হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত বদলপুর। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই এলাকা ৩ নম্বর সেক্টরের আওতাভুক্ত ছিল। কিন্তু এই এলাকার বেশ কিছু যুদ্ধ ৫ নম্বর সেক্টরের বড়ছড়া সাব-সেক্টর থেকে পরিচালিত হয়েছে। ১৫ নভেম্বর জগৎজ্যোতি দাসের নেতৃত্বে একদল বীর মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ নিয়ে টেকেরঘাট থেকে নৌকাযোগে বানিয়াচংয়ে আসছিলেন। টেকেরঘাট সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানার অন্তর্গত। ১৬ নভেম্বর সকালে তাঁরা বদলপুরে পৌঁছান। সেখানে এসে জগৎজ্যোতি জানতে পারেন, একদল রাজাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে বসে চাঁদা আদায় করছে। এ কথা শুনে তিনি তাদের ওপর আক্রমণ করেন। তাঁদের আক্রমণে দুজন রাজাকার নিহত হয় এবং দুজন আত্মসমর্পণ করে। বাকি সবাই পালিয়ে যায়।

এমন সময় পাশের জলসুখা গ্রাম থেকে গুলি আসতে থাকে। এ গ্রামেই জগৎজ্যোতির বাড়ি। তিনি কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে সেদিকে রওনা হন। বাকিদের দুই ভাগে ভাগ করে একদল পাঠান পিটুয়াকান্দি, অন্য দল পাঠান আজমিরীগঞ্জের দিকে। এর মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুটি দল শাল্লা ও আজমিরীগঞ্জ থেকে এসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। অবস্থা প্রতিকূল দেখে জগৎজ্যোতি জলসুখায় না গিয়ে পিটুয়াকান্দিতে চলে আসেন। সেখানে কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকে। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের ধাওয়া করেন। ধাওয়ার এক পর্যায়ে জগৎজ্যোতি মাত্র তিনজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে তাঁদের কাছ থেকে অনেক তফাতে চলে যান। মূল দল বেশ পেছনে পড়ে থাকে এবং তারা সত্যিকার অর্থেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পশ্চাদপসরণরত পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের ওপর আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে। জগৎজ্যোতি তাঁর তিন সহযোদ্ধাকে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিরোধ করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন। দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধের এক পর্যায়ে তাঁর সহযোদ্ধা আবু লাল, গোপেন্দ্র ও উপেন্দ্র শহীদ হন। তাঁর বাঁ পাঁজরে গুলি লাগে। আহত জগৎজ্যোতিকে ধরার জন্য পাকিস্তানি সেনারা এগিয়ে আসতে থাকে। কারণ, তিনি তাদের কাছে ‘টেরর’ হিসেবে পরিচিত। অনেক অপারেশন পরিচালনা করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। আহত জগৎজ্যোতি পাকিস্তানি সেনাদের কাছে ধরা পড়ার চেয়ে আত্মাহুতি দেওয়াই শ্রেয় মনে করেন। নিজের গুলিতে শহীদ হন তিনি। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বরের। ঘটেছিল বদলপুরে।

জগৎজ্যোতি দাস ১৯৭১ সালে শিক্ষকতা করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ৫ নম্বর সেক্টরের বড়ছড়া সাব-সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন।

জগৎজ্যোতি দাস, বীর বিক্রম

গ্রাম জলসুখা (ইছবপুর), আজমিরীগঞ্জ, হবিগঞ্জ। বাবা জিতেন্দ্র দাস, মা হরিমতি দাস। অবিবাহিত। খেতাবের সনদ নম্বর ১৫৪। শহীদ ১৬ নভেম্বর ১৯৭১।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা। প্রথম খণ্ড। প্রথমা প্রকাশন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সহয দ ধ ম বর স

এছাড়াও পড়ুন:

জামালপুরে বাস সেবা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধীদের মহাসড়ক অবরোধ

জামালপুরের প্রতিনিয়ত রাজীব পরিবহনের বাস দুর্ঘটনায় প্রাণহানির প্রতিবাদ ও বাস সার্ভিস সংস্কারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী শহরের বাইপাস এলাকায় জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। পুলিশের আশ্বাসে বেলা ৩টা ২০ মিনিটে আজকের মতো অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের বাইপাস এলাকার বিসিক শিল্পনগরীর সামনে জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে একদল শিক্ষার্থী রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। তাঁদের সামনেই রাস্তায় আড়াআড়িভাবে দুটি মোটরসাইকেল রাখা। তাঁদের পেছনে বসার বেঞ্চ রাখা। এতেই সড়কের সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন যানবাহন আটকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাজীব পরিবহনের বাস জামালপুর-ঢাকা যাতায়াত করে। ওই পরিবহনটি বড় ধরনের একটি সিন্ডিকেট। তারা উন্নত মানের সেবার কথা বললেও ন্যূনতম সেবাও যাত্রীরা পান না। এই পরিবহনের বাস লক্কড়ঝক্কড়, বাসের সিট ভালো না, অনেক বাসের জানালা ভাঙা, চালকদের লাইসেন্স নেই, অদক্ষ চালক, চালক-হেলপারসহ শ্রমিকদের ব্যবহার খুব খারাপ। বাসগুলো জামালপুর শহর থেকে মুক্তগাছা পর্যন্ত বেপরোয়া চলাচল করে। এর পর থেকে বাসগুলো কচ্ছপগতি চলাচল করে। যেখানেই যাত্রীরা হাত উঠাবে, ওই বাস সেখানেই থেমে যাবে। মাত্র চার ঘণ্টার পথ এই বাসে লাগে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা। জামালপুরবাসীর গলার কাঁটা এই বাস সার্ভিসটি। কোনো ধরনের সেবা না থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া ঠিকই নিয়ে থাকে। কারণ, তারা একক বাস সার্ভিস। এই সিন্ডিকেটের কারণে বড় বড় বাস কোম্পানি জামালপুরে চলতে পারে না।

সড়ক অবরোধের সময় বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আফরিন জান্নাত ও মুকুল হোসাইন এবং সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল আবিদ।

বক্তারা বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনায় ওই পরিবহনের চালক ও শ্রমিকদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বাস সার্ভিসের সংস্কার করতে হবে। প্রত্যেক যাত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। বাসের ভাড়া কমাতে হবে। লক্কড়ঝক্কড় বাস বাতিল করে ভালো বাস দিতে হবে। এসব দাবি মানা না হলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধানের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সড়কটি ছেড়ে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, গতকাল রোববার সকালে জামালপুর সদর উপজেলার জয়রামপুর এলাকায় জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রাজীব পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হন। দুর্ঘটনার পর বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। এতে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্তা, গ্রেপ্তার কর্মচারীর মুক্তির দাবিতে শাহবাগ থানায় একদল ব্যক্তি
  • তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর বাসায় তল্লাশির নামে ঢুকে পড়েছেন ২০–২৫ জন, আটক ৩
  • সাবেক এমপি তানভীর ইমামের বাসায় একদল লোকের তল্লাশি
  • বিএনপি–জামায়াতের বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর নির্বাচনী জোট করা ছাড়া পথ কী
  • জামালপুরে বাস সেবা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধীদের মহাসড়ক অবরোধ