ছেলেবেলার শিক্ষা—‘কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলতে নেই’। সেই ভুল করে মহাবিপাকে পড়েছেন কংগ্রেসের মুখপাত্র শামা মুহাম্মদ। ভারতের ক্রিকেট অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে তিনি ‘মোটা’ বলায় রে রে করে উঠেছে বিজেপি। শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক।

শামা অবশ্য অনড়। দলের নির্দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা পোস্ট মুছে দিলেও তিনি বলছেন, কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি। শুধু খেলোয়াড় হিসেবে রোহিত শর্মার ফিটনেসের প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি মনে করেন, অন্য অনেকের তুলনায় ফিটনেসের দিক থেকে রোহিত দুর্বল।

আত্মপক্ষ সমর্থনের পাশাপাশি শামা অবশ্য বিজেপিকেও রেয়াত করেননি। রোহিতকেই নিয়ে কয়েক বছর আগে করা অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতের (বর্তমানে বিজেপি নেত্রী ও সংসদ সদস্য) মন্তব্য তুলে দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিজেপির ‘শাউটিং ব্রিগেডের’ উদ্দেশে বলেছেন, ‘এখন কী বলবেন? সে সময় বিজেপির একজনও কঙ্গনার সমালোচনা করেননি। অথচ সেদিন এই রোহিত শর্মাকেই কঙ্গনা ‘ধোপার কুকুর’ বলেছিলেন’।

এরই পাশাপাশি শামা টেনে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও। বলেছেন, কয়েক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে স্থূলতার বিপদ সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, দেশের প্রতি আটজনের মধ্যে একজন স্থূল। তিনি বিশেষ করে বলেছিলেন, শিশুদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা মারাত্মকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। স্থূলতা রুখতে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেককে তেল খাওয়া কমানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ১০ শতাংশ তেল কম খেতে। তাতেই অনেক উপকার হবে।

মোদির ওই বক্তব্যের উল্লেখ করে শামা বলেছেন, রোহিতের স্থূলতা নিয়ে তিনিও সেটাই বলতে চেয়েছেন। বডি শেমিং তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না।

এই বিতর্কের মধ্যেই চিকিৎসাসংক্রান্ত অন্যতম সেরা সাময়িকপত্র ‘দ্য ল্যানসেট’ জানিয়েছে, বর্তমান বিশ্বে স্থূলতা বা মোটা হয়ে যাওয়া এক বিশ্রি প্রবণতা। এভাবে চললে আগামী ২৫ বছর পর ২৫ বছরের বেশি বয়সী ৪৫ কোটি ভারতীয় স্থূল বলে বিবেচিত হবেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের আগে থাকবে একমাত্র চীন (৬২ কোটি)। ভারতের পরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র (২১ কোটি)।

সামাজিক মাধ্যমে শামা গতকাল সোমবার ওই বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘খেলোয়াড় হিসেবে রোহিত শর্মা মোটা। ওঁর ওজন কমানো দরকার। তা ছাড়া রোহিত মাঝারি মাপের ক্রিকেটার। ব্যক্তিত্বহীন অধিনায়ক। তিনি ভাগ্যবান যে ভারতের অধিনায়ক হয়েছেন।’

ওই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপি নেতারা রে রে করে ওঠেন। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মান্ডবিয়া কটাক্ষ করে বলেন, কংগ্রেসের উচিত অ্যাথলেটদের শান্তিতে থাকতে দেওয়া। তাঁরা তাঁদের পেশাদার জীবন সামলাতে সক্ষম। কারও শরীর নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়। যাঁরা দেশের জন্য লড়ছেন, তাঁদের অপমান করা একেবারেই উচিত নয়।

শামাকে আক্রমণ করে বিজেপির মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা বলেছেন, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে যাঁরা ৯০টি নির্বাচনে হেরেছেন, তাঁরা রোহিতের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। রোহিতের নেতৃত্বেই ভারত কিন্তু গত বছর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে।

বিতর্কটা এমন সময় দানা বাঁধে, যখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি। বিতর্ক শুরু হতেই কংগ্রেস জানিয়ে দেয় মন্তব্যটি দলের নয়। অন্যতম মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, কংগ্রেস সব ক্রীড়াবিদকে সম্মান করে। তাঁদের অবদানের মর্যাদা দেয়।

বিসিসিআইয়ের সহসভাপতি ও কংগ্রেস নেতা রাজীব শুক্ল বলেন, রোহিত দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। ফিটও। দলকে সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করছেন। তিনি দারুণ নেতা।

শামা তাঁর মন্তব্য মুছে দিলেও বিজেপিকে ছাড়ছেন না। টেনে এনেছেন এই রোহিতকে নিয়েই চার বছর আগে করা কঙ্গনা রানাউতের মন্তব্য। সেটা তুলে দিয়ে বিজেপির কাছে জানতে চেয়েছেন, তখন কেউ প্রতিবাদী হয়েছিলেন কি না। রোহিত ও কঙ্গনার করা পোস্ট দুটি জুড়ে ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মান্ডবিয়ার কাছে শামা জানতে চেয়েছেন, ‘আপনার কিছু কি বলার আছে? এমনিই জানতে চাইছি।’

চার বছর আগে ২০২১ সালে কৃষক আন্দোলনের সময় রোহিত শর্মা সামাজিক মাধ্যমে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে লিখেছিলেন, ‘সবাই একযোগে কোনো সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা আমরা যখন করেছি, তখনই ভারত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। দেশ গঠনে আমাদের কৃষকদের অবদান অপরিসীম। আমি নিশ্চিত, সমাধানের উপায় খুঁজতে সবাই একজোট হয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করবেন।’

রোহিতের এই মন্তব্যেরই তীব্র সমালোচনা করেছিলেন কঙ্গনা। তিনি লিখেছিলেন, ‘ক্রিকেটাররা সবাই কেন ধোপার কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করছে, যারা ঘরেরও নয়, ঘাটেরও নয়? কেনই বা কৃষকেরা সেই আইনের বিরোধিতা করছে, যা বৈপ্লবিকই শুধু নয়, তাদের মঙ্গলের জন্য তৈরি? যারা হইচই করছে তারা সন্ত্রাসবাদী। জোরের সঙ্গে সেটা বলুন না। কিসের এত ভয়?’

এই বিতর্কের মধ্যেই শামা অবশ্য একজনের সমর্থন পেয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ সংসদ সদস্য অধ্যাপক সৌগত রায় বলেছেন, কংগ্রেসনেত্রী ঠিকই বলেছেন। রোহিত যেভাবে খেলছেন, তাতে তাঁর দলে জায়গা পাওয়াই উচিত নয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ল ন মন ত র বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বড় সংঘাতের শঙ্কা

কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সংঘাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা দাবি করে ওই ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কঠোর বার্তা দিয়েছেন। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীও ‘শক্ত ও স্পষ্ট জবাবে’র কথা বলেছেন। অপর দিকে পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে শক্ত জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এ অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে বড় সংঘাতের শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

গত মঙ্গলবার পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে অল্প পরিচিত সংগঠন রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, পাকিস্তান বরাবরই সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার কথা অস্বীকার করে আসছে। তবে তারা বলে আসছে, সার্বভৌম কাশ্মীরকে সমর্থন করে তারা। পেহেলগাম হামলার ঘটনাটি প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা অনেকটাই বাড়িয়েছে, যারা এরই মধ্যে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে।

নাম প্রকাশ না করে ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’ ঘোষণা ও উপত্যকার মানুষকে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই বন্ধ না করতে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের আহ্বানের এক সপ্তাহ পর এ হামলা ঘটল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক নীতিনির্ধারক ও দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘অঞ্চলটির জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী একে অপরকে চোখ রাঙানি দিচ্ছে।’ 

হামলার ঘটনায় প্রথম প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ভারত পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত-বাণিজ্য কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে। ভারত অতীতে একাধিকবার পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত জড়ালেও কখনও এ চুক্তি স্থগিত করেনি। 

জিও নিউজ অনলাইন জানায়, সিন্ধু নদের পানিচুক্তি স্থগিত করা নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে ইসলামাবাদ। ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে এনএসসির বৈঠকে বেশ কিছু পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিবৃতিতে সিদ্ধান্তগুলো জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান কঠোরভাবে ভারতের সিন্ধুর পানিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা নাকচ করেছে। পাকিস্তান বলেছে, এ চুক্তি বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় হওয়া বাধ্যবাধকতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি; এককভাবে এটি স্থগিতের কোনো বিধান নেই। পানি পাকিস্তানের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু, তা দেশের ২৪ কোটি মানুষের জীবন রক্ষা করে এবং যে কোনো মূল্যে এ পানি পাওয়ার বিষয়টি রক্ষা করা হবে। সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান যে পানি পাবে, তার প্রবাহ বন্ধ বা অন্যদিকে নেওয়ার যে কোনো চেষ্টা এবং ভাটি অঞ্চলের অধিকার ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা যুদ্ধের শামিল বলে বিবেচনা করা হবে এবং জাতীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করে এর জবাব দেওয়া হবে।

পাকিস্তান বলেছে, ভারতের ‘বেপরোয়া ও দায়িত্বহীন আচরণের’ মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। ফলে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিতের অধিকার প্রয়োগ করবে এবং তা শুধু সিমলা চুক্তি স্থগিতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আর তা ভারত পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসবাদ উস্কে দেওয়া, আন্তঃসীমান্ত হত্যা বন্ধ করা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবগুলো না মেনে চলা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

পাকিস্তান অবিলম্বে ওয়াগা সীমান্ত চৌকি বন্ধ করছে। দেশটি বলেছে, এ পথ দিয়ে ভারত থেকে সব ধরনের চলাচল বন্ধ থাকবে। বৈধভাবে যারা এ পথে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছেন, তারা অবিলম্বে ফেরত যেতে পারবেন। তবে ৩০ এপ্রিলের পর এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ভারতীয় নাগরিকদের দেওয়া সব সার্ক ভিসা বাতিল করেছে পাকিস্তান। এ ভিসার আওতায় পাকিস্তানে অবস্থানরত সব ভারতীয় নাগরিককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশটি ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য শিখ ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হচ্ছে না।

ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে নিযুক্ত দেশটির প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। অবিলম্বে তাদের পাকিস্তান ছাড়তে বলা হয়েছে। তাদের সহায়তায় নিযুক্ত কর্মীদেরও ভারতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মকর্তার সংখ্যা ৩০-এ নামিয়ে আনতে বলেছে পাকিস্তান। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তা করতে বলা হয়েছে। ভারতের মালিকানাধীন বা ভারত থেকে পরিচালিত সব বিমান পরিবহন সংস্থার জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। নয়াদিল্লির সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ। সেই সঙ্গে পাকিস্তান দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিতের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

চলমান উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের কাশ্মীর ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ নতুন নির্দেশনা জারি করে। এতে ভারতশাসিত কাশ্মীর ও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে মণিপুর এবং মধ্য ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশেও। 

১৯৮৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরে ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়তে শুরু করে। ২০১৯ সালে এক বিতর্কিত পদক্ষেপে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসিত সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করে এবং রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে। দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, হিন্দু-প্রথম রাজনৈতিক এজেন্ডা গ্রহণের জন্য পরিচিত সরকার কাশ্মীরকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে আরও একীভূত করার জন্য অ-স্থানীয়দের জমির মালিকানাও অনুমোদন করে।

এনডিটিভি অনলাইন জানায়, পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিহারের মধুবানিতে গিয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার এক সমাবেশে তিনি বলেন, ভারত সন্ত্রাসী ও তাদের প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত ও পরিচয় শনাক্ত করে শাস্তি দেবে। তাদের এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যা তারা কল্পনাও করেনি। এ অবস্থায় কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের ধরতে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী। এ অভিযান চলাকালে গতকাল অস্ত্রধারীদের গুলিতে এক ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। 

পেহেলগাম হামলার ঘটনায় বুধবার মধ্যরাতে নয়াদিল্লিতে তলব করা হয় পাকিস্তানের অন্যতম শীর্ষ কূটনীতিককে। এএনআইর প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার মধ্যরাতে নয়াদিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয় ভারতে থাকা পাকিস্তানের কূটনীতিক সাদ আহমেদ ওয়ারাইচকে। বুধবারই ভারত জানিয়েছিল, নয়াদিল্লির পাক দূতাবাসে থাকা সে দেশের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা নৌ উপদেষ্টা, বিমান উপদেষ্টাকে ‘অবাঞ্ছিত’ (পার্সোনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করা হচ্ছে। এ সামরিক উপদেষ্টাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়তে বলা হয়।  

চলমান উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার আরব সাগরে ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। ইন্ডিয়া টুডে জানান, ‘আইএনএস সুরাট’ নামের ওই মিসাইল ডেস্ট্রয়ারের সফল পরীক্ষা চালানো হয়েছে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে। 

ভারতের আচরণ ‘শিশুসুলভ’ বলছেন পাকিস্তানের মন্ত্রী
ভারতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার। পাকিস্তানের একটি বেসরকারি চ্যানেলে তিনি বলেন, ভারতের ঘোষণাগুলো শিশুসুলভ। ভারত প্রতিটি ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। অতীতের মতো এবারও পাকিস্তানকে দোষারোপের চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা বৈঠকে ভারতকে যোগ্য জবাব দেব, এ জবাব কম হবে না।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের তথ্যমন্ত্রী আজমা বোখারি হামলার ঘটনায় ইসলামাবাদের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, ভারতের ‘যে কোনো সম্ভাব্য আগ্রাসনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত’ পাকিস্তান। ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ অজুহাতে ভারতের যে কোনো দুঃসাহসিক কাজ ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।

যুদ্ধের শঙ্কা নিয়ে যা বলছেন বিশ্লেষক
সামরিক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা সম্ভবত একটা দৃঢ় প্রতিক্রিয়া দেখতে পাব, যা দুই পক্ষকেই একটা বার্তা দেবে। ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৯ সালের পর থেকে এ জাতীয় ঘটনার ক্ষেত্রে প্রতিশোধমূলক যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা হলো আন্তঃসীমান্ত হামলা বা বিমান হামলা। কাজেই, সরকারের পক্ষে এখন সেই মাত্রার নিচে কোনো কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। অনুমান করা যায়, পাকিস্তানও আগের মতোই জবাব দেবে। এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতোই যে ঝুঁকিটা থেকে যায় সেটা হলো, হিসাবে ভুল উভয় পক্ষেরই হতে পারে।’

রাঘবন বলেন, পারমাণবিক হাতিয়ার একই সঙ্গে বিপজ্জনক ও নিয়ন্ত্রক। এটা দুই পক্ষের নীতিনির্ধারকদের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য করে। যে কোনো প্রতিক্রিয়া সুনির্দিষ্ট এবং লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করে হতে হবে। তিনি বলেন, পাকিস্তান পাল্টা জবাব দিতে পারে; তারপর সেখান থেকে সরে এসে আবার অন্য পথ অনুসরণ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অ্যাট অ্যালবানির ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি মনে করেন, কোনো গোপন অভিযান চালানো হলে, দায় অস্বীকার করার সুযোগ থেকে যায়। কিন্তু সেই পদক্ষেপ মানুষকে দেখানোর যে একটা রাজনৈতিক প্রয়োজন রয়েছে, সেটাকে মেটাতে পারে না।

যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হক্কানি মনে করেন, ২০১৬ সালের মতো সীমিত পরিসরে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর বিষয়ে যদি ভারত বিবেচনা করে, তাহলে এবার উত্তেজনা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ