ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার পাশাপাশি আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত, খাবারের মান বৃদ্ধি, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, শিক্ষার মানোন্নয়ন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিত করাসহ ১৩টি দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানকে তারা এসব দাবি–সংবলতি স্মারকলিপি দেয়।

স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুস সালাম এবং অধ্যাপক মো.

আবুল কালাম সরকার, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ এম এ কাউসার।

স্মারকলিপিতে সাদা দল জানায়, যেকোনো সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নির্মাণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা। আধুনিক উচ্চশিক্ষা একটি দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই উচ্চশিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যান। তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নের অভিপ্রায়ে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা, শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ কার্যকর অপরিহার্য।

সাদা দলের পক্ষ থেকে দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে—

১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছেলে শিক্ষার্থীদের জন্য ১৪টি এবং মেয়েদের জন্য ৫টি আবাসিক হল ও ৪টি হোস্টেল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর চাহিদার তুলনায় হলগুলোতে আবাসনসুবিধা অপ্রতুল। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসনসংকট নিরসনের লক্ষ্যে নতুন হল নির্মাণ এবং পুরোনো ও জরাজীর্ণ হলগুলোকে দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি স্বতন্ত্র শয্যা নিশ্চিত করতে হবে।

২. বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে খাবার মানসম্পন্ন নয়। শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় ক্যালোরি পূরণ নিশ্চিত করতে হলগুলোতে খাবারের মান বাড়াতে হবে। বিশুদ্ধ সুপেয় পানির চাহিদা পূরণে প্রতিটি হলে পর্যাপ্তসংখ্যক ইলেকট্রিক ফিল্টারের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শ্রেণিকক্ষগুলোর অবকাঠামো সংস্কার ও উন্নয়ন জরুরি। এ ছাড়া শিক্ষকদের গতানুগতিক পাঠদানের পরিবর্তে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সময়ের দাবি। এ দাবি পূরণে শ্রেণিকক্ষগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।

৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ অন্যান্য গ্রন্থাগারের অবকাঠামো উন্নয়নসহ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক বই ও জার্নালের সংখ্যা বৃদ্ধি, অনলাইন রিসোর্সগুলোর এক্সেস আরও সহজলভ্য করা। শিক্ষার্থীদের নিবিড় জ্ঞান পরিচর্যা, গবেষণা ও সৃষ্টিশীলতার বিকাশ নিশ্চিত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ টিউশনিসহ অন্যান্য কাজ করে তাঁদের ব্যয় নির্বাহ করেন। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ও গবেষণায় পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। এটি তাদের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাকেও নষ্ট করে। তাই অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও গবেষণাকেন্দ্রে গবেষণা সহযোগী ও অন্যান্য খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ তৈরি করা জরুরি। তদুপরি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে অনলাইন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এসব কাজের জন্য ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট জব সেন্টার স্থাপন করা।

৬. পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া প্রথমবর্ষের অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় বৃত্তির ব্যবস্থা করা।

৭. শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৮. শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনসুবিধা সম্প্রসারণ করতে হবে। বাস সার্ভিসের সময়সূচি বৃদ্ধি করে রাত আটটা পর্যন্ত করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।

৯.শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সঠিক পরিচর্যার নিমিত্তে বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট কাউন্সিলিং সেন্টারের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া স্টুডেন্ট মেন্টরশিপের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা তাঁদের ক্যারিয়ার নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ার নির্বাচন করতে পারে।

১০. ভর্তিসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্নে শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও দুর্ভোগ লাঘবে প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে রেজিস্ট্রার অফিসসহ সব দপ্তরের কার্যক্রম অনলাইনভিত্তিক করতে হবে।

১১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সীমানাপ্রাচীর না থাকায় ক্যাম্পাসে বহিরাগত ও ভবঘুরেদের অবাধ বিচরণ লক্ষ করা যায়। তারা ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্তকরণ, ছিনতাহসহ নানা অসামাজিক কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও ভবঘুরেদের বিতাড়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে হবে। তদুপরি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামের স্বার্থে ও চুরি ছিনতাই রোধে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় এনে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

১২. বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বেহাল রাস্তাগুলো দ্রুত মেরামত করে শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের চলাচল নিরাপদ করতে হবে।

১৩. চব্বিশের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলাকারী ছাত্রনামধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দোসর ও শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের হেনস্তার সঙ্গে জড়িত শিক্ষদের তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষ র থ দ র জন য ন শ চ ত করত ন শ চ ত কর স ম রকল প র ব যবস থ ন র পদ হলগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের কাছে সব পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়ার দাবি শিক্ষা সংস্কৃতি আন্দোলনের

অবিলম্বে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের কাছে সব পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষা সংস্কৃতি আন্দোলন।

আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক মাহমুদ সেলিম ও সদস্যসচিব রুস্তম আলী।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথাসময়ে বই সরবরাহ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বছরের প্রথম দুই মাস অতিক্রান্ত হয়ে তৃতীয় মাস চলছে। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়গুলোতে ৪০ দিনের রমজানের ছুটি শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন২ মাস চলে গেল, আর কবে সব বই পাবে শিক্ষার্থীরা০৩ মার্চ ২০২৫

শিক্ষা সংস্কৃতি আন্দোলনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, মাধ্যমিক স্তরে ৬ কোটি ২২ লাখ পাঠ্যপুস্তক এখনো ছাপা হয়নি। বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে, কাগজসহ নানা সংকটের কারণে এনসিটিবি চলতি মাসে সব বই পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা দিলেও প্রকৃতপক্ষে তা সম্ভব নয়।’

আরও পড়ুনআজ থেকে ৪০ দিনের ছুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে০২ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ