ভিড় দেখে এলাম। আমি ছয় আইটেম কিনেছি। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে আরও কিছু পণ্য এবং বিক্রির পয়েন্ট বৃদ্ধি করলে ভালো হবে। তাহলে আরও অনেকে উপকৃত হবেন। শিক্ষার্থীরা অসাধারণ একটি উদ্যোগ নিয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ