বাগমারার ‘জিনের মসজিদ’ ঘিরে নানা রহস্য, সংস্কারে ঢেকেছে ঐতিহ্য
Published: 5th, March 2025 GMT
মসজিদটি ঘিরে নানা কথা প্রচলিত আছে। ঠিক কবে কে নির্মাণ করেছে, সে ব্যাপারেও জানেন না স্থানীয় লোকজন। মসজিদটি রাতারাতি জিনেরা তৈরি করেছে বলে এলাকায় প্রচলিত আছে। এ জন্য কেউ কেউ মসজিদটিকে ‘জিনের মসজিদ’ বলেও ডাকেন। তবে গবেষকেরা বলছেন, মসজিদটি মোগল আমলে নির্মাণ করা হয়।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের গাঙ্গোপাড়া-মাথাভাঙা সড়কের পাশে কামনগরে মসজিদটি অবস্থিত। বাগমারার একমাত্র তিন গম্বুজ মসজিদ এটি। মুসল্লিদের চাহিদার কারণে কিছু সংস্কার করায় রঙে ঢেকে গেছে স্থাপত্যগত ঐতিহ্য। মসজিদটি পাঁচ বছর আগে যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের কাছে বর্তমান অবস্থা দেখলে অন্য রকম মনে হবে।
কামনগর ও আশপাশের প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে মসজিদটি কে কীভাবে নির্মাণ করেছেন, এর সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। গ্রামের বাসিন্দা আফজান হোসেন (৭২) বলেন, তাঁর বাবা কাচু প্রামাণিক ও দাদা শেকারু প্রামাণিকও মসজিদটির স্থাপনার বিষয়ে তাঁদের কিছুই বলতে পারেননি। হঠাৎ রাতে মসজিদটি জিনেরা তৈরি করেছে বলে তাঁরা ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছেন।
কামনগর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আবের আলী (৭৬) বলেন, তিনি শুনেছেন, এক রাতে জিনেরা মসজিদটি তৈরি করে পাশে একটি পুকুর খনন করেছে। আগে ভয়ে লোকজন সেখানে নামাজ পড়তেন না। অনেক পরে ভয় ভেঙেছে।
সম্প্রতি সরেজমিন মসজিদের ভেতরে স্থাপত্যশিল্পের অপূর্ব নিদর্শন চোখে পড়ে। ভেতরে মিহরাবটি ঘিরে লতাপাতা আর ফুলের নকশা দেখা যায়। মূল মসজিদকে পেছনে রেখে সামনে ইটের তৈরি প্রাচীর ঘেরা। নতুন করে চারপাশের দেয়াল ও তিনটি গম্বুজ রং করা হয়েছে। শিলালিপি বা লিখিত দলিলের অভাবে মসজিদের নির্মাণকাল নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় গবেষক ও তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, মসজিদটি মোগল আমলের শেষের দিকে নির্মাণ করা হয়। এটি উপজেলার একমাত্র তিন গম্বুজ মসজিদ। সম্রাট আকবরের আমলে উপজেলার ধামিন পরগনা ছিল। সেখানেই মোগল আমলের শেষের দিকে তিন গম্বুজের মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।
কাজী মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর ত ন গম ব জ ক মনগর ব গম র মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁধ মেরামত চাই বর্ষার আগে
জাইকার অর্থায়নে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কারে দুই বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু আড়াই বছর হতে চললেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ২০ ভাগ। এ অবস্থায় চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন উপজেলার খোলপেটুয়া ও চুনা নদী তীরবর্তী পাউবোর ৫ নম্বর পোল্ডার এলাকার বাসিন্দারা। জলোচ্ছ্বাস ও অতি জোয়ারের হাত থেকে বসতঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ফসল রক্ষায় বর্ষা মৌসুমের আগেই উপকূল রক্ষা বাঁধ মেরামতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ উপলক্ষে বুধবার দুপুরে উপজেলার পূর্ব দুর্গাবাটি ও দাতিনাখালী উপকূল রক্ষা বাঁধের ওপর পৃথকভাবে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদ, বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে উপকূলীয় এলাকার সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে মন্ত্রীর ভাগনে পরিচয়ে জনৈক সবুজ খান জেভি ডকইয়ার্ড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে শ্যামনগরের উপকূল রক্ষা বাঁধের কাজগুলো বাগিয়ে নেন। একপর্যায়ে কাজ শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ না করার জেরে তাঁর অনুকূলে কার্যাদেশ পাওয়া প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ রেমাল তাণ্ডবে মারাত্মক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হলেও সবুজ খান বা তাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। ৫ নম্বর পোল্ডারের আওতাধীন খোলপেটুয়া ও চুনা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া লোকজন শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, বর্ষা মৌসুমের অতি জোয়ারে পুরো এলাকা নিশ্চিতভাবে প্লাবিত হবে।
পাউবো কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাইকার অর্থায়নে ২০২২ সালে প্রায় ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্যামনগরের ৫ নম্বর পোল্ডারের পাঁচটি পয়েন্টে কাজ শুরু হয়। দুই বছর মেয়াদি ওই প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ ২০২৫ সালের তৃতীয় মাসে এসেও কাজের মাত্র ২০ শতাংশ শেষ হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্প এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ২০২২ সালে সামান্য কিছু বালুভর্তি জিও ব্যাগ খোলপেটুয়া নদীতে ডাম্পিং করা হলেও পাঁচটি প্রকল্পের কোথাও মাটির কাজ হয়নি। মাঝেমধ্যে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের আওতায় পাউবোর পক্ষ থেকে কিছু কাজ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনো কাজ করেনি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মূলত সাতক্ষীরার তৎকালীন জেলা প্রশাসক হুমায়ন কবীরের সঙ্গে সখ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সবুজ খান ৫ নম্বর পোল্ডারের কাজ হাতিয়ে নিয়ে তাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু না হলে ঠিকাদার সবুজ খান ও তৎকালীন জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালতের যাওয়ারও হুমকি দেন তারা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেভি ডকইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী সবুজ খানের মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম জানান, পাথর ও বালুসহ আরও কিছু নির্মাণ সরঞ্জামের অভাবে মাঝে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করেছিল বলে দাবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির। বর্তমানে প্রকল্পের কাজের জন্য সিলেট থেকে পাথর আসতে শুরু করেছে। রোজার পর বাঁধ সংস্কারের কাজ আবারও শুরু করবে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি পাউবো কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করেছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, শেফালী মণ্ডল, আব্দুর রউফ, হাফিজুর রহমান, আবেদুর রহমান, মিঠু, মিলন হোসেন প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রনী খাতুনের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা।