Prothomalo:
2025-03-05@01:36:00 GMT

নামাজ: দাসের মহিমা

Published: 5th, March 2025 GMT

নামাজ পড়া খুব সহজ একটি কাজ। গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নেই, অর্থ ব্যয়ের ভয় নেই। একজনের নামাজের জন্য মাত্র কয়েক ফুট জায়গার দরকার হয়, জায়নামাজেরও দরকার নেই। দরকার পবিত্র জায়গা, তবে অপবিত্র জায়গার চেয়ে পবিত্র জায়গাই আমাদের থাকে বেশি।

নামাজ ইসলামের একেবারে প্রাথমিক একটি ইবাদত। ইবাদত অর্থ বন্দেগি, মানের বান্দার কাজ। বান্দা মানে গোলাম, দাস। নিজেকে মুসলমান মেনে নেওয়ার অর্থ হলো, আল্লাহর বান্দা হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া। নিজেকে আল্লাহর দাস ভাবা। নামাজ পড়া মানে এই দাসত্বকে দৈহিক বিভিন্ন ভঙ্গিমায় প্রকাশ করা।

মুজিব পরদেশীর গানে আছে, ‘হইতাম যদি দেশেরও দেশি, ওই চরণে হইতাম দাসী গো।/ আমি দাসী হইয়া সঙ্গে যাইতাম গো, বন্ধু, শুনতাম না কারও মানা।’ এমন বহু গান-কবিতায় এবং বহু বাস্তব ও পরাবাস্তব গল্পেও আমরা প্রিয়জন-প্রেয়সীর দাসানুদাস হওয়ার আকুতির কথা শুনি। তো প্রেমের মোহে মানুষ যেখানে তুচ্ছ মানুষের দাসী হতে রাজি, সেখানে মহান প্রভু, যাকে ভালোবাসা শুধু বিবেকের দাবি বলে জটিল করা যায় না, বরং ভালোবাসাটা স্বভাবতই এসে থাকে, তার দাসত্ব বললে কঠিন মনে হবে কেন?

আরও পড়ুনতাহাজ্জুদ নামাজের উপকার০১ জানুয়ারি ২০২৫

এই যে ধরুন, আজ দুপুরে মসজিদে নামাজে দাঁড়িয়েছি, জানালা গলে রোদ আসছে, শেষ শীতের রোদ। আরামে উষ্ণতায় ভালো লাগা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেহে। কী মনে হয়, ভালোবাসা জাগছে না? হৃদয়ের অন্দর থেকে উথলে উঠছে না প্রেম? প্রভুর সঙ্গে এই প্রেমের অনুভূতি কাউকে শেয়ার করা যায় না। নামাজ মুমিনের মিরাজ। প্রভুর সঙ্গে কথা বলার, দেখা-সাক্ষাৎ করে আরজি পেশ করার মওকা। উপরন্তু নামাজের পার্থিব উপকারিতাও আছে অযুত। স্বাস্থ্যের ও মনের উপকারিতা ছাড়াও অলৌকিক বহু কিছু লাভ করার প্রতিশ্রুতি আছে।

তারপরও যারা নামাজকে হেলা করেন, অল্প একটু ‘অসুবিধা’, ধরুন, গাড়িতে উঠতে পাঁচ মিনিট দেরি হবে, কাঁচা ঘুম ভেঙে যাবে, ভাল্লাগছে না এখন ইত্যাকার নানান অজুহাতে নামাজ ছেড়ে দেন অহরহ এবং নিজেকে ভালো মুসলিম দাবি করেন, ইসলামের বড় বড় খেদমতের জন্য হাপিত্যেশ করেন, গলাবাজি করেন রাস্তায়, মিছিলে, টেলিভিশনে, তারা কি প্রকারান্তরে হাস্যকর দাবিটাই করছেন না?

আরও পড়ুনজামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব০৫ জানুয়ারি ২০২৫

এত সহজ, এত ভালো, এত নিষ্কণ্টক একেবারে প্রাথমিক কাজটা আপনি করছেন না, আবার আফগান-ফিলিস্তিন টাইপের বিরাট বিরাট শিখরসম ঝুঁকির কথা বলেন, অর্থসংকটের কারণে বিরাট ইসলামি সেবা আঞ্জাম দিতে পারছেন না বলে আফসোস করেন—আপনি কেন সহজ নামাজ পড়ছেন না, বলুন তো? তেমন অর্থসুবিধা পেলেও কি আপনি দাসত্বের কাজ করবেন? নাকি করবেন পেট পোরার ধান্দা। কঠিন পরিস্থিতি এলে আপনি কাপড় সামলে পালাবেন আর বলবেন জান বাঁচানো ফরজ। অর্থাৎ আর যাই হোক, পার্থিব কিংবা পারলৌকিক যে কাজই আপনি করেন, ওটা আল্লাহর জন্য করছেন না, এটা নিশ্চিত। শেখ সাদি বলেছেন, যে নামাজ পড়ে না, তাকে ঋণ দিয়ো না। যে আল্লাহর সহজতম হক আদায়ে যত্নবান নয়, সে তোমার হক আদায়ের প্রতি মোটেও ভ্রুক্ষেপ করবে না ।

ড.

আয়েয আল কারনি আসআদু ইমরাআতিন ফিল আলাম গ্রন্থে লিখেছেন, যে ফজর নামাজ পড়েনি, তার তো দিনের সূচনা হয়েছে ব্যর্থতা দিয়ে, সে কী করে সফলতার আশা করতে পারে? আবার শুধু ওঠবস করা তো যথেষ্ট নয়—নামাজে নিমগ্নতা জরুরি। কদ আফলাহাল মু’মিনুন...সেই মুমিনরা সফল হয়ে গেছে, যারা তাদের নামাজে বিনয়-নম্র। (সুরা মমিনুন, আয়াত: ১-২)

আরও পড়ুনসিজদার যত উপকারিতা১৩ জানুয়ারি ২০২৫

যিনি নামাজ পড়েন, তিনি নিমগ্ন হয়েই পড়েন। যিনি নামাজে নিমগ্ন থাকেন না, বিনয় ও যত্ন যার নামাজে নেই, তিনি আসলে কেবল অভ্যাসের চর্চা করেন, নামাজ পড়েন না । কাকের মতো ঠোকর দেওয়া নামাজের কথা না-হয় বাদই দিলাম। ফাওয়াইলুল্লিল মুসল্লিন...দুর্ভোগ সেসব নামাজির, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে বেখবর। (সুরা মাউন, আয়াত: ৪-৫)

আশ্চর্যের বিষয় হলো, একজন সাধারণ মুসলিম নামাজের প্রতি যতটা যত্নবান, শিক্ষিত মুসলিমদের আকছার ততটা নয়। পাশে মসজিদ থাকা সত্ত্বেও অনেক আলেম বাসা-বাড়িতে কিংবা নিজের কর্মস্থলে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন, জামাত তরক করেন অহরহ। অথচ একজন ফুটপাথের দোকানিকে দেখা যাবে বছরভর তিনি জামাত ত্যাগ করেন না।

সাধারণ একটি কাজ, যা করতে মোটেও কষ্ট নেই, এমনকি অফিস যেতে বাসে চড়তে যতটুকু হাঙ্গামা তা-ও নেই, কাজের মধ্যে একটু বিরতি, অবসাদে একটু বিশ্রাম, পার্থিব ঝঞ্ঝাট ছেড়ে মনন-মানসকে অপার্থিব আলোয় স্নাত করার আনন্দ, কিছুর কমতি নেই এখানে। বাতাসের মতো মুফত পাওয়া একটা বিশাল নেয়ামতই বটে। সম্ভবত এ কারণেই এত কিছুর পরেও যারা নামাজ পড়ে না, তাদের জন্য কঠোর সব হুঁশিয়ারি বার্তা এসেছে। সাহাবিরা নামাজ হেলাকারীকে মুনাফেক ভাবতেন। হাদিসে মুসলিম-অমুসলিমের তারতম্য দেখানো করা হয়েছে নামাজকে কেন্দ্র করে। ওমর (রা.) বলেছেন, যার নামাজ নেই, তার দীন নেই, ইসলামে তার কোনও স্থান নেই। নবীজি (সা.) জীবন-সায়াহ্নে খুশি হয়েছিলেন সাহাবিদের সারিবদ্ধ নামাজ দেখে। শেষ উক্তিও ছিল তার—নামাজ নামাজ...।

যুদ্ধকালেও বিশেষ পদ্ধতিতে নামাজ পড়তে হয়। সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকলেও নামাজ পড়া যায়। যতক্ষণ বিবেক-বুদ্ধি ঠিক আছে, ততক্ষণ নামাজ পরিত্যাগ করা যায় না। এতে কি প্রকারান্তরে এটাই ফুটে ওঠে না যে, নিয়মিত নামাজ ত্যাগ করার ফলে ধীরে ধীরে বুদ্ধির সুস্থতা হারিয়ে ফেলে মানুষ? নামাজ ত্যাগকারীকে আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী অভিশাপ দেয় বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। সুফিরা বলেন, তার চোখের দৃষ্টিও হয় অন্যের জন্য ক্ষতিকর।

আরও পড়ুনঅর্থ বুঝে নামাজ পড়ার ফজিলত১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নামাজির জন্য আরশের দুয়ার খুলে যায়। যার হৃদয়ে নামাজের ব্যাকুলতা থাকে, সে আল্লাহর প্রতিবেশিত্ব অর্জন করে, তাঁর পরিজনে পরিণত হয়। আকাশের বরকত তার জন্য উন্মোচিত হয়। প্রভু খুশি হন। তার সঙ্গে সংলাপ করেন নামাজেই। একেবারে কাছে এসে সাড়া দেন তার প্রতিটি প্রশ্নে ।

নামাজ আলো। অন্ধকার ঘরে যেমন আলো জ্বাললে ভেতরের সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায়, তেমনি নামাজের আলোয় অতীত জীবনের সকল ভুল-ভালো পরিষ্কার হয়ে ধরা দেয়। ভুলে অনুশোচনা তৈরি হয় এবং ভালো কাজের প্রেরণা ফিরে আসে। এইভাবে শুদ্ধতার দিকে এগিয়ে চলে নামাজি। ইন্নাস সালাতা তানহা...নামাজ অশোভন ও অনুচিত কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে তাকে। আত্মার প্রাচুর্য ও প্রশান্তিময় জীবন পেয়ে সে বিত্তবান মানুষেরও ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়।

বন্দরে, স্টিমারে, হাটে-বাজারে, যানবাহনে কাউকে নামাজের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে বললে কখনো না করে না কেউ। লোকজনের মধ্যে কেমন যেন কৌতূহল ও শ্রদ্ধা ভীতি উপচে পড়ে। নামাজ না পড়েও এক ধরনের ‘মুসল্লি’ ভাব তাদের মধ্যে বিরাজ করে। এতে করে প্রভুর প্রতি সম্মান বোঝা গেলেও প্রভুর দাসত্ব আদায় হয় না। নামাজ তো স্বর্গ-নরকেরও তোয়াক্কা করে না, সে শুধু প্রভুর সঙ্গে দাসের আলিম্পন হতে চায়। স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির প্রেম রচনা করতে চায়। নইলে নামাজ কেবল দৈহিক ব্যায়াম ছাড়া আর কোনো অর্থ বয়ে আনবে না।

আমাদের নিত্যদিনের যন্ত্রণা বিধুর জীবনে নামাজ আসুক শ্রাবণের মতো ঝর ঝর বর্ষা হয়ে, যেন সকল ক্লেদ-পঙ্কিলতা ধুয়ে নিতে পারে। আসুক শীতের কুয়াশা ভেদ করা সূর্যের মতো রংধনু হয়ে, যেন ব্যথার উপশমে উষ্ণতার উপাদান হয়, আসুক শরতের পেঁজা মেঘ আর কাশফুলের মুগ্ধতা নিয়ে, হেমন্তের মিষ্টি-মিঠাই আর বসন্তের ফুলেল উৎসব হয়ে। যেন গ্রীষ্মের প্রখরতার চেয়েও তেজস্বী হয় আমাদের নামাজ। সারা বছরের প্রতিটি দিন যেন আমরা নামাজের আস্বাদ নিয়ে বাঁচতে পারি। সময়ের মতো নামাজও হোক আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমিন।

আরও পড়ুনযেভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এল১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র র জন য ইসল ম উপক র

এছাড়াও পড়ুন:

লাহোরে দুই ‘চোকার্সে’র লড়াইয়ে আজ জিতবে কে

দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গেই বেশি যায় পরিচয়টা, যদিও তারা নিজেরা এই পরিচয়ে পরিচিত হতে চায় না কখনো। তারপরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আইসিসির বড় আসর মানেই দক্ষিণ আফ্রিকা ‘চোকার্স’, আসল সময়ে ভেঙে পড়া এক দল।

একই কথা যদি নিউজিল্যান্ডকে নিয়েও বলা হয়, খুব কি ভুল হবে! আসল সময়ে তাদেরও তো ভেঙে পড়তেই দেখা যায়। আজ লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। তাতে মুখোমুখি হচ্ছে বড় উপলক্ষে স্নায়ুচাপের রোগী হয়ে যাওয়া এই দুই দল।

এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা কেমন হচ্ছে, তা তো জানেনই। এক ভারত ছাড়া সব দলই যাযাবরের মতো। এভাবে পাকিস্তান–দুবাই করে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের দুই দল পরশু লাহোরে এসেছে আজকের ম্যাচের জন্য। কাল দুপুরে নিউজিল্যান্ড হালকা অনুশীলন করছে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে, সন্ধ্যায় মাঠে নেমেছে দক্ষিণ আফ্রিকাও।

দ্বিতীয় সেমিফাইনালের পিচ পরখ করে দেখছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ রব ওয়াল্টার

সম্পর্কিত নিবন্ধ