নিজের তৈরি উড়োজাহাজ নিয়ে আকাশে উড়লেন মানিকগঞ্জের জুলহাস
Published: 4th, March 2025 GMT
চার বছরের চেষ্টায় নিজের তৈরি আরসি উড়োজাহাজ নিয়ে আকাশে উড্ডয়ন করলেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি জুলহাস মোল্লা।
মঙ্গলবার সকালে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনার চরে জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় উৎসুক জনতার সামনে জুলহাস তার নিজের হাতে তৈরি উড়োজাহাজ নিয়ে আকাশে উড্ডয়ন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন।
জুলহাস মোল্লা জানান, তার বাড়ি দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রাম। সেখানে ২০১৪ সালে জিয়নপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে। অর্থাভাবে আর পড়ালেখা হয়নি। নদী ভাঙনের কারণে ঘর হারিয়ে বর্তমানে শিবালয় উপজেলার তেওতা গ্রামে তাদের বসবাস। ছয় ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হিসেবে ঢাকায় কাজ করেন।
তিনি জানান, গত চার বছর আগে হঠাৎ মাথায় আসে ছোট ছোট রিমোট কন্ট্রোলার বিমান তৈরি করার। এর কিছুদিন পরে আল্ট্রালাইট বিমান তৈরির কথা মাথায় আসে। কিন্তু সেটা তৈরি করে তেমন সাফল্য আসেনি। পরে গত এক বছর চেষ্টা করে এই বিমানটি তৈরি করতে সক্ষম হন। মূলত টাকার যোগান না থাকায় পাম্প ইঞ্জিন, আর অ্যালুমিনিয়াম, এসএস দিয়ে মূলত বিমানটি তৈরি করা হয়। বিমানটির ওজন হয়েছে একশত কেজি। গতি পরিমাপের জন্য লাগানো হয়েছে একটি ডিজিটাল মিটার, পাখা তৈরি করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে। ইঞ্জিন চলে অকটেন অথবা পেট্রল দিয়ে।
জুলহাস মোল্লা জানান, উড়োজাহাজটির ঘণ্টায় গতি সর্ব্বোচ ৭০ কিলোমিটার। গত কয়েকদিন আগে উড়োজাহাজটি সফল ভাবে আকাশে উড্ডয়ন করতে সক্ষম হয়। আমি জীবনে কোনোদিন উড়োজাহাজে উঠিনি। এখন নিজের তৈরি উড়োজাহাজ দিয়ে আকাশে উড়ে স্বপ্নও পূরণ করেছি।
তিনি বলেন, প্রথম দিকে পরিবার ও এলাকাবাসী পাগল মনে করেছেন। তবে এখন সবাই উৎসাহ আর বাহাবা দিচ্ছে। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে এ নিয়ে কাজ করে যাওয়ার আগ্রহ দেখান তিনি।
জুলহাস দাবি করে বলেন, আমার আগে কেউ বাংলাদেশে নিজে বিমান তৈরি করে আকাশে উড়তে পারেনি। তবে অনেকেই চেষ্টা করেছিল।
জুলহাসের ছোটভাই নয়ন মোল্লা জানান, শুরু থেকেই আমি ভাইয়ে সঙ্গে ছিলাম। সব কাজ আমি সাথে থেকে করেছি। আমরা কোনো সময় দমে যায়নি। গত এক বছর দিনে আমরা পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বিমান তৈরি করতে গবেষণা ও কাজ চালিয়ে গেছি।
জুলহাসের বাবা জলিল মোল্লা বলেন জুলহাস ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের জিনিস নিয়ে ঘাটাঘাটি করত। পড়ালেখা বাদ দিয়ে এসব করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বলত, 'দেখবে আমি এমন একটা জিনিস বানাবো সবাইকে তাক লাগিয়ে দিবো।' আজ ছেলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ছেলের তৈরি বিমান আজ আকাশে উড়েছে। এখন সরকার যদি পাশে দাঁড়ায় তবেই জুলহাসের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
জাফরগঞ্জ এলাকায় গৃহবধূ রুখসানা বলেন সামনে থেকে কখনো উড়োজাহাজ দেখিনি। এলাকার ছেলে উড়োজাহাজ তৈরি করেছে তাই দেখতে এসেছি। এসে দেখলাম জুলহাসের উড়োজাহাজ আকাশে উড়ছে।
তেওতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, জুলহাসকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। এখন সরকারিভাবে ওর প্রশিক্ষণ ও সহায়তার প্রয়োজন। তিন থেকে চার মিনিট জুলহাসের উড়োজাহাজ আকাশে উড্ডয়ন করে আবার নেমে আসে। আজ বেশি বাতাস থাকায় ঝুঁকি এড়াতে আর বেশিক্ষণ বিমানটি আকাশে উড়ানো যায়নি।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবি
হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে স্মারকলিপি দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা–কর্মচারী।
বৃহস্পতিবার ২৮ হাজার ৩০৭ কর্মীর সই করা এক হাজার ৪২৮ পৃষ্ঠার এই স্মারকলিপি উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, সংস্কার দাবির কারণে মাঠপর্যায়ে কোনো কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও গত ১৬ অক্টোবর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ১০ জন কর্মকর্তাকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করে। একই দিন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরদিন সকাল থেকে শুরু হয় কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার এবং আরও ১৪ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এই ঘটনায় সমিতির কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দেয়, যার ফলে কিছু এলাকায় সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে।
স্মারকলিপি আরও বলা হয়, আরইবি এখনও মামলা, চাকরিচ্যুতি, বদলি, সাসপেন্ড বিভিন্ন হয়রানিমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। শুধু স্মারকলিপিতে সই দেওয়ার কারণেও সম্প্রতি মাদারীপুর ও রাজশাহীর কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সংযুক্ত করে তদন্তের নামে হয়রানি ও শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। চাকরি হারিয়ে, মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের ছেলেমেয়ের পড়াশোনাও চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি সমিতির ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর সই করা স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্মারকলিপিতে মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়েছে।