পাবনা জেনারেল হাসপাতালে এক নারীর প্রসবকালে শিশুর দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রসূতির পরিবার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, শিশুটি অপরিপূর্ণ ও মায়ের পেটে মৃত অবস্থায় থাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ প্রসূতি চিকিৎসক নারগিস সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

হাসপাতাল ও প্রসূতি নারীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর উপজেলার আতাইকুলা ইউনিয়নের আতাইকুলা গ্রামের দুবাইপ্রবাসী মো.

রমজান খাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মোছা. শিউলী খাতুন (৩৫) চিকিৎসক শাহীন ফেরদৌসের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। আজ ভোরে পেটে ব্যথা অনুভব করলে স্বজনেরা তাঁকে প্রথমে শাহীন ফেরদৌসের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসক জটিল অবস্থা দেখে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। হাসপাতালে ভর্তির পর কর্তব্যরত প্রসূতি চিকিৎসক দীপা মর্জিনা রোগীর পেটে ‘মৃত বাচ্চা’ বলে স্বজনদের জানান। একপর্যায়ে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হলে তিনি বাচ্চা প্রসবের চেষ্টা চালান। তখন বাচ্চাটির শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে অস্ত্রোপচার করে বাচ্চার শরীরের বাকি অংশ বের করা হয়।

ঘটনার পর রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করেন, পেটে মৃত বাচ্চা ছিল, তা তাঁরা জানতেন না। চিকিৎসকের অবহেলায় বাচ্চাটির শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাঁরা এ ঘটনার বিচার চান।

জানতে চাইলে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, রোগীর অবস্থা এখন ভালো। তবে কী কারণে কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছে তা অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে জ্যেষ্ঠ প্রসূতি চিকিৎসক নারগিস সুলতানাকে প্রধান করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবেন। প্রতিবেদনে হাসপাতালের কারও অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্ত কমিটির প্রধান নার্গিস সুলতানা জানান, বিষয়টি জানার পরপরই দ্রুত মায়ের পরিপূর্ণ সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ওই নারীর পেটে বাচ্চাটি মৃত ও অপরিণত (সাত মাসের) অবস্থায় ছিল। মায়ের পেটে কোনো পানি ছিল না। এ ছাড়া তিনি থাইরয়েড ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি নিয়মিত ইনসুলিন নিতেন। বিভিন্ন জটিলতার কারণে চিকিৎসক দ্রুত তাঁর গর্ভপাত করানোর চেষ্টা করেন।

নার্গিস সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে তাঁদের ধারণা, শিশুটি অপরিপূর্ণ হওয়ার কারণে শরীর শক্ত না হওয়ায় শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে ঘটনা কেন হয়েছে, কোনো অসাবধানতার ছিল কি না, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কোনো ধরনের অবহেলার প্রমাণ মিললে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক অবহ ল অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

বিনিয়ােগ বাড়াতে করহার যৌক্তিক করার প্রস্তাব

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে উৎসে করহার যৌক্তিকীকরণ, করপোরেট করহার কমানো এবং অগ্রিম আয়কর ও টার্নওভার করনীতি সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে কর প্রশাসনের উন্নয়ন ও স্বয়ংক্রিয় ডিজিটালাইজেশন চালুর মাধ্যমে কর ফাঁকি কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। 
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্যালয়ে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার প্রতিনিধিরা এসব প্রস্তাবনা দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। 
শুরুতে প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ফিকির সভাপতি জাভেদ আখতার। তিনি বিদেশি বিনিয়োগ টানতে উৎসে কর যৌক্তিকীকরণ, ন্যূনতম কর প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দেন। জাভেদ আখতার বলেন, রাজস্ব নীতি প্রণয়ন এবং আদায় বিভাগ আলাদা করলে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া সহজ হওয়ার পাশপাশি কার্যকারিতা বাড়বে। এতে রাজস্ব আদায় এবং কমপ্লায়েন্স অধিকতর কার্যকর হবে। তিনি বলেন, ভ্যাট হার একটি থাকা উচিত। এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের জন্য করহারে ছাড় দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

ফিকির পক্ষে প্রস্তাবনা তুলে ধরে এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের পরিচালক স্নেহাশিস বড়ুয়া বলেন, কর-শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় ব্যবসায়ীরা ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি ইটিডিএস, ই-রিটার্ন ও রিটার্ন ফাইলিং ডেটাবেইসের মধ্যে সমন্বয় আনার আহ্বান জানান। 
সভায় এমসিসিআইর সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, বিগত অর্থবছরগুলোতে শর্তসাপেক্ষে করপোরেট কর হার ধারাবাহিকভাবে কমানো হলেও অর্থ আইন-২০২৪ অনুযায়ী নগদ লেনদেনের শর্তের কারণে কেউই এই সুবিধা নিতে পারছেন না। দেশের অর্থনীতির ৮০ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক,  ব্যাংকিংনির্ভরতা সম্পূর্ণ নয়। ফলে বড় ও মাঝারি কোম্পানির জন্য এই শর্ত পালন করা অত্যন্ত কঠিন। কার্যকরী কর হারও অনেক বেশি, যা উৎসে কর কর্তন ও অননুমোদিত ব্যয়ের ফলে ক্ষেত্রবিশেষে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়। তাই কোম্পানির কর হারের ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের শর্ত বাতিল করা দরকার।
এমসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান কর প্রশাসন ও নীতিনির্ধারণী কাঠামো একই ছাতার নিচে কাজ করছে। এতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। করনীতি ও কর প্রশাসন আলাদা করলে স্বাধীন ও স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে। এতে কর আদায়ের কার্যক্রমে অপচয় ও হয়রানি কমবে এবং ব্যবসায়ীরা সহজে কর পরিশোধ করতে পারবেন। করনীতি নির্ধারণের জন্য একটি স্বাধীন বোর্ড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ সহজ হবে। 
কর ব্যবস্থাপনা অনলাইনভিত্তিক করার প্রস্তাব দিয়েছে এমসিসিআই। সংগঠনটির মতে, কর নির্ধারণ ব্যবস্থা, আপিল, ট্রাইব্যুনাল, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পর্যায়ে প্রচলিত আইন সংশোধন করে অনলাইনে শুনানি গ্রহণের বিধান চালু করা অতি জরুরি। করদাতাদের নোটিশ প্রদান, শুনানিতে করদাতাদের হাজিরা পদ্ধতি ইত্যাদি ব্যবস্থা অনলাইনভিত্তিক হওয়া দরকার। এতে ব্যবসায়ীদের অর্থ ও সময়ের অপচয় কমবে। 

তিনি বলেন, এসএমই খাতের বিকাশে আলাদা করহার নির্ধারণ করা প্রয়োজন। টার্নওভার কর কমালে এসএমই ব্যবসায়ীরা করের আওতায় আসতে উৎসাহিত হবে। দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে কাঁচামালের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক কমাতে হবে। 
দুই সংগঠনের বক্তব্য শোনার পর এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বলেন, আগামী আয়কর আইনে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। ব্যবসা সহজ করতে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো, অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটরের কাজ শুরু হয়েছে। বন্ড অটোমেশন নিয়ে কাজ চলছে। আগামী বছর করপোরেট ট্যাক্স রিটার্ন অনলাইনে নিয়ে আসা হবে। 
সব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ছাড় নেওয়ার মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, কর ছাড়ের কারণে বৈষম্য তৈরি হয়। ধারণা করে বলা হয়, যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়, সমপরিমাণ ছাড় দেওয়া হয়। এই ছাড় দেওয়া কমাতে হবে। ভষ্যিতে একক ভ্যাট হার করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ