নির্বাচনের অর্থোপেডিক সোসাইটির কমিটি চান চিকিৎসকরা
Published: 4th, March 2025 GMT
বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে মুখোমুখি হয়ে পড়েছে বিবাদমান দুটি পক্ষ। এতে সোসাইটির কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির পূর্ববর্তী কমিটি পদত্যাগ করলে এই প্রশাসনিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়। গ্রুপিং বন্ধ করাসহ সোসাইটির কার্যক্রম সচল রাখতে নির্বাচনের মাধ্যমে অর্থোপেডিক সোসাইটির কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা জানান, বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটি ১৯৭৯ সালে গঠিত হওয়ার পর থেকে ঐতিহাসিক পরিক্রমায় একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
লিখিত বক্তব্যে অর্থোপেডিক চিকিৎসক ডা.
তিনি বলেন, “পরবর্তীতে সিনিয়র চিকিৎসকদের হস্তক্ষেপে উভয়পক্ষের কার্যকলাপ স্থগিত করে সম্মিলিত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। যদিও সিংহভাগ অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াকিল, ডা. বিপ্লব এবং ডা. রবি পরিষদের সাথেই ছিলেন। তবু বৃহত্তর স্বার্থে আমরা এতে সম্মত হই। কিন্তু ঐ ক্ষুদ্র গোষ্ঠী পুনরায় আলাপ আলোচনার তোয়াক্কা না করে, ওয়াদা বরখেলাপ করে একটি পরিবর্তিত ও অগ্রহণযোগ্য কমিটি ঘোষণা করে যেখানে ফ্যাসিবাদী চক্রের সম্পৃক্ততা স্পষ্ট।”
“আমরা সিনিয়র চিকিৎসকদের সম্মতিতে যে ৮১ সদস্য করেছিলাম তা আজ ১৬১ সদস্য কমিটিতে রুপান্তরিত করলাম। পাশাপাশি সামনের কমিটি আমরা অর্থোপেডিক চিকিৎসকদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণ করতে চাই।”
এ সময় অর্থোপেডিক চিকিৎসক প্রফেসর হাসান মাসুদ, প্রফেসর পারভেজ এহসান, প্রফেসর মনিরুল আলম মিন্টু, ডা. ওয়াকিল, ডা. তাজুল ইসলাম রবি, ডা. শামিম, ডা. মাসুদ, ডা. শফিকুল ইসলাম, ডা. এবিএম জাকির হোসেন, ডা. কামরুল ইসলাম, হোসাইন রাসেল, ডা. মহসিন, ডা. শামিম, ডা. সাব্বির, ডা. ইমরানুর রহমান সনেট, ডা. জিয়া, মাসুম, ডা. মতিন, ডা. আশিক, ডা. রাজু, ডা. মামুন, ডা. রিফাত, ডা. সোহান, ডা. পলাশ, ডা. হিমেল, ডা. শিহাব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ক ৎসকদ র স স ইট র ক
এছাড়াও পড়ুন:
বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় অকাল সন্ধ্যা
সরকারি হাসপাতালের বৈকালিক বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধ হইবার বিষয়টি দুঃখজনক। কারণ প্রথমত, এই ব্যবস্থার অধীনে একজন রোগীকে বিশেষত চিকিৎসা পরামর্শ ও রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ যেই অর্থ ব্যয় করিতে হইত, উহা বেসরকারি খাতের সমমানের সেবা ব্যয় অপেক্ষা অনেক কম ছিল। ফলে বিশেষত সীমিত আয়ের মানুষদের জন্য উহা ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। দ্বিতীয়ত, এই ব্যবস্থার কারণে চিকিৎসা সেবাপ্রাপ্তি প্রশ্নে দেশে ধনী-দরিদ্রের দৃষ্টিকটু বৈষম্য হ্রাসের যেই সম্ভাবনা সৃষ্টি হইয়াছিল, তাহা বন্ধ হইয়া গেল। সেই হিসাবে ইহাকে গরিবের হক মারিবার আয়োজনও বলা যাইতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে দুই দফায় রাজধানীসহ দেশের ১৮৩টি সরকারি হাসপাতালে এই স্বল্পমূল্যের সেবা চালু করে সরকার। এক পর্যায়ে উহাতে রোগ নির্ণয়ের সুবিধাও যুক্ত হয়। প্রতিদিন বেলা ৩টা হইতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পালাক্রমে রোগী দেখিবার বিধান চালু করা হয়। নির্ধারিত ফি ধরা হয় ৫০০ টাকা, যাহার মধ্যে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতাকারীর ভাতা এবং সার্ভিস চার্জ বাবদ নির্দিষ্ট অঙ্ক নির্ধারিত ছিল।
বলিয়া রাখা প্রয়োজন, একই সেবার জন্য বেসরকারি কোনো চিকিৎসা কেন্দ্রে শুধু চিকিৎসকের ফি বাবদ ৮০০ হইতে ১৫শ টাকা অবধি দিতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই সেবাটি ব্যাপক প্রচার না থাকিবার পরও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, শুরু হইতে গত বৎসরের অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ১৮৩টি হাসপাতালে ২ লক্ষ ৩০ সহস্রাধিক মানুষ এই সেবা গ্রহণ করিয়াছেন। এই রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ১২ লক্ষাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হইয়াছে। অস্ত্রোপচার হইয়াছে প্রায় আট সহস্র।
সোমবার সমকাল জানাইয়াছে, এই বৈকালিক সেবায় নিয়োজিত অধিকাংশ চিকিৎসক অদ্যাবধি কোনো ভাতা পান নাই। ইহার সহিত যুক্ত হইয়াছে অন্যান্য খাতের ন্যায় স্বাস্থ্য খাতেও উদ্ভূত ৫ আগস্ট-পরবর্তী জটিল পরিস্থিতি। এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ঘোষণা না দিয়াই হঠাৎ সেবাটি বন্ধ করিয়া দিয়াছে। উদ্বেগজনক হইল, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলিয়াছেন, নূতন করিয়া উক্ত বৈকালিক চিকিৎসা সেবা চালু হইতেছে না।
তাহাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার সমগ্র স্বাস্থ্য খাতকে নববিন্যাসের দিকে অগ্রসর হইতেছে। উহারই অংশরূপে সমগ্র দেশে রেফারেল পদ্ধতির মাধ্যমে সেবাদানের পরিকল্পনা চলিতেছে। এই পদ্ধতিতে রোগীকে তাহার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী এক চিকিৎসা কেন্দ্র হইতে অপর চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়। ইহাতে একদিকে রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা নিশ্চিত হয় বিধায় চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক প্রকার শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা পায়। অপরদিকে হরেদরে সকল প্রকার রোগী দেখিতে হয় না বলিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সময় বাঁচে এবং তাহারা রোগীর প্রতি অধিকতর মনোযোগ দিতে সক্ষম হন। অতএব, সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় রেফারেল পদ্ধতি চালু অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত বিষয়। কিন্তু ইহার জন্য সরকারি হাসপাতালে স্বল্প ব্যয়ে বিশেষজ্ঞ সেবাপ্রাপ্তি বন্ধ হইবে কেন? এই ব্যবস্থা বরং উক্ত রেফারেল পদ্ধতির পরিপূরক হইতে পারিত। কারণ নিছক রেফারেল পদ্ধতি স্বল্প ব্যয়ে মানসম্মত চিকিৎসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে না।
বিগত সরকার চালু করিয়াছিল বলিয়া বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবাটি বন্ধ হইল কিনা, আমরা জানি না। তবে এই কার্যক্রমে বাধ্যতামূলক যুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনেকে একই সময়ে বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে বিপুল অর্থের বিনিময়ে সেবা দিয়া থাকেন। অভিযোগ রহিয়াছে, তাহাদেরই একটা অংশ পকেট ভারী করিবার সুযোগ হ্রাস পাইবার কারণে উক্ত বৈকালিক সেবা বন্ধের সহিত যুক্ত থাকিতে পারেন। যাহাই হউক, আলোচ্য সেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকা জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। যখন রেফারেল পদ্ধতি চালু হইবে তখন প্রয়োজনে বৈকালিক সেবা কার্যক্রম লইয়া ভিন্ন ভাবনা ভাবিবার অবকাশ সৃষ্টি হইলেও হইতে পারে।