বাস শ্রমিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে জামালপুর জেলায় বাস চলাচল বন্ধ করেছে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক নেতারা। এতে সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছে। 

মালিক সমিতি ও শ্রমিক নেতারা সুষ্ঠু বিচার এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। দোষীদের আইনের আওতায় না নিয়ে আসা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়েছেন জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শুভ। 

এদিকে, বাস সংস্কারের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

আরো পড়ুন:

ঈদের ছুটিতে দেশে এসে সড়কে ঝরল ২ যুবকের প্রাণ

রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় কলেজছাত্র নিহত

প্রাণহানি বন্ধ ও বাস সার্ভিস সংস্কারের দাবিতে সোমবার (৩ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে পৌর শহরের বাইপাস মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও বেঞ্চ আড়াআড়ি করে ফেলে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলন দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে। এ সময় বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা শিক্ষাথীদের আলোচনার প্রস্তাব দেয়। শিক্ষার্থীরা আলোচনা প্রত্যাখ্যান করে মারমুখী হয়। এতে মনির নামে এক শ্রমিক আহত হয়।  

শ্রমিক আহতের প্রতিবাদে দুপুর ২টা থেকে বাস-সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ করে একইস্থানে জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। পরে দুপুর ৩টার দিকে প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলেও সারা দেশের সঙ্গে জামালপুরের বাস-সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে সারা দেশের সঙ্গে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছে।  

শ্রমিক হামলার সুষ্ঠু বিচার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরের দিকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেন জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।     সরেজমিন টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, শহরের বাইপাস এলাকার বিসিক শিল্পনগরীর সামনে জামালপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বাসগুলো ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে। শ্রমিক ও নেতাদের জটলা। যাত্রীরা টার্মিনালে এসে ফিরে যাচ্ছে। অনেকে বাসের অপেক্ষায় বসে আছে।

ব্যবসায়িক কাজে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এসেছেন জামালপুর শহরের হিরু সড়ক এলাকার রবিউল ইসলাম। তিনি কাপড়ের ব্যবসা করেন। তিনি জানান, কাপড়ের ব্যবসায়ীদের জন্য এখন ভরা মৌসুম। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকা যেতে পারছেন না। এখন একদিন ব্যবসা না হলে অনেক ক্ষতি হয়।      

টার্মিনালে কথা হয় গাইবান্ধা জেলার পোশাক শ্রমিক খোরশেদ আলমের সঙ্গে। গাজীপুর কোনাবাড়ি এলাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তিনি ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। ছুটি শেষ হয়েছে। আজকে কারখানায় যোগদান করতে হবে। তিনি জানান, তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে দেওয়ানগঞ্জ হয়ে জামালপুর এসেছেন। এসে দেখেন বাস বন্ধ। আজকে যোগদান করতেই হবে, না হলে চাকরি থাকবে না। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক আফরিন জান্নাত আঁখি বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীারা কারো ওপর চড়াও হবে এটা আমাদের সংগঠনের নিয়মে নেই। শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের ওপরে আক্রমণ করতে আসে। আমরা সহনশীল ও ভদ্রচিতভাবে সেটা কন্ট্রোল করি। আমরা সহনশীল না হলে বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারত। এ ঘটনায় কোনো শ্রমিক আহত হয়নি।’’

তিনি বলেন, ‘‘মানুষের যাতায়াতে বেশকিছু ট্রেন রয়েছে। বাস বন্ধ থাকায় ট্রেনগুলো সঠিক সময়ে যাতায়াত করছে। সাধারণ মানুষের সাময়িক সমস্যা হলেও জামালপুরের বাস সার্ভিস উন্নয়নে স্থায়ী সমাধান হবে।’’

এ প্রসঙ্গে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শুভ বলেন, ‘‘গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কিছু সন্ত্রাসী শ্রমিকের ওপর হাত তোলে। শ্রমিকের ওপর হাত তোলার প্রতিবাদে সারা জামালপুরে ধর্মঘট চলছে। যতক্ষণ পর্যন্ত শ্রমিকের ওপর হাত তোলা সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় নিয়ে না আসা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।’’

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো.

আতিক বলেন, ‘‘এ নিয়ে আমরা নিয়ে আলোচনায় বসেছি। আশা করি, খুব দ্রুত সমাধান হবে।’’  

জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম জানান, এ বিষয়ে সমাধানের জন্য আলোচনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/শোভন/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন র জন য ত কর ম ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারীদের বিচারসহ ১১ দাবি ঢাবি সাদা দলের

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার মানোন্নয়নসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে সাদা দলের নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান। 

স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম, অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার। এছাড়া ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও স্যার পিজে হার্টজ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ এমএ কাউসার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।   

আরো পড়ুন:

শেখ হাসিনার ফাঁসি দেখতে চান গুলিবিদ্ধ রিকশাচালক

বাংলাদেশের তরুণদের কাছে সারাবিশ্ব পরিবর্তনের শিক্ষা নিয়েছে: হারমান বেঞ্জামিন

স্মারকলিপিতে সাদা দলের নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার বাতিঘর। এর মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই উচ্চশিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নের অভিপ্রায়ে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা, শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ কার্যকর অপরিহার্য।

তারা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস ও উচ্চশিক্ষায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান অপরিসীম। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, সমাজ তথা দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তুলনামূলকভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের পাঠ-পঠন যেমন আধুনিক হয়নি, তেমনি এর অবকাঠামোরও সময়োপযোগী উন্নয়ন হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষা, সংস্কৃতি, গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের জন্য আবসন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণের জন্য সাদা দলের পক্ষ থেকে দেওয়া দাবিগুলো বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। 

স্মারকলিপিতে তারা ১১ দফা দাবি উপত্থাপন করেন। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য স্বতন্ত্র বেড নিশ্চিতকরণ; হলগুলোর খাবারের মান বৃদ্ধি ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা; শ্রেণি কক্ষের মানোন্নয়ন ও পাঠদানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি; বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ বৃদ্ধি; শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ সৃষ্টি।

অন্য দবিগুলো হলো- প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা; ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি; পরিবহন সুবিধা সম্প্রসারণ; স্টুডেন্ট কাউন্সিলিং ও মেন্টরশীপ কর্মসূচি উন্নতিকরণ; প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন; শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ রাস্তার সংস্কার; জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার নিশ্চিতকরণ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ