৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর প্রায় দুই মাস টানা শ্রমিক অসন্তোষে জর্জরিত ছিল তৈরি পোশাক শিল্প। তুলনায় কম হলেও সিরামিকসহ অন্যান্য শিল্পেও শ্রম অসন্তোষ দেখা গেছে। গ্যাস সংকট চরমে। নতুন করে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সরকারি পদক্ষেপে শিল্পোদ্যোক্তা শঙ্কিত। এরকম আরও কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যেই টানা ছয় মাস পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি বেড়েছে গত বছরের একই মাসের চেয়ে ৩ শতাংশ। অন্যদিকে এ অর্থ বছরের জুলাই থেকে থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থবচরের প্রথম সাত মাসে রপ্তানি বেড়েছে ১১ শতাংশের মত।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সোমবার প্রকাশিত হালনাগাদ এ তথ্য–উপাত্ত বলছে, ফেব্রুয়ারিতে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় এসেছে ৩৯৭ কোটি ডলার। সাধারণত, প্রতি মাসে যে পরিমাণ রপ্তানি আয় আসে ফেব্রুয়ারিতে তার চেয়ে কম হয়ে থাকে। কারণ, ২৮ দিনে মাস পূর্ণ হওয়ায় অন্তত দুই দিন উৎপাদন এবং রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ৩১ দিনের মাসের হিসাব আমলে নিলে উৎপাদন কম হয় ৩ দিন। সাধারণত, গড়ে ৪৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে প্রতি মাসে। সে হিসেবে দিনে ১৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। এ হিসেবে ৩০ দিনের মাসের চেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তত ৩০ কোটি ডলারের পণ্য কম রপ্তানি হয়েছে।এছাড়া কিছু কারখানার উৎপাদন ও রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তার প্রভাবও পড়েছে রপ্তানি চিত্রে।
ফেব্রুয়ারিতে কিছু কম রপ্তানি সত্বেও অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রপ্তানি বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ২৯৪ কোটি ডলার। যা আগে ছিল দুই হাজার ৯৮১ কোটি ডলার। অর্থাৎ, আগের একই সময়ের চেয়ে গেল সাত মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৩১৩ কোটি ডলার।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগের মাসে প্রবাসী আয় ২৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
রোজার শুরুতেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা সুখবর দিয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় পাঠিয়েছেন; যা বিদায়ী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আয় এসেছিল ২১৬ কোটি ডলার। আজ রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আগস্ট থেকে টানা সাত মাস ধরে প্রতি মাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এর আগে জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছিলেন। ফলে আগের মাসের চেয়েও প্রবাসী আয় বেড়েছে।
ফলে সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি ৮ মাসে প্রবাসীরা দেশে ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন; যা অগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে আয় এসেছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার।
গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি এমন সময়ে এল, যখন দেশের বাজারে ডলার সরবরাহে ঘাটতি রয়ে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার এই ঘাটতি মোকাবিলায় প্রবাসী আয় বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ জোরালো হতে শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে প্রবাসী আয় আসে ২২০ কোটি ডলার। এর আগের বছরের নভেম্বরে এসেছিল ১৯৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়। সেই হিসাবে গত নভেম্বরে প্রবাসী আয় বাড়ে প্রায় ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া গত অক্টোবরে দেশে ২৩৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল, যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া গত আগস্টে ২২২ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ও অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় আসে।
প্রবাসী আয় হলো দেশে ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। কারণ, এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না, অথবা কোনো দায়ও পরিশোধ করতে হয় না। রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আবার বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতেও ডলারের প্রয়োজন হয়। ফলে প্রবাসী আয় বাড়লে দেশে ডলারের মজুত দ্রুত বাড়ে।