৪৮ কোটির কাজ ভাগাভাগি বিএনপি নেতাদের
Published: 4th, March 2025 GMT
মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের নামে গত পাঁচ বছরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা লুটপাট ও ভাগাভাগি হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ধারাবাহিকতায় ভাগবাটোয়ারা হয়েছে প্রকল্পের ৪৮ কোটি টাকার কাজ। পার্থক্য হলো– আগে তিন জেলার আওয়ামী লীগের এমপি ও নেতারা ভাগাভাগি করলেও এবার বিএনপি, যুবদল নেতা ও সমন্বয়করা মিলে কাজের ভাগ নিয়েছেন।
জানা গেছে, এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে কৌশলে ভাগাভাগি হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের লাইসেন্সে কাজ নিয়েছেন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল থেকে শুরু করে সমন্বয়করা পর্যন্ত। কাজের বড় অংশ এবার বিএনপির লোকজন পেয়েছেন। এমনকি সমন্বয়কদের ম্যানেজ করে আওয়ামী লীগের
নেতারা কাজ পেয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি দপ্তরে চাকরি করেও কাজ পেয়েছেন কেউ কেউ।
কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সূত্র জানায়, সেচ প্রকল্পটি কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় বিস্তৃত। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রকল্পের উদ্দেশ্য পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এরই মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জব্দ করা হয়েছে আগের
কিছু নথিপত্র।
বিএডিসির অধীন মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০২০ সালে শুরু হয়। প্রকল্পে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৪৮ কোটি টাকা। বিগত চার অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। আর চলতি বছর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি টাকা। চলতি জুনে শেষ হবে প্রকল্পটি। কুষ্টিয়াসহ তিন জেলায় বিএডিসির তালিকাভুক্ত তিন শতাধিক লাইসেন্স আছে। যার ৯৯ ভাগই আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে।
শুরু থেকেই প্রকল্পটি ভাগাভাগির প্রকল্প হিসেবে পরিচিতি পায়। প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে মাহবুব আলমকে নিয়োগ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। সে সময় কাজ ভাগ করে দিতেন পিডি মাহবুব। কুষ্টিয়া সদরের সাবেক এমপি আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবউল-আলম হানিফ ও তাঁর ভাই আতাউর রহমান আতা, মেহেরপুরে সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও তাঁর ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুল এবং চুয়াডাঙ্গার সাবেক এমপি সেলুন জোয়ার্দ্দার ছাড়াও সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ভাগ নিতেন।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কুষ্টিয়ার মিরপুরের ঠিকাদার লালু মিয়া। তিনি প্রতিবছর একাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৪০ থেকে ৫০টি করে কাজ নিয়েছেন। চলতি বছরেও ৩০ থেকে ৪০টি কাজ একাই করছেন। আরেক ঠিকাদার ঝিনাইদহের কামরান হোসেনও একই সুবিধা নিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বর্তমান পিডি আলী আশরাফ ৪৮ কোটি টাকার কাজ নিয়ে প্রথম দিকে কিছুটা বিপাকে পড়েন। তাঁর অফিস ঘেরাও করেন বিএনপি-যুবদল ও ছাত্রদলের কিছু নেতা। জামায়াতের নেতারাও দেখা করেন। ১৮০টি গ্রুপের কাজ টেন্ডারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। পরে দেখা যায়, বেশির ভাগ কাজ নিয়েছেন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতারা।
বর্তমান পিডি আলী আশরাফের বিরুদ্ধে কাজ ভাগাভাগি ছাড়াও নানা অনিয়মের অভিযোগ মিলেছে। জানা গেছে, পিডি অফিসিয়াল কাগজে-কলমে সব ঠিকঠাক করে একটি লাইসেন্সে সর্বনিম্ন দর দেখিয়ে কাজ দিচ্ছেন। আর অগ্রিম টাকা নিচ্ছেন ঠিকাদারদের কাছ থেকে। এভাবে দৃশ্যপটে হাজির হচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারাও।
জানা গেল, শহর আওয়ামী লীগ নেতা তাইজাল আলী খানের ছেলে রনি খানের প্রতিষ্ঠান খান ট্রেডার্স। এই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে ছাত্রদল নেতা কাজ পেয়েছেন। এ ছাড়া ছাত্রদল নেতারা আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিনের লাইসেন্সও ব্যবহার করেছেন। সাবেক সচিবের ভাগিনা মিন্টু একাধিক কাজ পেয়েছেন। সাবেক এমপি কামারুল আরেফিন ও হানিফের ভাই আতা ছাড়া বাকি আওয়ামী লীগ নেতাদের লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজ নিয়েছেন বিএনপি নেতারা। কয়েকজন চরমপন্থি নেতাও কাজ পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের লাইসেন্সে কাজ নেওয়ার বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আমরা চাই, প্রতিযোগিতামূলক কাজ হোক। অতীতে আওয়ামী লীগের লোকজন ইচ্ছামতো কাজ নিয়েছেন। তবে আমরা দলীয়ভাবে দরপত্র নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে। আমরা চাই, সাধারণ ঠিকাদাররা কাজ পান।
প্রকল্পের কাজের বিষয়ে অফিসে গিয়ে তথ্য চাইলে পিডি আলী আশরাফ সময় চেয়ে নেন। পরে আর তথ্য দেননি। পরে এ প্রতিবেদকের কাছে লোক পাঠিয়ে কাজ নেওয়ার প্রস্তাব দেন। পিডি বলেন, ‘ভাই এসব নিউজ করার দরকার নেই। আমার সঙ্গে কথা বলেন। আপনাদের নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আসেন বসে ঠিক করে নিই।’
দুদক কুষ্টিয়া সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীল কমল পাল বলেন, ‘সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে। আমরা নথিপত্র হাতে পেয়ে কাজ শুরু করেছি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ প রকল প র ন ব এনপ ছ ত রদল ৪৮ ক ট সমন ব আওয় ম য বদল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
খুচরায় সয়াবিনের লিটার ১৬০ টাকা, বেশি নিলেই ব্যবস্থা
চট্টগ্রামে ভোজ্যতেল খুচরায় ১৬০ টাকা লিটার হিসেবে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমদানিকারকরা ১৫৩ টাকা, পাইকাররা ১৫৫ টাকা এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা ১৬০ টাকা প্রতি লিটার খোলা তেল বিক্রি করবে। আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এ দর থাকবে।
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরের সার্কিট হাউসে ভোজ্যতেল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এতে ব্যবসায়ী গ্রুপ টিকে ও সিটি গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতা এবং ভোক্তা সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটের সুযোগে অনেকেই খোলা তেল বেশি দামে বিক্রি করছে। তাই আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত দামের বাইরে গিয়ে কেউ বিক্রি করলে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, খোলা সয়াবিন তেল খুচরায় সর্বোচ্চ ১৬০ টাকায় বিক্রি করা যাবে। কেউ চাইলে এর চেয়ে কমেও বিক্রি করতে পারবে। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি নেওয়া যাবে না। সিদ্ধান্ত না মানলে বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে সোমবার বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকট পরিস্থিতি দেখতে দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে যান সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। পরিদর্শনে গিয়ে ভোজ্যতেল উধাও হওয়ার সত্যতা পেয়ে তেলের উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ীদের এ বৈঠকে ডাকেন তারা।