চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় চলতি বছরের চলমান শিক্ষা কর্মসূচি এবং ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। এতে প্রতিভা বিকাশকে জাতীয় কৌশল ও বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অব্যাহত বা কাঠামোর বাইরে শিক্ষাকে তাদের প্রতিভা বিকাশ ও সামাজিক সেবা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।’ 

এতে আরো বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত তাদের শিক্ষাগত অবস্থান, একাডেমিক সামর্থ্য, বাজারের চাহিদা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর কর্মসংস্থানের প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি বিবেচনা করা। সেইসঙ্গে নতুন কর্মসূচি চালুর আগে যৌক্তিকতা যাচাই এবং এসব কর্মসূচির কাঠামো নিয়মিত উন্নত করাও দরকার বলে জানানো হয় এতে।

অব্যাহত বা চলমান শিক্ষা চীনের নিয়মিত উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার একটি সমান্তরাল ধারা। সাধারণত নিয়মিত উচ্চশিক্ষা বলতে বোঝায় চীনের কাওখাও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসভিত্তিক পূর্ণকালীন শিক্ষা। অন্যদিকে, অব্যাহত শিক্ষা মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, যারা দক্ষতা উন্নয়ন বা নতুন যোগ্যতা অর্জন করতে চান। এটি অনলাইন শিক্ষা, প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষার স্বশিক্ষা পরীক্ষা এবং উন্মুক্ত শিক্ষার মতো ক্ষেত্রগুলোর সমন্বয়ে তৈরি।

অব্যাহত শিক্ষা কর্মসূচির কাঠামো উন্নত করতে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যাদের শর্ত পূরণের সক্ষমতা আছে, তারা উন্নত উৎপাদন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, জীবনবিজ্ঞান, জ্বালানি, সবুজ ও নিম্ন-কার্বন উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং আর্থিক প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রে নতুন কর্মসূচি চালু করতে পারে। পাশাপাশি, গৃহস্থালি সেবা ও অন্যান্য জনসেবামূলক খাতেও এ ধরনের শিক্ষাক্রম চালুর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার, দুর্লভ ভাষা, বৈদেশিক আইনি ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মতো জরুরি চাহিদাসম্পন্ন ক্ষেত্রেও নতুন কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে।

২০২২ সালে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় অব্যাহত শিক্ষা সংস্কারের জন্য একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। এর লক্ষ্য ছিল অস্পষ্ট অবস্থান, অপর্যাপ্ত মানদণ্ড, দুর্বল কাঠামো এবং নিম্নমানের প্রতিভা বিকাশের সমস্যা সমাধান করা, পাশাপাশি উচ্চমানের শিক্ষা উন্নয়নকে উৎসাহিত করা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে ১,৭২৫টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কাঠামোর বাইরে শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা করেছে, যেখানে মোট ১ কোটি ২০ লাখ ৯৩ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল—যা দেশের মোট উচ্চশিক্ষা ভর্তির প্রায় ২৫ শতাংশ।

নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অব্যাহত শিক্ষা কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে প্রাপ্তবয়স্কদের কলেজ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে। এ ছাড়া, পেশাদার শিক্ষার মৌলিক মানদণ্ড বজায় রাখা, ন্যূনতম অধ্যয়নকাল নির্ধারণ এবং স্নাতক সনদ প্রক্রিয়াকেও এর মধ্যে অন্তুর্ভুক্ত করা হবে।

তথ্য ও ছবি: চায়না ডেইলি

ঢাকা/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে। 

আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
 
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
 
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
 
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
 
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
 
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
 
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ