চোরাচালান ও জালিয়াতি করে ১৩৩ কোটি টাকা উপার্জন করেছেন সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান: সিআইডি
Published: 4th, March 2025 GMT
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ব্রাহামা জাতের গরু আমদানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন সাদিক অ্যাগ্রোর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে গরু ও মহিষ আনতেন। ভুটান ও নেপাল থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে ছোট আকৃতির ভুট্টি গরু বাংলাদেশে আনতেন। পরে এগুলো তিনি উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতেন। মঙ্গলবার বিকেলে মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির অর্গানাইজড ক্রাইম টিমের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক একরামুল হাবিব এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ইমরান চোরাচালান, প্রতারণা ও জালিয়াতি করে ১৩৩ কোটি টাকার বেশি অর্থ উপার্জন করেছেন। সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। মানি লন্ডারিং মামলায় সোমবার ঢাকার মালিবাগ থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে একরামুল হাবিব জানান, তিনি প্রতারণার মাধ্যমে দেশীয় গরু ও ছাগলকে বিদেশি ও ‘বংশীয়’ গরু ও ছাগল বলে প্রচার চালিয়ে উচ্চ মূল্যে কোরবানির পশুর হাটে বিক্রি করতেন। এভাবে আয় করা ১২১ কোটি ৩২ লাখ ১৫ হাজার ১৪৪ টাকা তিনি বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন। এ ছাড়া অবৈধ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ২০০ টাকা ইমরান তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ মেটাল লিমিটেডের নামে এফডিআর খুলে বিনিয়োগ করেন।
সিআইডি জানায়, প্রাথমিকভাবে মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য–উপাত্ত পাওয়ার পর গতকাল ইমরান হোসেনসহ সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করে সিআইডি।
মামলায় ইমরান হোসেন, সাদিক অ্যাগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুল আলম (৪৫) এবং অজ্ঞাতনামা ৫-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের মাধ্যমে অর্জিত প্রায় ১৩৩ কোটি ৫৫ লাখ ৬ হাজার ৩৪৪ টাকা টাকা হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন।
গত বছর কোরবানির ঈদে ইমরানের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় (প্রাথমিক দর) ‘উচ্চবংশীয়’ ছাগল কেনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন তৎকালীন এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত। এরপর আলোচনায় আসে সাদিক অ্যাগ্রো খামার।
বেশি দামে গরু বিক্রি করে আলোচিত ছিল সাদিক অ্যাগ্রো। দেশে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু আমদানি করেছিল সাদিক অ্যাগ্রো। কাস্টমস বিভাগ বিমানবন্দরে সেই গরু জব্দ করে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অবশ্য কৌশলে সেই গরু সাদিক অ্যাগ্রোকেই দিয়েছিল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স আইড কর ছ ন স আইড ইমর ন
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন।