তিন যুগ ধরে একাই লড়ে যাচ্ছেন মাহমুদা
Published: 4th, March 2025 GMT
তিন বছর বয়সে বাবা মারা গেছেন। ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে। দুই বছর পর স্বামীর মৃত্যু হয়। পেটের সন্তান স্বামী দেখে যেতে পারেননি। ছেলের বয়স এখন ৩৬ বছর। ছেলেটা বিয়ে পাস করেছেন; কিন্তু বেকার। মাহমুদা (৫৪) ভোরে উঠে সবজির আড়তে যান। রাত ১২টা পর্যন্ত ফুটপাতে সবজি বেচেন। ৩৬ বছর ধরে একাই লড়াই করে যাচ্ছেন তিনি। মাহমুদার প্রশ্ন, ‘সারা জীবনই কি মানুষের কষ্ট থাকে?’
রাজশাহী নগরের অলকার মোড় এলাকায় ফুটপাতে রাতে সবজির দোকান নিয়ে বসেন মাহমুদা বেগম। গত শনিবার রাতে যখন তাঁর সঙ্গে কথা হয়, বসে থাকতে থাকতে ঘুমে ঢলে পড়ছিলেন। আবার ধড়মড় করে উঠে বসেন। আশপাশে তাকিয়ে দেখেন কোনো ক্রেতা আছে কি না। আড়মোড়া ভেঙে উঠে কাউকে দেখলেই বলছেন, ‘নেন কী নেবেন, নেন।’ তখন ঘড়িতে রাত সাড়ে ১১টা। সবজি শেষ হয়নি। তাই অপেক্ষা করছেন। কিন্তু সারা দিনের ক্লান্তি তাঁর চোখে ভর করছে। তিনি আর বসে থাকতে পারছেন না।
মাহমুদার নিজের ডায়াবেটিস এখন ৩৬ পয়েন্ট (মিলি মোল/লিটার)। কিন্তু হাসপাতালে যাওয়ার সময় হয় না। তবে মায়ের প্রতিদিন ৫০০ টাকার ওষুধ লাগে। খাওয়ার টাকা না হলেও মায়ের ওষুধের টাকার জোগাড় করতেই হয়। মাহমুদার কথা, ‘মা যেন হামাক ছেড়ে না যায়। হামি দুঃখী মানুষ।’
বয়স কত বলতে পারেন না। বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বছর তাঁর জন্ম হয়েছে। থাকেন রাজশাহী শহরের শিরোইল কলোনি এলাকার একটি খুপরিতে। বাবার বাড়ি ছিল জয়পুরহাটের জাফরপুর গ্রামে। বললেন, ‘কোথায় থাকি, দেখলে বুক ফাইটি যাবি। কোনোরকমে লাকাই থাকি। ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। ১৪ বছরের মাথায় স্বামী মারা যায়। ছেলের মুখ দেখে যেতে পারেনি। রিকশা চালাত। ট্রাকের সঙ্গে অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কোথাও যেতে পারিনি। মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে ছেলেকে মানুষ করছি। ছেলে বিএ পাস করেছে।’
মাহমুদা বলেন, আট বছর ধরে আর মানুষের বাড়িতে কাজ করেন না। ভোরে উঠে নগরের খড়খড়ি পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে দিনের বেলায় এক জায়গায় বিক্রি করেন। রাতে এশার নামাজের পর এসে নগরের অলকার মোড়ে সবজি নিয়ে বসেন। তিনি দুঃখ করে বলেন, তিন বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর মা মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ঢেঁকিতে ধান ভেনে তাঁদের চার ভাইবোনকে মানুষ করেছেন। তাঁর ছেলেটার চাকরির ব্যবস্থা হয়নি।
মাহমুদা পৈতৃক জমির ভাগ পেয়েছিলেন ৪ শতাংশ। বিক্রি করে রেলওয়েতে ছেলের চাকরির জন্য এক লোককে টাকা দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, চাকরি হলে বাড়িঘর করতে পারবেন। কিন্তু চাকরি হয়নি। এখন জমিও নেই, টাকাও নেই, সেই লোকও নেই। কোথায় যে গেছেন, খুঁজে পাচ্ছেন না। এখনো সেই কষ্টেই আছেন। মাহমুদা বলেন, ‘নিজের চোখে হামার কষ্ট দেখলে কাকা আপনিও বসে কানবেন। হামি কানছি, হামার ছেলে কানছে, আমার মা কানছে। হামরা তিনডা মানুষ খালি কান্দি।’
ছেলের বিয়ে দিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে বললেন, ‘বয়স ৩৬ হয়েছে। ওর তো একটা জীবন আছে। ছেলে বিয়ে করবে না। জোর করে দিয়েছি। পাঁচ বছরের একটা নাতি আছে। ছেলে বেকার। দু-একটা টিউশনি করে।’
রাত প্রায় ১২টা বাজতে যাচ্ছে। তখনো কলার কাঁদির অর্ধেক অবিক্রীত। একটা বাঁধাকপি আছে। কয়েক কেজি টমেটো থেকে গেছে। সব একে একে বস্তায় ভরতে ভরতে মাহমুদা আবার বললেন, ‘হামি একটা দুঃখিনী। এখন মা হামার কাছে আছে। প্রতিদিন মায়ের ৫০০ টাকার ওষুধ লাগে। এক দিন ওষুধ না পাইলেই কান্দে। তাই মায়ের ওষুধের টাকাডা জোগাড় করতেই হয়। নিজের ডায়াবেটিস ৩৬।’ তিনি আরও বললেন, ‘এখন মাপলেও ৩৬ পাবেন। মাঝেমধ্যেই হাত-পা কাঁপে, পড়ে যাই। আবার উঠি।’
নিজের চিকিৎসা করান কি না, জানতে চাইলে মাহমুদা উল্টো প্রশ্ন করলেন, ‘ট্যাকা পাব কোথায়? আর মেডিকেল যাওয়ার সময়ও হয় না। সেই ভোরে উঠি আর রাত ১২টায় দোকান গোছাই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর বয়স বলল ন র বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিবের তীব্র নিন্দা
সুদানে জাতিসংঘের এক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় ছয় শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। তাঁরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমি সুদানের কাদুগলিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর লজিস্টিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে নৃশংস ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।’
সুদানের কোরদোফান অঞ্চলের কাদুগলি শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের ভবনটিতে গতকাল শনিবার এ হামলা হয়।
গুতেরেসের বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। হতাহত ব্যক্তিদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন।
গুতেরেস বলেন, ‘দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’
হামলায় নিহত শান্তিরক্ষীদের সবাই বাংলাদেশি। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন। হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।সুদানের সেনাবাহিনী ওই হামলার দায় র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে দেশটির আধা সামরিক বাহিনীর ওপর চাপিয়েছে।
সুদানে দুই বছরের বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে এ লড়াই চলছে।
আরএসএফ তাৎক্ষণিকভাবে হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সুদানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, এ হামলা বিদ্রোহী মিলিশিয়া এবং এর পেছনে যাঁরা আছেন, তাঁদের ধ্বংসাত্মক কৌশলের স্পষ্ট প্রকাশ।
সুদান সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। ভিডিওতে একটি স্থান থেকে ঘন কালো ধোঁয়া আকাশে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তারা বলেছে, এটি জাতিসংঘের স্থাপনা।
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহত হওয়ার এ ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।.আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ মহাসচিবযেখানে হামলা হয়েছে, সেই তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল আবেই নিয়ে সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ২০১১ সালে সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর পর থেকে সেখানে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন মোতায়েন রয়েছে।
দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত আবেই বিশেষ প্রশাসনিক মর্যাদার অঞ্চল।
সুদানের আবেই অঞ্চলে একটি সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন জাতিসংঘের একজন শান্তিরক্ষী