নেত্রকোনার কলমাকান্দায় অন্তঃসত্ত্বা নারী ও এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার উপজেলার পৃথক দুটি স্থান থেকে স্থানীয় থানা-পুলিশ ওই দুটি মরদেহ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

মারা যাওয়া দুজন হলেন কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের শিংপুর গ্রামের এহসানুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী লিজা আক্তার (২০) এবং লেংগুরা ইউনিয়নের তারানগর গ্রামের মো.

মিজানুর রহমানের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নুরুন্নাহার (২৩)।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৮ মাস আগে লিজা আক্তারের সঙ্গে এহসানুল হকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে লিজা কলমাকান্দা মধ্য বাজারে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন। কয়েক মাস ধরে লিজা ও তাঁর স্বামীর মধ্যে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। আজ দুপুরে লিজা শোবার কক্ষের দরজা বন্ধ করে ছিলেন। পরিবারের লোকজন তাঁর সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে ঘরের দরজা ভেঙে গ্রিলের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় গৃহবধূ লিজার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

অন্যদিকে অন্তঃসত্ত্বা ও এক সন্তানের জননী নুরুন্নাহার প্রতিদিনের মতো গত সোমবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সাহ্‌রি খাওয়ার জন্য নুরুন্নাহারের শাশুড়ি ডাক দিলে তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি। এ সময় ওই কক্ষে থাকা নুরুন্নাহারের স্বামী মিজানুর রহমান ঘুম থেকে জেগে বিছানায় স্ত্রীকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য দুজনের মরদেহ নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। এ ছাড়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কলম ক ন দ তদন ত মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে সব সামরিক সহায়তা স্থগিত ট্রাম্পের

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার তিন দিন পর দেশটিতে সব ধরনের সামরিক সহায়তা স্থগিত করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ইউক্রেনের পাশে থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন ইউরোপের নেতারা। সেই সঙ্গে তারা ইউরোপে নিরাপত্তা জোরদারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ খবরের পর বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ট্রাম্পের ‘শক্তিশালী নেতৃত্বে’ কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি।

গতকাল মঙ্গলবার সিএনএন জানায়, হোয়াইট হাউসের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর ট্রাম্প ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ সহায়তা বন্ধ ইউক্রেনের প্রতিরোধের সামর্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্প বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত জেলেনস্কি শান্তি আলোচনায় সম্মত হবেন না, ততক্ষণ এ স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। এদিকে দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন ইউরোপের নেতারা। তারা কঠোরভাবে ইউক্রেনের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। সেই সঙ্গে ইউরোপের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরেও গুরুত্ব আরোপ করেন। গতকাল পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশোতে পোলিস পার্লামেন্টের উদ্বোধনী অধিবেশনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড তুস্ক বলেন, ‘সিটবেল্ট বেঁধে প্রস্তুত হোন; আমরা বিশৃঙ্খল এলাকায় প্রবেশ করতে যাচ্ছি।’ তিনি ইউরোপের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা বা পরামর্শ না করেই সামরিক সহায়তা স্থগিত করেছে। 

ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, ইউরোপ তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে প্রস্তুত। এ জন্য তারা ৮৪ হাজার ১০০ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করবেন বলে জানান তিনি। ডেনমার্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্রোয়েল লান্ড গৌলসেন বলেন, কিছু বিষয়ে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। এর মধ্যে আছে প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্র। এ অবস্থায় ইউরোপকে ইউক্রেনের সহায়তায় আরও বেশি কিছু করতে হবে। 

এদিকে ইউরোপ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালেও সামরিক সহায়তা স্থগিতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়া। তারা বলছে, এটা ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে আনতে ভূমিকা রাখবে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘যদি এটা সত্যি হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে তা কিয়েভকে শান্তি প্রক্রিয়ার দিকে নিয়ে যাবে। শান্তির জন্য সম্ভবত এটা অত্যন্ত বড় একটি পদক্ষেপ।’  এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা স্থগিতের  খবরের পর এক্সে দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, আমি শান্তির প্রতি ইউক্রেনের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। আমরা কেউই সীমাহীন যুদ্ধ চাই না। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমি এবং আমার দল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শক্তিশালী নেতৃত্বে কাজ করতে প্রস্তুত। 

ট্রাম্পের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করে জেলেনস্কি বলেন, গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে আমাদের বৈঠকটি যেভাবে হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে হয়নি। এটি দুঃখজনক যে, এটি এভাবে ঘটেছে। বিষয়গুলো ঠিক করার সময় এসেছে। আমরা চাই ভবিষ্যতে সহযোগিতা ও যোগাযোগ গঠনমূলক হোক। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে কোনো সময় খনিজ চুক্তি করতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।

গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সামনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান জেলেনস্কি। নজিরবিহীন এ ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া হয়। 

রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে পরিকল্পনা 

ইউক্রেন ও ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলেও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞামুক্ত করতে একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় চালু এবং ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি চাওয়ায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট আরেকজন জানিয়েছেন। এরই মধ্যে হোয়াইট হাউস মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়কে নিষেধাজ্ঞার পরিধি নিয়ে একটি তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ