৮৬ লাখ টাকা পাচার করেছেন সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান: সিআইডি
Published: 4th, March 2025 GMT
ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসা রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মো. ইমরান হোসেনের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরেছে পুলিশের তদন্ত সংস্থা সিআইডি।
১৩৩ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের একটি মামলায় ইমরান হোসেনকে সোমবার (৩ মার্চ) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সম্পর্কের জানাতে মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তদন্ত সংস্থাটির অর্গানাইজড ক্রাইমের ডিআইজি একরামুল হাবিব।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন সময় নিষিদ্ধ জাতের গরু ব্রামহা আমদানি করে বিক্রি করতেন। যা ছিল বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ আইনে বেআইনি ও আমদানি নিষিদ্ধ। কিন্তু এরপরও তিনি তা করতেন। বিষয়টি বিভিন্ন সময় আলোচনায় এলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিআইডির পক্ষ থেকে তদন্তকাজ শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ১৩৩ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য পেলেও ৮৬ লাখ টাকা পাচারের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি।
সিআইডি বলছে, ইমরান হোসেন ও তার সহযোগী তৌহিদুল আলম জেনিথ চোরাচালান, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অনুমোদনহীন ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি করতেন। সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বিদেশে প্রায় ৮৬ লাখ টাকা পাচার করেছেন।
সিআইডির ডিআইজি একরামুল হাবিব জানান, তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তবর্তী এলাকা নিয়ে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে গরু ও মহিষ বাংলাদেশে আনতেন। এছাড়া ভুটান ও নেপাল থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে ছোট আকৃতির ভুট্টি গরু বাংলাদেশে এনে বিক্রি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ইমরান হোসেন প্রতারণার মাধ্যমে দেশীয় গরু ছাগলকে বিদেশি ও বংশীয় গরু/ছাগল বলে প্রচার করে উচ্চমূল্যে তা কোরবানির পশুর হাটে বিক্রি করতেন।এভাবে অবৈধভাবে আয় করে প্রায় ১২১ কোটি ৩২ লাখ ১৫ হাজার ১৪৪ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন।
সিআইডি কর্মকর্তা জানান, ঢাকা কাস্টমস হাউজের আটককৃত এবং কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার, সাভারে থাকা ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরু সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক জবাই করে ন্যায্যমূল্যে মাংস বিক্রয়ের কথা থাকলেও জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্রে সেগুলো জবাই দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে তা জবাই না করে গরুগুলো কৌশলে হাতিয়ে নেন ইমরান। যা তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। আর এই ব্রামহা আমদানির নামে ১২১ কোটি ৩২ লাখ ৯১ হাজার টাকা ইমরানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ মেটাল লিমিটেডের নামে এফডিআর খুলে বিনিয়োগ করে লন্ডারকৃত সম্পদে রূপান্তর করেছেন।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের ডিআইজি একরামুল হাবিব
এছাড়া মোহাম্মদপুর থানা, ঢাকার বেড়িবাঁধ এলাকায় রামচন্দ্রপুর সরকারি খাল ভরাট ও জবর দখল করে সাদিক এগ্রোর মালিক মো.
এদিকে ইমরান হোসেনকে আদালতে তোলা হলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম. এ আজহারুল ইসলামের আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
ঢাকা/এমআর/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইমর ন হ স ন র কর ছ ন স আইড র সরক র আমদ ন করত ন তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
পাসপোর্টে ভোগান্তি কমেছে
পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন না থাকায় ভোগান্তি কমেছে আবেদনকারীদের। আগে মাসের পর মাস ঘুরতে হতো আবেদনকারী অনেককে। পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দেওয়ার পর তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হতো পুলিশের এসবি অফিসে। তথ্যের ঘাটতিসহ নানা অজুহাতে পুলিশ কালক্ষেপণ করছে– এমন অভিযোগ উঠত অহরহ।
তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই আবেদনকারীদের কাছ থেকে নেওয়া হতো ঘুষ। না দিলে আবেদনকারীর বিপক্ষে দেওয়া হতো প্রতিবেদন। এতে অনেকেই পড়তেন চরম ভোগান্তিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তদন্তের নামে বেড়াজালে আটকিয়ে আবেদনকারীদের ফেলা হতো নানা ধরনের হয়রানিতে। এখন ভেরিফিকেশন বা তদন্ত ছাড়াই যে কার্যক্রম চলছে, তা নাগরিকদের জন্য স্বস্তিদায়ক। পাসপোর্ট অফিসগুলো যথাযথ দায়িত্ব পালন ও সেবা দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করলে সুফল পাবেন দেশের নাগরিক।
পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ থেকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এখন প্রাপ্তবয়স্কদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের জন্মসনদের তথ্যে পাসপোর্ট দেওয়া হবে। রাজধানীর বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আবেদনকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের স্বস্তির কথা জানা গেছে। কেউ কেউ বলেছেন, অপরাধ করে কেউ যেন বিদেশে পালানোর জন্য পাসপোর্ট না পায়, সে ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
সম্প্রতি উত্তরা পাসপোর্ট অফিসে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিমন দাসের সঙ্গে। নিজের পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে এসেছেন তিনি। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জমিদার টিলা। পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তদন্তের নামে যে হয়রানি করা হতো, সেটা এখন আর হবে না। আফতাবনগর পাসপোর্ট অফিসে পূর্ব রামপুরা থেকে তানভীর আহমেদ কবির আসেন তাঁর মেয়ের পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে। তিনি বলেন, ‘পুলিশের তদন্ত দরকার আছে বলে আমি মনে করি। যারা অপরাধী তাদের অবশ্যই তদন্তের আওতায় আনা উচিত। যারা নিরপরাধ তাদের যেন হয়রানি করা না হয়। হয়রানি কীভাবে বন্ধ করা যায়, সে বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত।’
আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে পশ্চিম নাখালপাড়া থেকে আবেদন করতে আসেন রনি দাস। সমকালকে তিনি জানান, সকাল ৯টার দিকে তিনি অফিসে পৌঁছান। পাসপোর্টের আবেদন পত্র জমা দেওয়ার পর জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করার জন্য তাঁকে ১০৫ নম্বর কক্ষে পাঠানো হয়। সেখানে এনআইডি কার্ড জমা দিতে গেলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, সার্ভার ডাউন। দুই ঘণ্টা পর ওই কক্ষে গেলে আবারও তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এক ঘণ্টা পর তিনি আবার গেলে তাঁর এনআইডির ভেরিফায়েড কপি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, সহজে যাতে আবেদন ফরম জমা দেওয়া ও পাসপোর্ট পাওয়া যায়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে।
বছিলায় পাসপোর্ট অফিসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার টেকনোলজি বিভাগে মার্স্টাস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা রহমান আসেন নিজের পাসপোর্ট করতে। পুলিশি তদন্ত বাতিল বিষয়ে তিনি বলেন, এটা অবশ্যই ভালো দিক। তবে কোনো অপরাধী যেন পার পেয়ে না যায়, সেদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
পাসপোর্টের সেবা সহজীকরণে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান সমকালকে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মসনদ থাকলে সে ক্ষেত্রে আর পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয় না। পুলিশের তদন্তের নামে যে জনহয়রানি ও ভোগান্তি, তা মোটেই কাম্য ছিল না। বর্তমান সরকার একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাসপোর্ট পাওয়া মানেই বিদেশে গমন নয়। পাসপোর্টে ভিসা থাকতে হয়। ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে যে তালিকা থাকে, সেই তালিকায় স্বীকৃত অপরাধীদের নাম থাকে। সেই অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পালন করলে অপরাধীরা দেশের বাইরে যেতে পারবে না।
পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী গোলাম তৌসিফ সমকালকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অনুশাসন হিসেবেই নতুন পাসপোর্টের তদন্ত বাতিল করা হয়েছে। পাসপোর্ট পাওয়া দেশের নাগরিকের অধিকার।
এ প্রসঙ্গে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নূরুল আনোয়ার বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের কারণে পাসপোর্ট আবেদনকারীরা হয়রানির সম্মুখীন হতো। এতে অধিদপ্তরের সেবা সম্পর্কে আবেদনকারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতো। তিনি বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া সুপার এক্সপ্রেস সার্ভিসের আওতায় যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। পাসপোর্ট সেবার ক্ষেত্রে এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল সম্পর্কে জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। দেশের সব নাগরিককে অপরাধী ভাবা ঠিক না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিপক্ষে কথা বলেছি। এর আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নানা যুক্তি দেখিয়েছে। অবশেষে এ সরকার আমাদের দাবির প্রতিফলন ঘটিয়েছে। দেশের নাগরিকরা এখন পুলিশি তদন্তের নামে চাঁদাবাজি ও হয়রানি ছাড়াই পাসপোর্ট পাবেন। তিনি বলেন, এটা চিরস্থায়ী হতে হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের পাশাপাশি পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষকে সেবা সহজীকরণে দায়িত্বশীল হতে হবে।