মসজিদটি ঘিরে নানা কথা প্রচলিত আছে। ঠিক কবে কে নির্মাণ করেছে, সে ব্যাপারেও জানেন না স্থানীয় লোকজন। মসজিদটি রাতারাতি জিনেরা তৈরি করেছে বলে এলাকায় প্রচলিত আছে। এ  জন্য কেউ কেউ মসজিদটিকে ‘জিনের মসজিদ’ বলেও ডাকেন। তবে গবেষকেরা বলছেন, মসজিদটি মোগল আমলে নির্মাণ করা হয়।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের গাঙ্গোপাড়া-মাথাভাঙা সড়কের পাশে কামনগরে মসজিদটি অবস্থিত। বাগমারার একমাত্র তিন গম্বুজ মসজিদ এটি। মুসল্লিদের চাহিদার কারণে কিছু সংস্কার করায় রঙে ঢেকে গেছে স্থাপত্যগত ঐতিহ্য। মসজিদটি পাঁচ বছর আগে যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের কাছে বর্তমান অবস্থা দেখলে অন্য রকম মনে হবে।

কামনগর ও আশপাশের প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে মসজিদটি কে কীভাবে নির্মাণ করেছেন, এর সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। গ্রামের বাসিন্দা আফজান হোসেন (৭২) বলেন, তাঁর বাবা কাচু প্রামাণিক ও দাদা শেকারু প্রামাণিকও মসজিদটির স্থাপনার বিষয়ে তাঁদের কিছুই বলতে পারেননি। হঠাৎ রাতে মসজিদটি জিনেরা তৈরি করেছে বলে তাঁরা ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছেন।

কামনগর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আবের আলী (৭৬) বলেন, তিনি শুনেছেন, এক রাতে জিনেরা মসজিদটি তৈরি করে পাশে একটি পুকুর খনন করেছে। আগে ভয়ে লোকজন সেখানে নামাজ পড়তেন না। অনেক পরে ভয় ভেঙেছে।

সম্প্রতি সরেজমিন মসজিদের ভেতরে স্থাপত্যশিল্পের অপূর্ব নিদর্শন চোখে পড়ে। ভেতরে মিহরাবটি ঘিরে লতাপাতা আর ফুলের নকশা দেখা যায়। মূল মসজিদকে পেছনে রেখে সামনে ইটের তৈরি প্রাচীর ঘেরা। নতুন করে চারপাশের দেয়াল ও তিনটি গম্বুজ রং করা হয়েছে। শিলালিপি বা লিখিত দলিলের অভাবে মসজিদের নির্মাণকাল নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় গবেষক ও তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, মসজিদটি মোগল আমলের শেষের দিকে নির্মাণ করা হয়। এটি উপজেলার একমাত্র তিন গম্বুজ মসজিদ। সম্রাট আকবরের আমলে উপজেলার ধামিন পরগনা ছিল। সেখানেই মোগল আমলের শেষের দিকে তিন গম্বুজের মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।

কাজী মো.

মোস্তাফিজুর রহমানের লেখা ‘রাজশাহী জেলার প্রত্নপীঠ ও স্থাপত্যিক ঐতিহ্য’ বইয়ে বাগমারার কামনগর গ্রামের এই তিন গম্বুজ মসজিদের তথ্য পাওয়া যায়। বইয়ের তথ্যমতে, ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত মসজিদটি আয়তাকার। দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট ও প্রস্থে ১০ ফুট। পূর্ব দেয়ালে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি প্রবেশপথ এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে জানালা আছে। প্রবেশপথের উভয় পাশে দরজা একটি করে বদ্ধ প্যানেল। প্যানেল দুটি অর্ধবৃত্তাকার খিলানবিশিষ্ট।

মুসল্লিদের চাহিদার কারণে কিছু সংস্কার করায় রঙে ঢেকে গেছে স্থাপত্যগত ঐতিহ্য। মসজিদটি পাঁচ বছর আগে যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের কাছে বর্তমান অবস্থা দেখলে অন্য রকম মনে হবে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর ত ন গম ব জ ক মনগর ব গম র মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

গবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগ, প্রত্যাহার দাবি

সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম মুন্নার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে। এ মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (৬ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা।

জানা গেছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উস্কানিতে বর্তমান সরকারকে উৎখাত, জনসাধারণের শান্তি বিনষ্ট ও সরকারি সম্পদের ক্ষতি সাধনের লক্ষ্যে গত ১২ মার্চ বিক্ষোভ মিছিল এবং দেশীয় অস্ত্রদ্বারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এতে ৭৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১২৫ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় গত ৫ এপ্রিল নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মী মর্মে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ প্রহরায় ওইদিনই আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

মুন্নাকে গ্রেপ্তার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করেন মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মামলার এজাহারে উল্লেখিত ঘটনার দিন ক্যাম্পাসেই ছিলেন মুন্না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বৃহত্তর খুলনা বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলেও উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে তাকে। অভিযুক্তের ফেসবুকেও ওইদিনের ইফতার সংক্রান্ত একাধিক পোস্ট ও ছবি রয়েছে।

মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মূখ্য সংগঠক ও গবি আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ আহমদ সালেহীন বলেন, “আন্দোলনের শুরু থেকেই মুন্না আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। মুন্নার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত মব সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। আগামীতে কারো বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার পূর্বে যেন সঠিক সাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করা হয়, সেটা পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এর পরিমাণ ভয়াবহ হবে।”

আইন বিভাগের প্রভাষক লিমন হোসেন বলেন, “এজাহারে উল্লেখিত ঘটনার দিন মুন্না ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিল এবং একটি ইফতার ও দোয়া মাহফিলেও অংশ নিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শতশত শিক্ষার্থী এবং আইন বিভাগের সব শিক্ষকদের পক্ষ থেকে মুন্নার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ দেশের সব মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায় এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয় সেই দাবি জানাই। আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে অনতিবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে মুন্না যেন দ্রুত শিক্ষা-কার্যক্রমে ফিরতে পারে, সেই দাবি জানাচ্ছি।”

এদিকে সার্বিক বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হুমায়ুন কবীর মোল্লা বলেন, “ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়- এই মর্মে অভিযুক্তের যদি কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ থাকে, তিনি  তাহলে আদালতে প্রমাণ পেশ করুক। আমাদের কাছেও কাগজপত্র দিলে আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।”

ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ্মার বুকে ডুবোচর, ব্যাহত হচ্ছে নৌযান চলাচল 
  • গবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগ, প্রত্যাহার দাবি
  • বৈরী আবহাওয়ায় চা শিল্পে সংকটের শঙ্কা