দুর্বল ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়াতে ৫–১০ বছর সময় লাগবে: গভর্নর
Published: 4th, March 2025 GMT
দুর্বল ব্যাংকগুলো পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে ৫-১০ বছর সময় লাগতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। গভর্নর বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই দুর্বল ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে বসছি। তাঁদের সবকিছু নজরদারি করছি। ইতিমধ্যে আমরা তাঁদের অনেক তারল্য সহায়তা দিয়েছি। তবে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে এসব ব্যাংকের ৫ থেকে ১০ বছর প্রয়োজন। আমাদের দেশে যেসব ব্যাংক খারাপ অবস্থা থেকে উঠে এসে ভালো করেছে, তাদেরও মোটামুটি এমন সময়ই লেগেছে।’
রাজধানীর ইস্কাটনে ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার ব্যাংক খাতের পুনরুদ্ধারের পথযাত্রা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংকের পরিচালক হতে ফিট অ্যান্ড প্রপার টেস্ট (অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা পরীক্ষা) পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যাঁরা এখন পরিচালক আছেন, তাঁরাসহ সবাইকে এই যাচাই–বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ব্যাংকের মালিকদেরও এই যাচাই–বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যোগ্যতা থাকলে মালিকেরা পরিচালক হবেন, যোগ্যতা না থাকলে হবেন না। গৃহিণী স্ত্রী ও মেয়েকে ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে বসিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই। আমরা আর এসব চাই না।’
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাদক ইনাম আহমেদের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান শরীফ জহির, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ মান্নান, ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ–আল মাসুদ, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন, ইস্টার্ণ ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার, সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর কে হোসেন, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এমডি মতিউল হাসান, আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মনসুর মোস্তফা প্রমুখ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকদের একটি প্যানেল তৈরি করছি। সেখান থেকেই ব্যাংকগুলোকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। তার বাইরে ব্যাংকগুলো গ্রহণযোগ্য কাউকে নিতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিবেচনা করবে।’ এ সময় ইস্টার্ণ ব্যাংকের এমডি ফিট অ্যান্ড প্রপার টেস্ট ব্যাংকের এমডিদের ক্ষেত্রেও চালু করার প্রস্তাব দিলে গভর্নর ইতিবাচক মনোভাব দেখান।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ৫০ শতাংশ এজেন্ট হতে হবে নারী। এ জন্য শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন দেবে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এ ছাড়া একাধিক ব্যাংক এমডিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকিং আইনকানুন সহজ করতে একটি টাস্কফোর্স গঠনের আশ্বাস দেন।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সরকারের ঋণ নিয়ে আমরা চক্রের মধ্যে আছি। আমি সেই লোক নই যে চাটুকারিতা করে টাকা আনব। দেশের আর্থিক পরিস্থিতি শক্তিশালী অবস্থায় আছে। বাজেটের অর্থের জোগানের একমাত্র সমাধান হচ্ছে রাজস্ব আদায়। রাজস্ব আদায় ভালো হলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দিকে তাকাতে হবে না। তাই আমাদের রাজস্ব আদায় বাড়ানোর নীতি দরকার।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করার কাজ জোরেশোরে চলছে মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, ‘আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিত মজবুত করতে চেষ্টা করব। তবে সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। যখন পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসবে, তখনো এই সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে।’
ব্যাংক এমডিরা যা বললেনসূচনা বক্তব্যে এমটিবির এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়তে বাড়তে ২০ শতাংশ হয়েছে। এতে ব্যাংকের তারল্যে প্রভাব পড়ছে। পরিচালনায়ও প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদেও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তবে দুই বছরের বেশি সময় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি। সুদের হারও বেড়েছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি অনেক কমে গেছে। আগামী দিনে সুদের হার কমলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যদি উন্নতি না হয়, তাহলে বিনিয়োগ হবে না।
ব্যাংকিং খাতের জটিল নিয়মকানুম সহজ করার তাগিদ দিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, গত ৪–৫ বছরে জটিল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এতে গ্রাহকসেবার পাশাপাশি ব্যবসা–বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিয়মকানুন সহজ করা হলে সব পক্ষই উপকৃত হবে। এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
দুর্বল ব্যাংক নিয়ে ইস্টার্ণ ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেন, কিছু ব্যাংক ধুঁকছে। তাদের ঘুরে দাঁড়াতে দীর্ঘ সময় লাগবে। আমরা তারল্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু মনে হচ্ছে, যথাযথ কাজ করছে না।
সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দুর্বল ব্যাংক সম্পর্কে জানতে চান। তাঁদের কাছে স্পষ্ট বার্তা থাকতে হবে, দুর্বল ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কী করবে। ভালো ব্যাংককে ভালো বলতে হবে। খারাপকে খারাপ বলতে হবে। সিটি ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়াতে ১৫ বছর লেগেছিল। সুশাসন না থাকলে সেটি করা যেত না।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের আমলে ইউসিবি ব্যাংকে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান শরীফ জহির বলেন, ‘আমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে ফাইট করছি। মালিকানায় এখনো তারা বসে আছে। তাদের আলাদা করা দরকার। এ জন্য আইনি সহায়তা লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমতি দিলে আমরা আইনজীবী নিয়োগ দেব।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিডির ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন ভেঙে পড়েছে। এটি পুনঃস্থাপন করার কাজ চলছে। এ জন্য কিছু স্বল্প ও কিছু দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কয়েক মাস পর জাতীয় নির্বাচন। রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে সবকিছু ধুলায় মিশে যাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র বল ব য ক র এমড ন বল ন এ জন য র বল ন য গ যত সরক র ব যবস মনস র
এছাড়াও পড়ুন:
সায়মা ওয়াজেদের সূচনা ফাউন্ডেশনের ১৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের (পুতুল) নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠান সূচনা ফাউন্ডেশনের ১৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত এসব ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল ৪৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দুদক সূচনা ফাউন্ডেশনের ১৪টি ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য আদালতের কাছে তুলে ধরে সেগুলো অবরুদ্ধ করার আবেদন করে। দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সায়মা ওয়াজেদ তার মায়ের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।
এর আগে গত বছরের ২৪ নভেম্বর সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাব স্থগিতের (জব্দ) নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।