করপোরেট কর বাস্তবসম্মত করার প্রস্তাব মেট্রো চেম্বারের
Published: 4th, March 2025 GMT
করপোরেট করহার বাস্তবসম্মতভাবে কমানোর সুপারিশ করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। সংগঠনটি বলছে, এ দেশে কার্যকরী করহার অতি উচ্চ, যা ক্ষেত্রবিশেষে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হয়ে যায়। গত কয়েক বছরে করপোরেট কর কমানো হলেও লেনদেনের শর্তের কারণে বড় ও মাঝারি কোম্পানির পক্ষে এই শর্ত পালন করাও কঠিন।
এদিকে একক ভ্যাট হারের প্রস্তাব করেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানও তাদের দাবির সঙ্গে একমত।
আজ মঙ্গলবার আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক্–বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশের বড় দুই চেম্বারের নেতারা এসব দাবি জানান। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনবিআর কার্যালয়ে আজ দুপুরের পর এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
মেট্রো চেম্বারের যত দাবিএমসিসিআইয়ের পক্ষে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি কামরান টি রহমান। এমসিসিআই মোটাদাগে সাতটি প্রস্তাব করেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কোম্পানির করহার যৌক্তিক করা; ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য পৃথক করহার; কর প্রশাসন ও নীতি আলাদা করা; কর ব্যবস্থাপনা অনলাইনভিত্তিক করা; রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র (পিএসআর) প্রদর্শনের ক্ষেত্রে জটিলতা দূর করা; সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে অনুমোদিত তহবিলের ওপর করহার যৌক্তিক করা।
প্রাক্-বাজেট আলোচনায় এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রপ্তানি খাত। বাড়তি শুল্ক আরোপ হবে রপ্তানি খাতের ওপর। তাই দেশীয় শিল্প বিকাশে এনবিআরকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
এমসিসিআইয়ের সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম এনবিআরের নিজস্ব উদ্যোগে উদ্ভাবনী উপায়ে অটোমেশন করার পরামর্শ দেন। প্রাক্–বাজেট আলোচনায় মেট্রো চেম্বারের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহসভাপতি সিমিন রহমান, আনিস এ খান, পরিচালক আদিব এইচ খান, উজমা চৌধুরী প্রমুখ।
ভ্যাটের একক হারএকক ভ্যাট হারের প্রস্তাব করেছে এফআইসিসিআই। এই সংগঠনটি ২০২৭ সালের মধ্যে একক ভ্যাট হার ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে। একই অনুষ্ঠানে এফআইসিসিআইয়ের পক্ষে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ স্নেহাশিস বড়ুয়া।
স্নেহাশিস বড়ুয়া বলেন, যেসব খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, তা ২০২৭ সালের মধ্যে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা যেতে পারে। আবার যেসব খাতের ভ্যাট ১০ শতাংশের নিচে, সেসব খাতের হার ১০ শতাংশ করা যেতে পারে। এতে কার্যকর ভ্যাটের ভার কমে যাবে। প্রতিষ্ঠানের হিসাবব্যবস্থারও উন্নতি হবে।
এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘সব ব্যবসায়ী একমত হলে আমরা একক ভ্যাট হার করে দিতে পারি। প্রয়োজনে একক ভ্যাট হার কমাব। একক ভ্যাট হার হলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান হিসাব সংরক্ষণে জবাবদিহির মধ্যে আসবে।’
কর ব্যবস্থায় অটোমেশনের ওপর জোর দেন এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি ও ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার। তিনি বলেন, এনবিআর চাইলে অটোমেশন করতে এফআইসিসিআইয়ের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো সহায়তা দেবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: একক ভ য ট হ র ব যবস থ স আইয় র ত ব কর রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিভাজনের রাজনীতি নয়, ঐক্য ধরে রাখতে চায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ
বিভাজনের রাজনীতি নয়, ঐক্য ধরে রেখে স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় নতুন ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। সংগঠনটি বলছে, গণ-অভ্যুত্থানের পর যে সহাবস্থানের রাজনীতি তৈরি হয়েছে, সেই সহাবস্থানের রাজনীতির পক্ষে তাদের অবস্থান।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পরিচিতি সভায় সংগঠনটির নেতারা এ কথাগুলো বলেন। শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিন প্রাঙ্গণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা নতুন সংগঠনের নেতাদের জন্য শুভকামনা জানান।
সভায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী। পরিচিতি সভা পরিচালনা করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম ও মুখপাত্র রাফিয়া রেহনুমা হৃদি। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে রোববার টিএসসিতে গণ-ইফতার কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার সভায় বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি নয়; বরং লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়েছিলাম। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর যেই সহাবস্থানের রাজনীতি তৈরি হয়েছে, আমরা সেই সহাবস্থানের রাজনীতির পক্ষে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের যে বাইনারি পলিটিকস ছিল, সেখানকার বাইরে গিয়ে আমরা এখানকার ছাত্রদের, এখানকার জনগণের রাজনীতির প্রস্তাব করেছি। আমরা আশাবাদী আমরা যে মধ্যপন্থী রাজনীতির প্রস্তাব দিচ্ছি, সেখানে সবাইকে বাংলাদেশ প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারব।’
সভার সূচনা বক্তব্যে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, ‘আমি আজ আবেগাপ্লুত। সব ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ আজ একসঙ্গে বসে আছেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ, এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ই চেয়েছিলাম। আমরা এমন একটা ক্যাম্পাস গড়ে তুলব, যে ক্যাম্পাস আমাদের শহীদ ভাইয়েরা স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন। আমরা বিভাজনের রাজনীতি আর চাই না। আগামীর স্বপ্নের বাংলাদেশ নির্মাণে ঐক্য ধরে রেখে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব।’
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র আশরেফা খাতুন বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক সহাবস্থান তত দিন থাকবে, যত দিন পর্যন্ত আমরা অন্যায়ের বিপক্ষে আছি, যত দিন পর্যন্ত আমাদের রাজনীতি হবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও মুক্তির স্বার্থে।’ তিনি বলেন, ‘ভুল করলে আমাদের সমালোচনা করবেন। কারণ, আপনাদের যৌক্তিক সমালোচনা আমাদের চলার পথে পাথেয় হবে।’
বিরাজনীতিকরণ কোনো কিছুর সমাধান নয় উল্লেখ করে পরিচিতি সভায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, অভ্যুত্থানের সাত মাসে নানাভাবে বিভিন্ন কিছু মেরুকরণ হয়েছে, হওয়াটাই স্বাভাবিক। মেরুকরণের ফলে বিভিন্ন জায়গায় বিবাদ-বিভাজন হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক যে অধিকার, তা রক্ষায় এক হতে হবে।
ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম বলেন, নবগঠিত এ ছাত্রসংগঠন ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিপরীতে মুক্তির আশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা আশা, নতুন সংগঠনটি দেশের সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘আমরাও তাদের হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে যাব। তারা সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি করবে, এটাই প্রত্যাশা রাখছি।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দীন খান বলেন, জুলাইয়ের আন্দোলনের বড় একটি আবেদন ছিল সবাই কথা বলতে পারবে, মতামত প্রকাশ করতে পারবে। সেই জায়গা থেকে নতুন এই সংগঠ তাদের কাজ করার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তারা অবদান রেখেছে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব জাহিদ আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্যসচিব মহির আলম, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী। এ ছাড়া ছাত্র পক্ষ, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংসদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও তাঁদের বক্তৃতায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের জন্য শুভ কামনা জানান।
গত বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। শনিবার পরিচিতি সভার মাধ্যমে ছাত্রসংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে।