১৪ দলের শরিকরা দুঃখ প্রকাশ করে ফিরতে চায় রাজনীতিতে
Published: 5th, March 2025 GMT
আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনামলের দুর্নীতি-লুটপাটসহ নানা অপকর্ম এবং জুলাই-আগষ্ট গণহত্যার দায় নিতে নারাজ ১৪ দলের শরিকরা। তারা ক্ষমতাচ্যুত দলটির রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে দুই দশকের পথচলার জন্য ‘দুঃখ প্রকাশ’ করে স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরতে চায়। জোটের বেশির ভাগ শরিক দলের নেতাদের প্রত্যাশা, পরিস্থিতির উন্নতি হলে তারা রাজনীতির মাঠে পুরোমাত্রায় সক্রিয় হতে পারবেন।
১৪ দলের কয়েকজন নেতার ভাষ্য, কেবল জোটের শরিকানা এবং দু-একজন নেতার সরকার ও সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছাড়া গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা ছিল না। তারপরও আওয়ামী লীগের সঙ্গে অতীত সম্পর্কের কারণে এখনও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে তাদের।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি-নেতা গ্রেপ্তার হন। অনেকে বিদেশেও পালিয়ে যান। সারাদেশে মন্ত্রী-নেতাদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়। দলটির সিংহভাগ নেতাকর্মী এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন।
একই সময় থেকে ‘ফ্যাসিবাদের সহযোগী’ আখ্যা পাওয়া ১৪ দলের শরিক দলগুলোও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। জোটের দুই শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু জুলাই-আগস্টের একাধিক হত্যা মামলার আসামি হয়ে কারাগারে আছেন। এরই মধ্যে গণঅভ্যুত্থানের শরিক সিংহভাগ রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-জনতার ভেতর থেকে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দলকেও নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এটিও জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
১৪ দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ১৪ দলের কয়েকটি শরিক দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম কিছুটা চলমান। ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ ঘরোয়া বৈঠক, আলোচনা সভা এবং বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে সক্রিয় রয়েছে। দু’ভাগে বিভক্ত গণতন্ত্রী পার্টির মধ্যে আরশ আলীর নেতৃত্বাধীন অংশটি জাতীয় দিবসগুলোর কর্মসূচিতে দলীয় ব্যানার ও নেতাকর্মীসহ অংশ নিয়েছে। আরেক শরিক তরীকত ফেডারেশন সময় সময় বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। বাসদ (রেজাউর) ঘরোয়া বৈঠক করে শিগগিরই দলের জেলা-উপজেলা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বাকি সাতটি শরিক দল জাতীয় পার্টি (জেপি), ন্যাপ, সাম্যবাদী দল, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং গণতন্ত্রী পার্টি (শাহাদাৎ) এখন পর্যন্ত প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোনো তৎপরতাই দেখাতে পারছে না। তবে শরিক দলগুলোর নেতারা নিজেদের মধ্যে টেলিফোন যোগাযোগ অব্যাহত রেখে রাজনীতিতে ফেরার কৌশল ঠিক করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
১৪ দলের কয়েক নেতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিয়ে দেশের মানুষের কাছে দুঃখ প্রকাশের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন। সমকালের সঙ্গে আলাপকালে জোটের একাধিক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের কোনো অস্তিত্বই এখন আর নেই। বিদ্যমান রাজনীতিতে জোটটির প্রাসঙ্গিকতাও নেই। এখন দলীয় আদর্শ নিয়ে স্বাভাবিক রাজনীতি করতে চান তারা। তবে আওয়ামী লীগের মিত্র জোটে থাকার বিষয়টি তাদের জন্য কাল হয়ে আছে।
আক্ষেপের সুরে এই নেতারা বলেন, সরকার পতনের আগে শেখ হাসিনার ডাকে ১৪ দলের যেসব নেতা গণভবনে জোটের বৈঠকগুলোতে যোগ দিয়েছিলেন, তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সংকট সমাধানের পরামর্শ দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বা তাঁর সরকার জোট শরিকদের সেই সৎ পরামর্শও আমলে নেননি।
জানতে চাইলে গণতন্ত্রী পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ডা.
বাসদের (রেজাউর) আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান বলেন, ‘গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ যেসব অপকর্ম করেছে, তার দায়ভার সম্পূর্ণ তাদেরই। কোনো অবস্থায়ই ১৪ দল শরিকদের নয়। তারপরও এই যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একই জোটে ছিলাম, সে জন্য আমাদের দল দেশের জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে রাজনীতির স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হতে চায়।’
অন্য কয়েকটি শরিক দলও এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বলে জানান রেজাউর রশীদ খান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ১৪ দল গণতন ত র র জন ত ত র জন ত ক র ক দল আওয় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার পথরেখা
আন্দোলনের রাজনীতি থেকে দল গঠন
১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পরে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অবাধ, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ দুবার এবং বিএনপি দুবার সরকার গঠন করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ দুই দল তাদের ক্ষমতার মেয়াদে গণতান্ত্রিক চর্চার উন্নয়নে লক্ষণীয়ভাবে কোনো কাজ করেনি;বরং তারা নিজেদের ক্ষমতাকে সংহত করা এবং বিজয়ীর জন্যই সব—এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি চিরস্থায়ী করার জন্য ব্যস্ত ছিল।
বিএনপির কর্মীদের অনেকে দখলদারি ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন। যার ফলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে পুরোনো অভ্যাসের মৃত্যু সহজে হয় না। এ ধরনের অভিযোগে অনেককে বহিষ্কার করা সত্ত্বেও এর দৌরাত্ম্য কমানো যায়নি।দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে জুলাই গণ–অভু৵ত্থানের পরে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির সরকার গঠন করার মতো সম্ভাবনাও অনেকে দেখছেন। সাধারণভাবে জনগণের মনোযোগ এদিকে নিবদ্ধ যে তারা উন্নততর গণতন্ত্রের চর্চাকারী হিসেবে ফিরে আসবে কি না। গণ–অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র, সরকার ও গণতন্ত্রচর্চা নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেক বক্তব্য মানুষের মধ্যে সমাদৃত হয়েছিল। মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতির ফলে ক্ষমতার যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সে জায়গা দখল করেছেন বিএনপির কর্মীরা। এই শূন্যতার সুযোগ নিয়ে বিএনপির কর্মীদের অনেকে দখলদারি ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন। যার ফলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে পুরোনো অভ্যাসের মৃত্যু সহজে হয় না। এ ধরনের অভিযোগে অনেককে বহিষ্কার করা সত্ত্বেও এর দৌরাত্ম্য কমানো যায়নি। স্থানীয় পর্যায়ের মানুষদের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ আছে। সাধারণ মানুষের এই অসন্তোষ বিএনপিকে আমলে নিতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস যে সংস্কারপ্রক্রিয়া শুরু করেছেন, ছাত্ররা সেটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে এই সংস্কারপ্রক্রিয়াকে তাঁরা এগিয়ে নিতে চান। এ লক্ষ্যে ছাত্রদের একটি অংশ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যেসব শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, তারা একটি নিজস্ব রাজনৈতিক ধারণা সামনে এনেছে। সেখানে তরুণ প্রজন্ম নিজেদের অবস্থান দৃঢ়ভাবে তুলে ধরতে শুরু করেছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নিজেদের অগ্রণী ভূমিকার জন্য ছাত্ররা শ্রদ্ধা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন, বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে। পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা যাতে স্থায়ীভাবে গেড়ে বসতে না পারে, সে জন্য তাঁরা যৌক্তিকভাবেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। একটি নতুন, আরও ন্যায্য ও সমতাভিত্তিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা নিশ্চিত করতে তাঁরা সত্যিকারের সংস্কার বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে মানুষের আনন্দ–উল্লাস। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকেলে সংসদ ভবন এলাকায়