টেলিভিশনে রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠান দেখেন অনেকেই। অনুষ্ঠানে রান্না করা খাবার দেখতে যতই লোভনীয় হোক না কেন, তা চেখে দেখা আর হয়ে ওঠে না। আর তাই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক বা অতিথিদের বলা কথাই বিশ্বাস করতে হয়। তবে ভবিষ্যতে টেলিভিশনের পর্দায় দেখানো খাবারের স্বাদ ঘরে বসেই পরখ করা যাবে। শুনতে অবাক লাগলেও দূর থেকে খাবারের স্বাদ নেওয়ার অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক।

গবেষকদের তথ্যমতে, ই-টেস্ট নামের সিস্টেমটি খাবারের স্বাদ বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে ধারণ করে এবং তা বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে একইভাবে প্রকাশ করে। সেন্সরভিত্তিক এই বৈদ্যুতিক সংকেত মুখের ভেতর থাকা যন্ত্রের মাধ্যমে লবণাক্ততা, টক, মিষ্টি, তেতো স্বাদ তৈরি করতে পারে। ই-টেস্ট সিস্টেমের মাধ্যমে খাবারের স্বাদ শনাক্তের জন্য ব্যবহারকারীদের নিচের দাঁতে যুক্ত করতে হবে বিশেষ ধরনের একটি যন্ত্র। এই যন্ত্র বৈদ্যুতিক সংকেত পর্যালোচনা করে খাবারের স্বাদভেদে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক উপাদান বা জেল মুখের ভেতর নিঃসরণ করবে। এর ফলে হাজার মাইল দূরে থাকা খাবারের স্বাদ বোঝা যাবে।

গবেষণাগারে চালানো পরীক্ষায় ১৬ জন অংশগ্রহণকারী এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিশ্চিত করেছেন। খাবারের বিভিন্ন স্বাদের সংমিশ্রণ বুঝতে পারার পাশাপাশি কেক, ভাজা ডিম, মাছের স্যুপ ও কফির স্বাদও সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পেরেছেন তারা। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স অ্যাডভান্সেসে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকদের দাবি, নতুন এই প্রযুক্তি অনলাইন কেনাকাটা, অনলাইন শিক্ষা, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও সংবেদনশীল বিভিন্ন পরীক্ষার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের পুনর্বাসনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এই প্রযুক্তি।

সূত্র: ডেইলি মেইল

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সাড়া ফেলেছে প্রদীপ বিশ্বাসের কচুরিপানা কাটার যন্ত্র

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার প্রদীপ বিশ্বাস দেশে প্রথম শেওলা ও কচুরিপানা কাটার যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন। যে যন্ত্র ১০০ জন শ্রমিকের ১ মাসের কাজ করতে পারে মাত্র একদিনে। ইন্টারনেটে এ যন্ত্র দিয়ে কচুরিপানা কাটার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

ডিঙ্গি নৌকার ওপর বিশেষ কায়দায় ইঞ্জিনসহ অন্যান্য উপকরণ বসিয়ে কচুরিপানা কাটার মেশিন আবিষ্কার করা হয়েছে। মেশিন চলছে আর কচুরিপানা কেটে দুই পাশে পড়ছে। ফাঁকা হয়ে যাওয়া কচুরিপনাভর্তি জলাশয়ের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলছে ডিঙ্গি নৌকা।

প্রদীপ বিশ্বাসের তৈরিকৃত যন্ত্র গোপালগঞ্জ পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কিনে নিয়ে গেছে। দেশের নানা প্রান্ত হতে যোগাযোগ করে মেশিন ভাড়া, কেনা বা তৈরির অর্ডার পাচ্ছেন তিনি।

প্রদীপ বিশ্বাস যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কুচলিয়া গ্রামের মৃত. প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে। বাবা ছিলেন অভয়নগর উপজেলার জুটমিলের মেকানিক। বাবার হাত ধরে এ পথে আসা প্রদীপ বিশ্বাসের। সুন্দলী বাজারে কুচলিয়া অংশে রয়েছে প্রদীপ বিশ্বাসের ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ।

সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালিন বাবা প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাসের হাত ধরে মেকানিক পেশায় আসেন প্রদীপ বিশ্বাস। যশোর সদর হতে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দলী বাজারে গেলে দেখা যায়, নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘কুচলিয়া পিকেবি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক’-এ বসে একমনে কাজ করছেন তিনি।

কচুরিপানা কাটা যন্ত্র বিষয়ে জানতে চাইলে প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলের মানুষ। বিল বছরের ৯ মাস পানির নিচে থাকে। ফলে জলাশয় কচুরিপানায় ভর্তি থাকে। ভবদহের প্রভাবে এ অঞলের নদী-খালে পলি জমায় নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় কচুরিপানা জন্মায়। এতে করে খাল-বিল ও নদীতে নামা কঠিন হয়ে পড়ে। মূলত এই কচুরিপানা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করার চিন্তায় আমার এ মেশিন তৈরিতে নেমে পড়া।’’

তিনি জানান, দুই বছর আগে ২২ হর্স-পাওয়ারের ইঞ্জিন, এঙ্গেল, পাত, কাঠ, চেইন, পেনিয়াম, গিয়ারবক্স, প্লেনসিড ও ১৯টি বিচালি কাটা ছুরি দিয়ে যন্ত্র বানালেও ঘন কচুরিপানা কাটতে গেলে মেশিন বন্ধ হয়ে যেত। এরপর ডিঙ্গি নৌকা চালাতে ১১ হর্সপাওয়ার ও কচুরিপানা কাটতে ২২ হর্সপাওয়ারের দুটি ইঞ্জিন, ৯টি ছুরি পাতের মধ্যে বিশেষ কায়দায় সেট করে যন্ত্রটি বানানো হয়। প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় করে মাসখানেক কাজ করে তৈরিকৃত যন্ত্র কচুরিপানা কাটার উপযোগী হয়। 

তার যন্ত্র দিয়ে কুচি কুচি করে কাটা কচুরিপানা জৈব সার তৈরি সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।  প্রদীপ বিশ্বাসের একমাত্র সন্তান জনতা ব্যাংকে কর্মরত রণজিত বিশ্বাস জানান, সরকারি-বেসরকারি পর্যায় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ ধরনের উন্নতমানের যন্ত্র তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি করা সম্ভব।
 

ঢাকা/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ