ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অষ্টাদশ বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে কয়েক দিন ধরে লাগাতার আক্রমণ করে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় অবাঙালি রাজ্যের মানুষের নাম ঢোকানো হয়েছে, যাঁদের পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি নিজেদের রাজ্যতেও ভোটার কার্ড রয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, বিষয়টি জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন। বিষয়টিকে আগামী দিনে তৃণমূল কংগ্রেস যে ভারতের নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপির বিরুদ্ধে একটা ইস্যুতে পরিণত করবে, তা বোঝা যাচ্ছে। কারণ, মমতা ‘ভুতুড়ে ভোটার’ খুঁজে বের করতে একটি কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটি আগামী বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বৈঠক করবে বলে আজ মঙ্গলবার জানানো হয়েছে।

‘ভুতুড়ে ভোটার’ কী

তৃণমূল কংগ্রেসের চাপে গত রোববার বিষয়টি নিয়ে সাফাই দেয় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ইলেকশন ফটো আইডেনটিটি কার্ড’ (এপিক) বা ভোটার কার্ডের নম্বর একটি থাকলেও একই ভোটারের একাধিক কার্ড থাকতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের এই বক্তব্য মানতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। গতকাল সোমবার তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচন কমিশনকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে বলেছে, কেন পশ্চিমবঙ্গে বাইরের রাজ্যের এত ‘ভুতুড়ে ভোটার’, তা কমিশনকে ব্যাখ্যা করতে হবে। নইলে এই ভোটারদের নাম ও অন্যান্য নথিপত্র প্রকাশ্যে আনবে তৃণমূল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত সপ্তাহে এক সভায় অভিযোগ তুলে বলেছেন, অন্য রাজ্যের এই ভুতুড়ে ভোটারের কারণেই দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি নির্বাচনে জিতছে। যাঁরা রাজ্যের ভোটার নন, তাঁদের অন্য রাজ্য থেকে এনে রাতারাতি ভোটার বানিয়ে ভোট দেওয়ানো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গেও এটা করার চেষ্টা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বলেন, তাঁরা যেন অবশ্যই নিজ নিজ বুথের ভোটার তালিকার প্রতিটি নাম খতিয়ে দেখেন।

মমতা এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূল কংগ্রেসের বিশাল দলীয় কর্মী এবং ছোট ও মাঝারি মাপের নেতারা মাঠে নেমে পড়েন এবং দিন দুয়েকের মধ্যেই হাজার হাজার ভুতুড়ে ভোটারের তালিকা প্রস্তুত করেন। এই তালিকার একাংশ তৃণমূল কংগ্রেস প্রকাশও করেছে। তৃণমূল নেতারা এখন বলছেন, বাকি নামগুলোও তাঁরা প্রকাশ করবেন।


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মদদেই এই ভুয়া বা ভুতুড়ে ভোটারদের বিজেপিশাসিত রাজ্য থেকে এনে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় ঢোকানো হয়েছে।

তৃণমূলের পদক্ষেপ

বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে মমতা যে কোর কমিটি গঠন করেছেন, সেই দলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও রয়েছেন। কমিটির মাথায় রয়েছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা সুব্রত বক্সী। কমিটিতে আরও রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলার তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি এবং জেলা স্তরের জ্যেষ্ঠ ও পোড় খাওয়া নেতারা।

এই কমিটি কীভাবে বিষয়টি তদন্ত করবে, ভুয়া বা ভুতুড়ে ভোটারদের নাম নির্বাচন কমিশনের হাতে তুলে দেবে নাকি প্রকাশ্যে আনবে—তা খতিয়ে দেখা হবে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতে ভুয়া ভোটারের খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার চম্পাহাটি গ্রামসহ মুর্শিদাবাদের রানীনগর, দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ইত্যাদি এলাকা।

আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের কোন কোন জেলার কোন কোন অঞ্চলে বেশি ভুতুড়ে ভোটার থাকতে পারে—তা নিয়ে আলোচনা করবে। ওই সব অঞ্চলে বিশেষ দল গঠন করে নজরদারি চালানো হবে বলেও দলীয় নেতৃত্ব জানিয়েছে।

দলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা অভিযোগ ইতিমধ্যে সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং একাধিক রাজ্যে একই ভোটারের নামের অভিযোগ যে ঠিক, তা (নির্বাচন কমিশনের কথাতেই) স্পষ্ট হয়েছে। ভুতুড়ে ভোটার খুঁজে বের করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা চলবে।

তৃণমূলের এই ভুতুড়ে ভোটার খুঁজে বের করার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিরোধী বিজেপিদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের চাপে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন শুভেন্দু ও বিজেপির নেতৃত্ব।

নির্বাচনের প্রায় এক বছর বাকি থাকলেও এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে হাওয়া গরম হতে শুরু করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন দ য প ধ য য

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের মদদেই হাসিনা স্বৈরাচার হয়েছেন: এ্যানি

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, ‍“হাসিনা একদিনে স্বৈরাচার হননি। ভারতের মদদেই হাসিনা দিনে দিনে স্বৈরাচার হয়ে উঠেছিলেন। হাসিনার গুম, খুনের পেছনেও ভারতের মদদ ছিল।” 

তিনি বলেন, “গত ১৫-১৬ বছর এদেশে গুম, খুন হয়েছে। সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনেও শত-শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। সবই ভারতের মদদেই হয়েছে। ভারত নিজেদের স্বার্থেই বারবার নৌকাকে ক্ষমতায় রেখে ছিল। নির্বাচনে আগে তাদের সচিব-কর্মকর্তারা এসে হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সব কলাকৌশল করে যেতেন।” 

শনিবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে লক্ষ্মীপুরের উত্তর মজুপুর সনাতনী দেবালয়ের আয়োজনে মাদাম স্নানঘাটে অষ্টমী স্নান ও হরিনাম যজ্ঞ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

আরো পড়ুন:

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারকে তারেক রহমানের পক্ষে সহায়তা

ইউনূস-মোদির বৈঠক আশার আলো দেখাচ্ছে: মির্জা ফখরুল

এ্যানি বলেন, “ভারতের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে সেসব কথা বলা হচ্ছে, তা মিথ্যা। বাংলাদেশের হিন্দুরা ৫ আগস্টের পরে আগের চেয়ে বহুগুণে ভালো আছেন। আসলে ভারত নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশের হিন্দুদের ব্যবহার করতে চাচ্ছে। যা বাংলাদেশের হিন্দুরা কখনো কামনা করে না।”

তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী লীগ হিন্দুদের নিজেদের সম্পত্তি মনে করতো। হিন্দুরা আওয়ামী লীগের সময়ই বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের বাড়ি, দোকানপাট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই দখল করেছে। তারেক রহমান ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন, সেখানে সব ধর্মের কথা বলা আছে। বাংলাদেশের হিন্দু-খ্রিস্টান ও মুসলমানসহ সবাই মিলে মিশে থাকবেন, কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশে বহু দলীয় গণতন্ত্র সৃষ্টি করেছেন। সব ধর্মের মানুষকে নিয়েই তিনি রাজনীতি করেছেন।”

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের লক্ষ্মীপুর শাখার সভাপতি শংকর মজুমদা, ডা. রতনদ্বীপাল ও বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল শাহ।

ঢাকা/জাহাঙ্গীর/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ