১৫ ফেব্রুয়ারি সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সূচনা বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, পরে তাদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক হবে। চলতি মাসের প্রথমার্ধে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা শুরু করবে বলে ৪ মার্চ প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা যায়। অবশ্য এর আগে কমিশন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর বিষয়ে দলগুলোর কাছ থেকে মতামত নেবে। বিলম্বে হলেও সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে সংস্কারপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে জুলাই সনদ তৈরির কথা বলা হয়েছিল, যার ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। এর অংশ হিসেবে কমিশন সংস্কার প্রস্তাবের মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে একটি ছক তৈরি করছে। সেখানে প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে দলগুলোর কাছে সুনির্দিষ্ট মতামত চাওয়া হবে। কোনো সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না এবং সেটি কবে নাগাদ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন (নির্বাচনের আগে বা পরে) বলে মনে করে—এসব বিষয়ে দলগুলো দেবে। এরপর দলগুলোর মতামত পর্যালোচনা করে আলোচনা শুরু হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের মতো করে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করছে। বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপি দলীয়ভাবে আলাদা সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য ছয়টি কমিটি গঠন করেছিল। সংশ্লিষ্ট কমিটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছে। ‘রাষ্ট্র সংস্কারে’ ৩১ দফা প্রস্তাবকে প্রাধান্য দেবে তারা। জামায়াতে ইসলামীও ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন, না জাতীয় নির্বাচন আগে—এটা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক আছে। নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বেশ কিছু দল স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার পক্ষপাতী। অন্যদিকে বিএনপি ও বাম গণতান্ত্রিক জোট সবার আগে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা জাতীয় নির্বাচনকে নিশানা করে কার্যক্রম চালাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে একাধিকবার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছেন। এই সময়সীমা নিয়ে কোনো দলের বড় ধরনের আপত্তি আছে বলে মনে হয় না। তবে তারা নির্বাচনের নির্দিষ্ট রূপরেখা চায়। আমরা মনে করি, সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শুরু হলে অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত পাওয়ার পর ১০-১১ মার্চ নাগাদ আলোচনা শুরু করা যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

তাঁর বক্তব্যে সরকারের অবস্থান অনেকটা পরিষ্কার। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য আছে, সেসব বিষয়ে খুব আলোচনার প্রয়োজন হবে না। তবে যেসব বিষয়ে তাদের মধ্যে মতানৈক্য আছে, সেসব বিষয় সংলাপে গুরুত্ব পাওয়ার কথা। সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে যে ধোঁয়াশা আছে, আলোচনার মাধ্যমে তা কেটে যাবে আশা করি। যত দ্রুত সম্ভব আলোচনা শুরু হোক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মত মত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই: আমীর খসরু

শেখ হাসিনার বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক নেই, নির্বাচনেরও কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিচার চায় না এমন লোক বাংলাদেশে কে আছে আমার জানা নেই।... আমরা আইনের শাসনে যদি বিশ্বাস করি, বিচারিক প্রক্রিয়া চলছে, চলবে। সেটাতে শেখ হাসিনার শাস্তি তখন হবে, তার পরেও হবে। তাঁর অনেকগুলো মামলা আছে, বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটা পর একটার সমাধান হতেই থাকবে।’

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে জাহাজশিল্পের এক সেমিনারে অংশ নেওয়া শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ কথাগুলো বলেন। বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) এ আলোচনার আয়োজন করে।

উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকার রায়েরবাজারে অভ্যুত্থানের সময় শহীদ হওয়া ছাত্র-জনতার কবর জিয়ারত করতে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। এরপর দলটির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছিলেন, ‘যত দিন না পর্যন্ত খুনি হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে দেখছি, তত দিন যেন কেউ ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে।’

সারজিসের ওই বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে আমীর খসরু বলেন, ‘আজকে এটার জন্য হবে না নির্বাচন, কালকে আরেকটার জন্য হবে না, পরশু আরেকটার জন্য হবে না, এ রকম কত কথাই তো শুনছি। এই সব কথাবার্তা বলে নির্বাচনী ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পিছিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, এটা পরিষ্কার কথা।’

গত ১৬ বছর নির্যাতিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু হবে, বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবে, দল গঠন করতে পারবে, তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে, তাদের মতামত জনগণের কাছে নিয়ে যেতে পারবে। সুতরাং যেকোনো দল তাদের মতামত নিয়ে আসতে পারে।

আমীর খসরু বলেন, আগে ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসতে হবে… এরপর যেকোনো বিষয় সংসদে আলোচনা হবে, বিতর্ক হবে, তারপর সংসদে পাস হবে। সোজা কথা, ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব সিদ্ধান্ত আসবে সেখানে কারও তো কোনো সমস্যা নেই; কিন্তু আমি এটা প্রস্তাব করছি, এটা হতে হবে, এটা করতে হবে, এ ধরনের মনমানসিকতা যদি থাকে, তাহলে তো আবার শেখ হাসিনার কথা মনে পড়ে যায়। ঐকমত্য হলে ভালো কিন্তু ঐকমত্য না হলে আপনাকে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া পথ নেই।

বিএসবিআরএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ইয়াসমীন সুলতানার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন, উপ-রাষ্ট্রদূত খিজস উউস্ট্রা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রোগ্রাম ম্যানেজার হুবার্ট ব্লুম, জাইকার শিপ রিসাইক্লিং উপদেষ্টা ওকামোটো আকিরা, বিএসবিআরএর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শওকত আলী চৌধুরী, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী চৌধুরী, চট্টগ্রাম শ্রমিক দলের এএম নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনার বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই: আমীর খসরু
  • জাতীয় ঐকমত্য কমিশন: সংস্কার নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে শিগগির আলোচনা
  • ‘জুলাইয়ের নারীরা’ কোথায় হারালেন?