নিয়ম অনুযায়ী একজন আনসারের প্রতিদিন আট ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু জনবল সংকটে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। আনসারের তুলনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা পয়েন্টের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অন্তত ১৭ জন দ্বিগুণ সময় দায়িত্ব পালন করছেন। তারা এক শিফটের দায়িত্ব পালন শেষে অল্প সময়ের বিরতিতে পরের শিফটে যুক্ত হন। টানা দায়িত্ব পালনের ক্লান্তির কারণে রাতে অনেকে ঘুমিয়ে পড়েন। এতে বাড়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি।

প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম থাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে রাতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাঝুঁকি বাড়ছে। প্রায়ই চুরিসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সংকট কেটে যাবে।
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ রেঞ্জের ৯৪ আনসার সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। এর মধ্যে সাতজন কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরে গাড়ি পাহারার কাজে নিয়োজিত। ক্যাম্পাসে উভয় রেঞ্জের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) ও সহকারী প্লাটুন কমান্ডার (এপিসি) মিলিয়ে চারজন থাকেন তদারকির দায়িত্বে। বাকি ৮৩ জন বিভিন্ন পোস্টে (পয়েন্ট) দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে চক্রাকারে ছয় থেকে সাতজন ছুটিতে থাকেন। এতে প্রতিদিন দায়িত্ব পালনকারী আনসারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৬-৭৭ জন। অথচ তিন শিফটে অন্তত ৯৮টি পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করতে হয় নিরাপত্তাকর্মীদের।
অভিযোগ রয়েছে, শুধু দ্বিগুণ সময় দায়িত্ব পালনকারীরাই (ডাবল ডিউটি) নন, বিভিন্ন ভবন ও হলের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের অনেকে রাতে কাজ ফেলে ঘুমিয়ে কাটান। অনেক জায়গায় রয়েছে চৌকির ব্যবস্থা। অনেকে ঘুমানোর অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। শুধু রাতে নয়, দিনের বেলায়ও দায়িত্ব পালনে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে। 
ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল– অভিযোগ করে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের সজিব হোসেন বলেন, নিরাপত্তাকর্মীরা রাতে ঘুমিয়ে থাকায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দ্রুত এর সমাধান না হলে যে কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। 
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হল, আবাসিক এলাকা, প্রভোস্ট কোয়ার্টার ও কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি ছিনতাই ও মেয়েদের হলের পাইপ বেয়ে ওপরে ওঠা ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনের মতো ঘটনাও ঘটছে। ক্যাম্পাস বন্ধের সময় এসব ঘটনা বেশি দেখা যায়। গত বৃহস্পতিবারও শেখ হাসিনা হলসংলগ্ন দোকানে চুরি হয়েছে।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুল হক বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার এমন পরিস্থিতির কারণে ক্যাম্পাস বন্ধকালীন বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ও আবাসিক হলগুলোতে চুরি বেড়ে যায়। ফলে বন্ধের মধ্যে বাড়ি গেলেও শঙ্কার মধ্যে থাকতে হয় তাদের।

রমজান মাসে ক্যাম্পাস বন্ধের শুরুতেই চুরির ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তারা বলছেন, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অপরাধীরা যে কোনো কিছু ঘটাতে পারে।
প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম থাকায় সমস্যা হচ্ছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, অতিরিক্ত কাজের চাপ ও বিশ্রামের অভাবে অনেক আনসার সদস্যের পুরো রাত জাগা সম্ভব হয় না। তবুও এগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। যেসব জায়গায় চৌকি ছিল, সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাতে নিরাপত্তাকর্মীরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন কিনা, তা তদারকি করা হয়। টহলও বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা নেই।
প্লাটুন কমান্ডারদের এ বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড.

শাহীনুজ্জামান বলেন, কোনো আনসারকে ঘুমে পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ২৫ জন আনসার চেয়ে প্রশাসনকে নোট দেওয়া হয়েছে। সেটি সিন্ডিকেট হয়ে ইউজিসিতে গেছে। নতুন জনবল পেলে সংকট কেটে যাবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ আনস র

এছাড়াও পড়ুন:

পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা বেহাল

মা, শিশু ও প্রসূতিসেবায় সাফল্য দেখিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২০১২ ও ১৩ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে এবং ২০১৪ সালে জাতীয় পুরস্কার ও সনদ পায়। সেই প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যসেবা এখন বেহাল। চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের কারণে উপজেলায় সরকারিভাবে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া একমাত্র প্রতিষ্ঠানটিতে চিকিৎসা নিতে এসে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
উপজেলায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প ও ইপিজেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শত শত বিদেশি নাগরিক কর্মরত। প্রায়ই তাদের অনেকে চিকিৎসাসেবা নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক সংকটের কারণে তাদেরও সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে গুরুত্ব না দিলে তাদের কিছু করার নেই।
জরুরি চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন রোগী ফাতেমা খাতুন। তিনি জানান, দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। বাধ্য হয়ে অন্যত্র চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এক রোগীর স্বজন রাইদুল ইসলামের ভাষ্য, রোগীর প্রয়োজনে নার্সদের ডেকে পাওয়া যায় না। তাদের আচরণও ভালো নয়। রোগীদের দেওয়া খাবার নিম্নমানের।
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিসিন, গাইনি, কার্ডিওলজি, নাক-কান-গলার কনসালট্যান্টসহ ১১ পদের বিপরীতে দু’জন কনসালট্যান্ট আছেন। চিকিৎসা কর্মকর্তার ১৫ পদের স্থলে আছেন মাত্র আটজন। ২৮ পদের মধ্যে বর্তমানে ১২ জন চিকিৎসক রয়েছেন। নার্স ২৬ জন থাকার কথা থাকলেও আছেন ২২ জন। তাদের বিরুদ্ধেও রোগীর স্বাস্থ্যসেবা দিতে ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মীও নেই। এতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছে না। বহির্বিভাগে দিনে অন্তত ৫০০ রোগী সেবা নেন। ভর্তি থাকছেন ৬০ থেকে ৭০ জন। তাদের সেবা দিচ্ছেন মাত্র ১২ জন চিকিৎসক। চাপ সামলাতে নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারীদেরও হিমশিম খেতে হয়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ নাজনীন আফরোজ এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, জনবল সংকটে আমরাও সমস্যায় আছি। রূপপুর প্রকল্প, ইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার কারণে প্রচুর রোগীর চাপ থাকে। তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসকের প্রতিদিন নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাগজে ৫০ শয্যার হলেও ২৭ শয্যার জনবল দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। রোগী এলেই পাঠানো হয় (রেফার) পাবনা, রাজশাহী বা ঢাকায়। এসব সংকটের পাশাপাশি পুকুরের টেন্ডার, মসজিদের কমিটি, অ্যাম্বুলেন্সের গ্যারেজসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
অ্যাম্বুলেন্সচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স দরকার হলে আমাদের ডাক পড়ে। কিন্তু আমাদের হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশে নিষেধ করা হয়েছে। এখন ডাকলেও আমাদের রোগী পর্যন্ত যেতে দেরি হয়। এতে ভোগান্তি বেড়েছে। আর মসজিদের মুসল্লি শহীদুল ইসলামের ভাষ্য, মসজিদের কমিটি কর্তৃপক্ষ তাদের পছন্দমতো ব্যক্তি নিয়ে করেছেন।
বরাদ্দের খাবারসহ কেনাকাটা ও সেবার মান নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে রোগী ও স্বজনদের। অভিযোগ উঠেছে, পুকুরের টেন্ডার ও মসজিদে মুসল্লিদের মতামত উপেক্ষা করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ধরনের নানান সংকটে জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে পুরস্কারপ্রাপ্ত ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ভাষ্য, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সব জানেন। আর আরএমও দায় চাপান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ওপর।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আলী এহসান বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বাইরের অ্যাম্বুলেন্সের গ্যারেজ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন তারা। মসজিদের কমিটিতে অভ্যন্তরে বসবাসকারীদের ছাড়া বাইরের কাউকে রাখা হয়নি।’ অন্যান্য বিষয়ে আরএমওর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। 
আরএমও মো. সাহেদুল ইসলাম শিশির বিভিন্ন সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার।’ এ সময় তিনি ফোনে সব কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে সামনাসামনি কথা বলার পরামর্শ দেন।
রোগীর চাপ যে হারে বাড়ছে, তাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০০ শয্যার না করা গেলে সমস্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাশ। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক, কনসালট্যান্ট, নার্স, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর যেসব পদ শূন্য রয়েছে, সেগুলো পূরণ করা দরকার। এতে সেবার মান বাড়বে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেরিন একাডেমিতে চাকরির সুযোগ
  • দ্রুত দক্ষ জনবল নিয়োগ দিন
  • পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা বেহাল