অগণতান্ত্রিক চর্চা থেকে বের হওয়াই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ
Published: 5th, March 2025 GMT
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার শাসনের নাটকীয় পতন ছিল একটি বিস্ময়কর ঘটনা। তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী তরুণদের মধ্যে জেগেছে আশা। তাঁরা এখন রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি করছেন, যেন ভবিষ্যতে আর কোনো স্বৈরাচার বাংলাদেশ শাসন করতে না পারেন।
গণ-অভ্যুত্থানের পর এসেছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাবের জন্য বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে আলোচিত সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বেশির ভাগই নতুন কাঠামো তৈরি এবং নতুন আইন ও বিধি প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করছে।
তবে রাষ্ট্রকাঠামো ও আইনের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ বাস্তব রাজনৈতিক চর্চার গুরুত্বকে উপেক্ষা করে। শুধু কাঠামো ও আইন পরিবর্তন করলেই নতুন স্বৈরশাসকের প্রত্যাবর্তন রোধ করা সম্ভব নয়। আমি মনে করি, আইন ও বিধির অনুপস্থিতি নয়, বরং রাষ্ট্রের সেগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে না পারা এবং লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে ব্যর্থ হওয়াই অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ও শাসনব্যবস্থার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেছে।
এখন আমাদের করণীয় হলো সেই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক চর্চাগুলোকে চিহ্নিত করা, যা দেশের প্রচলিত আইন ও সর্বজনীন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। এসব অগণতান্ত্রিক অনুশীলনকে ভেঙে ফেলাই এখন আমাদের সামনের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভাঙন ও গড়ন
গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পথ হয়েছে অসম আর রাজনৈতিক ব্যবস্থায় হয়েছে বেশ কিছু ভাঙন। অবশ্য ভাঙনের পর আবার নতুন করে গড়ারও প্রচেষ্টা হয়েছে বারবার।
১৯৭১–এ স্বাধীনতার পর গণতন্ত্রের পথে আমাদের যাত্রার সূচনাটা হয়েছিল ভালো। জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আমরা একটি বহুদলীয় সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশ স্বৈরাচারী শাসনের দিকে এগিয়ে মৌলিক স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধসহ একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
এরপর সামরিক শাসনের অধীনে পরবর্তী ১৫ বছর অতিবাহিত হয়। ১৯৯০ সালে একটি গণ–আন্দোলন সামরিক শাসনকে উৎখাত করে। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু করার সুযোগ পায়। পরবর্তী ১৬ বছর ধরে তিনটি নির্বাচনে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, পালাক্রমে ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতার পালাবদল হয় যখন নির্বাচন হয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে।
কিন্তু নিয়মিত নির্বাচন ও ক্ষমতার হাতবদল বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মান উন্নত করতে পারেনি। নির্বাচিত সরকারগুলো ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব এবং পৃষ্ঠপোষকতামূলক রাজনীতি ব্যবহার শুরু করে। বিরোধী দলগুলো মুখোমুখি হয় দমন–পীড়নের। সংসদ হয়ে পড়ে অকার্যকর। নির্বাচিত সরকারগুলো বেসরকারি খাতের মালিকানাধীন নতুন স্বাধীন মিডিয়া এবং নাগরিক সমাজের সংস্থাগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
এরপর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধানের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হতে না পারায় ২০০৭ সালে বাংলাদেশের ভঙ্গুর নির্বাচনী গণতন্ত্র আবারও ভেঙে পড়ে। দুই বছর বাংলাদেশ শাসন করে একটি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারাই ২০০৮ সালে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের কাছে। তখন আবার আমাদের আর একটি সুযোগ সৃষ্টি হয় গণতান্ত্রিক চর্চার গুণগত মান উন্নয়ন করার।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে দিনবদলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারা বলেছিল একটি সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি তারা গড়ে তুলবে। কিন্তু সরকার ক্রমেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে এবং বিরোধীদের প্রতিবাদকে বারবার কঠোরভাবে দমন করে। শেষ পর্যন্ত গত ৫ আগস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বে একটি গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটে। আরও একবার সৃষ্টি হয় গণতন্ত্রের পুনর্গঠনের সুযোগ।
নিরন্তর অগণতান্ত্রিক অনুশীলন
আমাদের জন্য চতুর্থবার যে সুযোগটি সৃষ্টি হয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করতে হলে আমাদের প্রথমেই পরিবর্তন আনতে হবে আমাদের রাজনৈতিক চর্চার। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অগণতান্ত্রিক রীতিনীতিগুলোর কিছু বিষয় সামরিক শাসনামল থেকে উদ্ভূত হলেও পরবর্তী নির্বাচিত রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা এই রীতিনীতিগুলোকে প্রত্যাখ্যান তো করেইনি, বরং তা বহুলাংশে গ্রহণ করেছিল। এর সঙ্গে আরও সংযুক্ত করেছিল তাদের নিজেদের অগণতান্ত্রিক রীতিনীতি।
যেসব অগণতান্ত্রিক চর্চা আমাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে এবং যাদের আমাদের সবার আগে পরিহার করতে হবে, তার কয়েকটি নিচে চিহ্নিত করছি।
দলীয় শাসনব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবহার: ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ ও দল গঠন
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষভাবে কাজ করা। কিন্তু বাংলাদেশে সামরিক ও বেসামরিক দুই ধরনের সরকারই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ (নির্বাচন কারসাজি) করেছে ও দল গঠন বা দলের সমর্থন বৃদ্ধি করেছে। সামরিক শাসনামলে (১৯৭৫-১৯৯০) নির্বাচন কারসাজি, ‘কিংস পার্টি’ তৈরি এবং ভুয়া বিরোধী দল গঠনের প্রচলন শুরু হয়। দুর্ভাগ্যবশত, সামরিক শাসনের অবসানের পর নির্বাচিত বেসামরিক সরকারগুলোও একই কৌশল অবলম্বন করেছে।
‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ এখন বাংলাদেশের একটি প্রচলিত প্রথায় পরিণত হয়েছে। জনসাধারণ জানে যে সরকার তার শাসনব্যবস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ বাহিনী ব্যবহার করে নিজের মনমতো নির্বাচনী ফলাফল তৈরি করতে পারে।
আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের গত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো সরকার নিজের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন আয়োজন করে পরাজিত হয়নি। আবার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিচালিত চারটি নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন দল পরাজিত হয়েছে। ১৯৯৪-৯৫ সালে বিএনপির বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালুর দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তিনিই আবার ক্ষমতায় এসে ২০১১ সালে তা বাতিল করেন। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে পরপর তিনটি বিতর্কিত একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকে।
সামরিক শাসকদের পথ অনুসরণ করে শেখ হাসিনা সংসদে একটি নিয়ন্ত্রিত বিরোধী দলও তৈরি করেন। দশম জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি (জাপা) সরকার ও বিরোধী—উভয় ভূমিকায় ছিল। আর ১১তম ও ১২তম সংসদে জাপা ছিল সরকারপন্থী বিরোধী দল। বারবার প্রহসনের নির্বাচন ও নিয়ন্ত্রিত সংসদ গঠনের ফলে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনী ব্যবস্থা ও সংসদের প্রতি আস্থা হারিয়েছে।
শুধু নির্বাচনের ফলাফল নিয়ন্ত্রণই নয়, গত পাঁচ দশকে আমাদের দেশে বারবার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দল গঠন করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার একদলীয় বাকশালব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। তারপর সামরিক শাসকেরা রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও পৃষ্ঠপোষকতা ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব দল গঠন শুরু করেন। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি—উভয়ই সামরিক শাসন আমলে কিংস পার্টি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরে অবশ্য এই দুই দলই, বিশেষ করে বিএনপি, বিরোধী দল হিসেবে সরকারি নির্যাতনের মুখেও টিকে থাকতে সক্ষম হয়।
১৯৯০–পরবর্তী নির্বাচনী গণতন্ত্রের আমলে, বিশেষ করে গত ১৫ বছরে শাসক–সমর্থকেরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক চুক্তির ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা দল ও নির্বাচনী ব্যয়ের তহবিল সরবরাহ করত। রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের একটি দুষ্টচক্র আবির্ভূত হয়েছিল, যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট শাসনব্যবস্থাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছিল।
অগণতান্ত্রিক দলীয় রাজনীতি
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে মূল আদর্শগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও উভয়ের রাজনৈতিক অনুশীলন ছিল অগণতান্ত্রিক। উভয় দলই রাজনৈতিক সমর্থন তৈরি এবং ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করেছিল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, মক্কেলতন্ত্র, অর্থ, পেশিশক্তি ও সহিংসতা। উভয় দলেই অভ্যন্তরীণ দলীয় গণতন্ত্রের অভাব ছিল। সব গুরুত্বপূর্ণ দলীয় সিদ্ধান্ত শীর্ষদলীয় নেতার মাধ্যমে নেওয়া হতো। এই নেতা আবার পারিবারিক সূত্রে উত্তরসূরি। দল কর্তৃক তাঁকে দলের পদাধিকারী ও নির্বাচনের জন্য প্রার্থী নির্বাচন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষয়
রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা সব প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগ এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিজস্ব দলীয় স্বার্থ ব্যবহার করেছে। ফলে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে যায়। বিজয়ী দলেই নিরঙ্কুশভাবে সব নেওয়ার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ১৫ বছরে নির্বাহী ক্ষমতা কোনো নির্বাচনী জবাবদিহির মুখোমুখি না হয়ে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দলীয়করণ করেছে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করেছে।
সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী হওয়ায় শাসনব্যবস্থার সংকট আরও গভীর হয়েছে। ফলে এই নিয়ন্ত্রিত সংসদ নীতিনির্ধারণে উদাসীন থেকে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান দুর্বল করা, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, ভবন ও সড়ক নিরাপত্তাবিধি লঙ্ঘন, ভূমি দখল, নদীভাঙনসহ নানা অনিয়মকে উৎসাহিত করেছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভাজনমূলক নীতি, প্রতিপক্ষকে শত্রু হিসেবে দেখার প্রবণতা আছে; দলের ভেতরে আছে গণতন্ত্রের অভাব। এসব কারণে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রায়ই সহিংসতা ব্যবহার করা হয়। এই সহিংসতার শিকার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল হলেও দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী ও উপদলগুলোর মধ্যেই বেশি সহিংসতা দেখা যায়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য থেকে আমরা দেখতে পাই, ২০০২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দলগত সংঘর্ষে ২৬৬ জন মারা গেলেও একই দলের ভেতরে সংঘর্ষে ৪৪৭ জন নিহত হয়েছেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সরকারদলীয় রাজনৈতিক দলে দলীয় সহিংসতার হার বরাবরই বেশি। এটা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে ক্ষমতাসীন দলগুলোর কাছেই সুযোগ-সুবিধা বা পৃষ্ঠপোষকতার সুযোগ বেশি থাকে। ফলে দলীয় পদপদবি ও সুযোগ-সুবিধা দখলের প্রতিযোগিতায় নিজেদের মধ্যেই বেশি সহিংসতা হয়।
সর্বময় ক্ষমতাধর নির্বাহী
শুরু থেকেই বাংলাদেশ এক সর্বময় ক্ষমতাধর নির্বাহী কর্তৃক শাসিত হয়েছে। সংসদীয় সরকারে প্রধানমন্ত্রী আর রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। সরকারপ্রধান, সংসদপ্রধান এবং রাজনৈতিক দলের প্রধান একই ব্যক্তি হওয়ায় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে এক ব্যক্তির হাতে।
আগামীর চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সামনে এখন একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থায় সেসব অগণতান্ত্রিক চর্চা বহুদিন থেকে প্রচলিত আছে তাকে নির্মূল করা। এসব চর্চা পরিহার করতে না পারলে আমরা একটি জবাবদিহিমূলক রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হতে পারব না।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা। একটি সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনব্যবস্থায় ফিরে আসতে হলে তাকে অর্থ ও পেশিশক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অবাধে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
অর্থবহ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা, জনগণের মুক্ত সমাবেশের অধিকার এবং একটি সত্যিকারের স্বাধীন বিচারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুষ্ঠু শাসন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশনসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে হবে এবং বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে হবে।
এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘বিজয়ী সবকিছু পাবে, পরাজিত সব হারাবে’—এই সংস্কৃতি পরিত্যাগ করতে হবে। এই মনোভাবই বাংলাদেশের রাজনীতিকে সংঘাতময় ও একপক্ষীয় করে তুলেছে, পরাজিত দলকে কোণঠাসা করেছে এবং যুক্তিসংগত আলোচনা ও মতবিনিময়ের জায়গা সংকুচিত করেছে।
গণতন্ত্র শুধু নির্বাচন নয়, বরং এটি একটি প্রক্রিয়া, যা জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে। এর জন্য টাকার প্রভাব ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে, যাতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো আর কেবল এলিট শ্রেণির কবজায় না থাকে। সংসদকে দলীয় সংঘর্ষের মঞ্চ বানানোর পরিবর্তে জাতীয় সমস্যা সমাধানের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সম্ভাবনা অনেকাংশে নির্ভর করে বর্তমানে রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতারত বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির ওপর। তারা যদি সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হয়, তা হলেই আমাদের গণতন্ত্রের পথের নতুন যাত্রার পথ সুগম হবে।
অধ্যাপক ড.
রওনক জাহান, ডিস্টিংগুইশড ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)
(৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের উদ্যোগে রাজনীতি, সমাজ ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কনফারেন্সে দেওয়া বক্তৃতার সংক্ষেপিত অনুবাদ)
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ সনব যবস থ র গণত ন ত র ক র ব যবহ র কর গণতন ত র র র র জন ত ক ন শ চ ত কর ব যবস থ র ক র জন ত দল গঠন ১৫ বছর পরবর ত ন কর ছ কর ছ ল ন র জন ন র পর ব রব র পর জ ত ত হয় ছ র জন য ত কর ছ আম দ র ন করত ব এনপ ত করত সমর থ গঠন র ক ষমত আইন ও র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে যত দেরি, ক্ষতি তত বেশি: আমীর খসরু
নির্বাচনে যত দেরি হবে, দেশ তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, নির্বাচন যত দেরি করবে, দেশ তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেশের দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি দিন দিন খারাপ হচ্ছে, সেটা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
আজ সোমবার জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের নবনির্বাচিত কমিটিকে নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা মনে করি, দেশের মানুষের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে দ্রুততম সময়ে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনতে হবে। একেকটা দিন যাচ্ছে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যতীত, একেকটা সমস্যা বাড়ছে। এর থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো গণতান্ত্রিক অর্ডারের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করা।’ তিনি বলেন, দায়বদ্ধ সরকার, যাদের পলিটিক্যাল ওয়েট থাকবে, যাদের পলিটিক্যাল মোবিলাইজেশন ক্যাপাসিটি থাকবে, যাদের পেছনে জনগণের সমর্থন থাকবে, তারাই এ সমস্যার সমাধান করতে পারে।
বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, পুলিশ, র্যাব ও সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো কিছুর সমাধান করতে পারবেন না।
নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে সম্ভব কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, নির্বাচন জুন মাসের মধ্যে সম্ভব। নির্বাচন কমিশন যেটা বলছে, তাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে কোনো সন্দেহ প্রকাশ করছে না। নির্বাচনের বিষয়টা সরকারকে বলতে হবে। সরকারের পলিটিক্যাল উইল (রাজনৈতিক ইচ্ছা) থাকতে হবে, ইচ্ছা থাকতে হবে এবং সেটার অপেক্ষায় জনগণ আছে।
এর আগে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কর আইনজীবী ফোরামের নবনির্বাচিত নেতারা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, কর আইনজীবী ফোরামের সভাপতি মাহবুবুস সালেকীন, সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের মেসবাহ উপস্থিত ছিলেন।