বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে ‘স্থূলতা মহামারি’
Published: 4th, March 2025 GMT
বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করেছে শারীরিক স্থূলতা। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং এক-তৃতীয়াংশ শিশু অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা সমস্যায় ভুগবে। শতকরা হিসাবে এই হার হবে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ।
যদি সরকারগুলো কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এই সমস্যা তৈরি হবে বলে নতুন এক গবেষণায় জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার দ্য ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রবন্ধটি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন বিভাগের অধ্যাপক ইমানুয়েলা গ্যাকিদৌ। প্রবন্ধটি লেখার জন্য বিশ্বের ২০৪টি দেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের লোকজনের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাসসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ, যাচাই ও বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার নজিরবিহীন বৈশ্বিক মহামারি এক গভীর ট্র্যাজেডি এবং এক বিশাল সামাজিক ব্যর্থতা বলেন ইমানুয়েলা।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯০ সালে বিশ্বজুড়ে ৯২.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চালে কি আর্সেনিকের দূষণ বেড়ে যাচ্ছে, কী বলছে গবেষণা
পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষের প্রধান খাবার ভাত। ধান থেকে হয় চাল, চাল থেকে ভাত। সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সম্ভবত চালে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।
এ নিয়ে উদ্বেগে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পৃথিবী দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ফলে চালে আর্সেনিক দূষণও বাড়ছে বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
চালে আর্সেনিকের উপস্থিতি নতুন সমস্যা নয়। বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা চালে বিষাক্ত এই রাসায়নিকের উপস্থিতি কমানোর উপায় খুঁজে পেতে কাজ করছেন। প্রায় সব চালেই আর্সেনিক থাকে। আর্সেনিক একটি প্রাকৃতিক রাসায়নিক। মাটি, পানি, বায়ু—সব জায়গাতেই আর্সেনিক থাকে। এটি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ধান চাষ করার সময় জমিতে আর্সেনিক জমা হয় এবং গাছের মাধ্যমে মাটি থেকে আর্সেনিক চালে প্রবেশ করে।
তবে প্রাকৃতিক এ প্রক্রিয়ায় চালে যে পরিমাণ আর্সেনিক প্রবেশ করে, তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর মাত্রার চেয়ে অনেক কম। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অল্প অল্প করে খাবার বা পানির মাধ্যমে যদি অজৈব আর্সেনিক মানবদেহে প্রবেশ করে, তবে তা ক্যানসারসহ অন্যান্য অনেক প্রাণঘাতী রোগের কারণ হতে পারে।
গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, তাঁরা চালে যে মাত্রায় আর্সেনিক দূষণ বেড়ে যাওয়া প্রত্যক্ষ করেছেন, তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ শুধু চীনেই বাড়তি আরও প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন।চাল থেকে আর্সেনিকের মাত্রা কমানোর উপায় খুঁজে বের করতে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন। রান্নার সময় চাল থেকে আর্সেনিক কীভাবে বের করে ফেলা যায়, সেটা নিয়েও কাজ চলছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চালে যে মাত্রায় অজৈব আর্সেনিক পাওয়া গেছে, তা উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে। এ গবেষণার জন্য গবেষকেরা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে চীনের চারটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে ২৮ প্রজাতির ধানের চাষ করেছেন।
গবেষকেরা দেখেছেন, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়লে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে চালে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যায়। যে পরিমাণ মানুষ বর্তমানে ভাত খান, তাতে চালে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে গেলে কত মানুষের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তার একটি মডেলও দেখিয়েছেন গবেষকেরা।
গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, তাঁরা চালে যে মাত্রায় আর্সেনিক দূষণ বেড়ে যাওয়া প্রত্যক্ষ করেছেন, তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ শুধু চীনেই বাড়তি আরও প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন।
ফুসফুসের জটিলতা ও হৃদ্রোগও বাড়বে বলে জানিয়েছেন গবেষকদের একজন লুইস জিসকা। তিনি নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক।
অধ্যাপক জিসকা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দুটি কারণ—বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। এর প্রভাবে আর্সেনিকের পরিমাণ বাড়ছে।
যদিও গবেষকেরা চীনকে গুরুত্ব দিয়ে এই গবেষণা করেছেন। তবে তাঁরা বলেছেন, ইউরোপ–যুক্তরাষ্ট্রসহ চাল উৎপাদনকারী অন্যান্য অঞ্চলেও সম্ভবত একই প্রভাব দেখা যাবে। কারণ, বিশ্বের সব অঞ্চলেই চালে অজৈব আর্সেনিক কমবেশি পাওয়া যায়।
যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন, রান্নার সময় কিছু নিয়ম অনুসরণ করে লাল চাল থেকে ৫০ শতাংশ এবং সাদা চাল থেকে ৭৪ শতাংশ আর্সেনিক দূর করা সম্ভব।অধ্যাপক জিসকা বলেছেন, ‘এমন নয় যে আমরাই প্রথম কার্বন ডাই-অক্সাইড নিয়ে কাজ করছি, এমনটাও নয় যে আমরাই প্রথম বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করছি। তবে আমরাই প্রথম কেউ, যারা এই দুটি বিষয়কে মাঠে একত্র করেছি এবং এটাই আমাদের হতবাক করেছে।’
এ গবেষণায় গবেষকেরা নানা হিসাব করে ২০৫০ সালের পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা দেখিয়েছেন। অধ্যাপক জিসকা স্বীকার করেছেন, এটি ছাড়াও এ গবেষণায় আরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।
রান্নার আগে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে চালে আর্সেনিকের মাত্রা কমানো সম্ভব