মেহেন্দীগঞ্জে অভিযানের সময় জেলের মৃত্যু, মৎস্য বিভাগ ও স্বজনদের পাল্টাপাল্টি দাবি
Published: 4th, March 2025 GMT
ছবি: প্রথম আলো
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রানা প্লাজা ধসের ১২ বছর: স্বজনদের আহাজারি থামেনি, সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবি
তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের পদচারণে মুখর হয়ে থাকত স্থানটি। সেই জায়গা এখন পরিত্যক্ত। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেখানে উপস্থিত হতে শুরু করেছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ নানা পেশাজীবি মানুষ। আজকের দিনটি তাঁদের কাছে ভীষণ যন্ত্রণা আর কষ্টের। ২০১৩ সালের এই দিনে ঢাকার সাভার বাসস্ট্যান্ডের অদূরে রানা প্লাজা ধসে নিহত হন ১ হাজার ১৩৮ জন। আহত হন অনেকে।
আজ রানা প্লাজা ধসের ১২ বছর। ওই দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণসহ নানা দাবিতে সকাল সাড়ে সাতটার পর থেকে ধসে পরা রানা প্লাজার পরিত্যক্ত জায়গার সামনের দিকের একটি অংশে জড়ো হতে শুরু করেন নিহত শ্রমিকদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ওই জায়গায় অস্থায়ী প্রতিবাদ-প্রতিরোধ শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন তাঁরা।
সকাল সোয়া আটটার দিকে ভবন ধসে পরা জায়গাটির এক পাশে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় জোসনা বেগমকে। কাছে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবাক (ছেলে) তোমরা আইনা দিবার পারবা? আমার বাবাক তোমরা বাইর কইরা দাও।’
জোসনা বেগম জানান, রানা প্লাজা ধসের দিন সকালে ভাত খেতে বসেছিলেন। এ সময় ছোট ছেলে সুরুজ মিয়া কারখানায় ফাটল দেখা দেওয়ায় বেতন দিয়ে ছুটি দিলেই বাসায় চলে আসবেন বলে জানিয়েছিলেন। তবে সুরুজ আর ফেরেননি। পরে শুনেছেন মারা গেছেন। তাঁর লাশের খোঁজ পাননি তিনি।
রানা প্লাজার ষষ্ঠ তলার একটি কারখানায় সহকারী (হেলপার) হিসেবে কাজ করতেন ইয়ানুর বেগম। তাঁর দাবি ন্যায্য ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের। ইয়ানুর বেগম বলেন, ‘গত ১১ বছরে যদি আমরা ক্ষতিপূরণ পাইতাম, তাহলে কেউ আন্দোলন করত না। কেউ রাস্তায় নেমে বলত না, আমাদের এক দফা এক দাবি ক্ষতিপূরণ চাই। বর্তমান সরকার (অন্তর্বর্তীকালীন) বলছিল, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো সেটি দেওয়া হয়নি।’
আরও পড়ুনরানা প্লাজা ধসের এক যুগ: এক হাজারের বেশি শ্রমিক হত্যার বিচার শেষ হয়নি ৪ ঘণ্টা আগেশ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও নানা দাবি জানাচ্ছেন। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এখনো আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়নি। রানা প্লাজার আহত শ্রমিকেরা চিকিৎসার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন ১২১ অনুসারে নিহত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে।
বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দ ব্যাপারী বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের ১২ বছরে দোষীদের বিচার দেখতে পাইনি। আগের সরকার বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল; কিন্তু বিচার হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, দোষীদের দ্রুত বিচার করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যয্য দাবিগুলো পূরণ করতে হবে।’
সকাল ১০টা পর্যন্ত বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আনন্দোলন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, গার্মেন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশ, গার্মেন্টস শ্রমিক টেক্সটাইল ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রসহ নানা শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও আহত শ্রমিকেরা অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।