আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হলেও পুরোনো বন্দোবস্ত এখনো থেকে গেছে। দেশের আনাচকানাচে ক্ষমতাচর্চা ঠিকই চলছে, শুধু মানুষগুলোর রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন হয়েছে। এমনকি অনেক জায়গায় এমন ঘটনাও ঘটছে, যা আগে ঘটেনি। যেমনটি আমরা নিঝুম দ্বীপে দেখলাম। ২০-৩০ বছর ধরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা জেলেকেও এখন আর নদীতে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর ওপর জুলুম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ এলাকার মেঘনা নদীতে জেলেরা মাছ ধরেন। নদীর একেক জায়গা একেকজন জেলের জন্য নির্দিষ্ট করা আছে। এমনটি কেউ নির্দিষ্ট করে দেয়নি, জেলেদের মধ্যে এক প্রকার অলিখিত সমঝোতা। কিন্তু দ্বীপের অনেক জেলেকে তাঁদের সেই নির্দিষ্ট করা জায়গায় মাছ ধরতে দেওয়া হচ্ছে না। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের লোকজন জেলেদের মাছ ধরার জায়গাগুলোতে নিজেদের দখলদারি জারি করেছেন।

জেলেরা মাছ ধরতে গেলে তাঁদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। হামলার শিকার জেলে বেলাল মাঝি বলেন, ৩০ বছর ধরে নদীতে মাছ ধরেন একটি নির্দিষ্ট এলাকায়। গত ১১ জানুয়ারি তাঁর নৌকায় হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা তাঁর নৌকায় থাকা লোকজনকে পিটিয়ে আহত করে। এরপর বলা হয়, ওই এলাকায় মাছ ধরতে হলে দুই লাখ টাকা দিতে হবে। হামলার ভয়ে তারা এখন আর নদীতে নামছেন না। মাছ ধরতে না পেরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সীমাহীন কষ্টে পড়েছেন তাঁরা।

নদী দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন স্থানীয় বিএনপি ও যুবদল নেতারা। তাঁদের দাবি, এত বছর আওয়ামী লীগ ছিল ক্ষমতায়। আগে বিএনপির সমর্থক মাঝিরা নদীতে মাছ ধরতে পারেননি। এমন জেলেদের তাঁরা মাপজোখ করে নদীর অংশ বুঝিয়ে দিয়েছেন। নদী কেনাবেচা হয়েছে কি না, তিনি জানেন না।

ভুক্তভোগী জেলেদের বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁরা ২০-৩০ বছর নিজেদের জায়গায় মাছ ধরে আসছিলেন। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল ১৫ বছর। এতেই বোঝা যাচ্ছে, বিএনপি ও যুবদল নেতাদের বক্তব্যে সত্যতা না থাকার বিষয়টি। তা ছাড়া বিএনপি-সমর্থক জেলেদের সুযোগ করে দিতে অন্য জেলেদের উচ্ছেদ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এখানে স্পষ্ট দখলদারি কায়েম হয়েছে বলা যায়।

অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিএনপি দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নিলেও ভুক্তভোগী জেলেরা এখনো নদীতে নামতে পারছেন না। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসন মানুষের ওপর এ জুলুম প্রতিহত করবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ছ ধরত ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

নাটোরে যুবকের দুই হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন 

নাটোরের সিংড়া উপজেলায় ইসরাফিল নামে এক যুবককে কুপিয়ে দুই হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করেছে দুর্বৃত্তরা। 

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সিংড়া উপজেলার হাতিয়ানদহ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ইসরাফিল ওই এলাকার তাইজুল ইসলামের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ইসরাফিলের বাবা তাইজুল ইসলাম বহুদিন পূর্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সিংড়া উপজেলার হাতিয়ানদহ এলাকায় এসে বাড়ি করেন। তারা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বৃহস্পতিবার সকালে এলাকাবাসী ইসরাফিলের চিৎকারে এগিয়ে গিয়ে তাকে রাস্তার ধারে দুই হাত কাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতাল এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নাটোর সদর হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. সুব্রত বলেন, “রোগীর দুই হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন ছিল। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয়েছে বলে মনে হলো। সকাল ৭টার দিকে রোগীকে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেই সময় তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।”

সিংড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসমাউল হক জানান, ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, “রাজনৈতিক কোনো বিষয় নিয়ে ঘটনাটি ঘটেনি। পরকীয়া সংক্রান্ত একটা বিষয় থাকতে পারে, সেই বিষয়টাও যাচাই-বাছাই করছি। যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদেরকে শনাক্তসহ গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলমান রয়েছে।”

ঢাকা/আরিফুল/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ