পাল্টা শুল্ক আরোপ করল কানাডা, কী প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে
Published: 5th, March 2025 GMT
শুধুই মৌখিক হুমকিতে আর আটকে রইল না বিষয়টা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া এক মাসের চূড়ান্ত সময়সীমার মধ্যেও গ্রহণযোগ্য সমাধানসূত্র বের করতে পারল না মেক্সিকো ও কানাডা। মঙ্গলবার থেকেই ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডার সব পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দিলেন। জবাবে কানাডাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ওয়ারেন বাফেটসহ শিল্পমহলের একাধিক বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও বাজার সমীক্ষা সংস্থা বলছে, ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপ আরেক রকম যুদ্ধ। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।
বিশেষজ্ঞমহলের দাবি, ট্রাম্পের দ্বিতীয় জমানায় বিশ্বজুড়ে যে বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তার বীজ বপন হয়ে গিয়েছিল ৪ ফেব্রুয়ারি চীনের ওপর বর্ধিত হারে শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে। মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে সেই চক্র যেন পূর্ণ হলো।
ইটের বদলে পাটকেল ছুড়তে তাঁরা যে পিছপা হবেন না, তা বুঝিয়ে দিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের দেশে আসা ৩০ বিলিয়ন কানাডীয় ডলারের পণ্যে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ হচ্ছে সেদিন থেকেই। বাকি যে ১২৫ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৫০০ কোটি কানাডীয় ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডা আমদানি করে, তার ওপরেও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে ২৫ মার্চ থেকে।
চুপ করে বসে নেই মেক্সিকোও। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়ে, তাদের রপ্তানির ৮০ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে। শিগগিরই ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্তের পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শিনবাম মঙ্গলবার সকালেই সংবাদ সম্মেলন করে জানান, সেদিন থেকেই মার্কিন পণ্যের ওপর সমহারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। তবে ট্রাম্পের প্রথম ধাক্কাতেই মেক্সিকোর মুদ্রা পেসোর মান এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, কানাডা ও মেক্সিকোর তুলনায় বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে চীনের পাল্টা ব্যবস্থায়। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মঙ্গলবার বলেছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পাল্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা মুরগির মাংস, গরুর মাংস, ভুট্টা, সামুদ্রিক খাবারসহ একাধিক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক কার্যকর করা হবে অবিলম্বে। পাশাপাশি ১০টি মার্কিন কোম্পানিকে আন-রিলায়েবল (নির্ভরযোগ্য নয়) এনটিটি লিস্টে পাঠানোর পাশাপাশি আরও ১৫টি কোম্পানিকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় ঢুকিয়ে বেইজিংয়ে তাদের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে এসব কোম্পানির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাকে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও ছেড়ে কথা বলছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। কদিন আগেই ২৭ দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটকে ট্রাম্প এই বলে একহাত নিয়েছেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠিতই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলার জন্য। তাদের ওপরও ২৫ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে। সরকারি ঘোষণা হবে শিগগিরই, যার পাল্টা হিসেবে কড়া ভাষায় ট্রাম্পকে সাবধানবাণী শুনিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ ধরনের অন্যায্য কোনো পদক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ট্রাম্পের ঘোষণা অনুসারে, এই বাণিজ্যযুদ্ধ রোধের কফিনে সম্ভবত শেষ পেরেক পোঁতা হবে আগামী ২ এপ্রিল। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, সেদিন থেকে গাড়ি-সেমিকন্ডাক্টর চিপ, ওষুধসহ সব ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হবে। অর্থাৎ যে দেশ মার্কিন পণ্যে যতটা শুল্ক আরোপ করে, সেই দেশের পণ্যে ততটাই শুল্ক আরোপ করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এর মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুল্কযুদ্ধ শুরু হলো। ইতিমধ্যে বিশ্বের আর্থিক বাজারে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আবার মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে পারে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের যেমন ক্ষতি হবে, তেমনই দুর্বল হবে বিশ্ব অর্থনীতির ভিত। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশ আবারও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়তে পারে। বন্ধ হতে পারে নীতি সুদ কমানোর পথ। ধাক্কা খেতে পারে আর্থিক বৃদ্ধি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হার্টের রোগী রোজা রাখতে চাইলে করণীয়
হার্টের রোগীদের নিয়মিত অনেক ওষুধ খেতে হয়। এগুলোর মধ্যে ব্লাড পাতলা করার ওষুধ খেতে হয় সাধারণত দুপুরে খাবার গ্রহণের পর। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে হার্টের রোগী রোজা রাখতে পারবেন কিনা, রোজা রাখলে তিনি কখন ওষুধ খাবেন?— এসব প্রশ্নের উত্তর জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. এম এ বাকী,
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ,জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল।
একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে এই চিকিৎসক বলেন, ‘‘অধিকাংশ হার্টের রোগী কিন্তু রোজা রাখতে পারবেন। হার্টের রোগীর কিছু কিছু ওষুধ আছে যেটা আমরা সাধারণত দুপুরে খেতে বলি, বিশেষ করে ব্লাড পাতলা করার ওষুধ দুপুরে খেতে বলা হয়। রোজার সময় যদি আমরা সকালের ওষুধগুলো ইফতারের আগে বা পরে নিয়ে চলে যাই এবং রাত্রে যে ওষুধগুলি আমরা প্রয়োগ করি সেটা সেহেরির আগে বা পরে নিয়ে যাই তাহলে হার্টের রোগীদের কিন্তু রোজা রাখার ব্যাপারে কোনরকম অসুবিধা হবে না। তবে যে সকল হার্টের রোগীর শ্বাসকষ্ট আছে এবং যারা শ্বাসকষ্ট দূর করার জন্য ফুসিড জাতীয় বা ল্যাসিড জাতীয় ওষুধ খাচ্ছেন তারা জানেন এসব ওষুধ বেশি প্রসাব হয়। এ ছাড়া যারা অল্প পরিশ্রম করে হাঁপিয়ে যান অথবা দিনে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার যাদের আছে তাদের ক্ষেত্রে রোজা না রাখাই উত্তম। অন্যদিকে যাদের শ্বাসকষ্ট নাই তারা সকালের ওষুধ ইফতারে আর দুপুরের ওষুধ সেহেরিতে খেয়ে রোজা রাখতে পারেন।’’
অধ্যাপক ডা. এম এ বাকী আরও বলেন, ‘‘বুকে ব্যথা হলে যে স্প্রে প্রয়োগ করা হয় অথবা শ্বাসকষ্টের কারণে যে ইনহেলার ব্যবহার করা হয় এটার কারণে রোজা ভাঙ্গে না।’’
আরো পড়ুন:
দেশে জিকা ভাইরাসের প্রথম ‘ক্লাস্টার’ শনাক্ত, আক্রান্ত ৫
রোজা রেখে ডায়াবেটিস রোগীরা কী করবেন, কী করবেন না
ঢাকা/লিপি