পাবনার সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) উপস্থিতিতে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমিরসহ দলের চার নেতাকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা পিটিয়ে আহত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে ইউএনও মীর রাশেদুজ্জামানের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ফারুকী আজম, সেক্রেটারি টুটুল বিশ্বাস, শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ওয়ালিউল্লাহ বিশ্বাস ও সাবেক কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জামায়াতের ওই চার নেতা ইউএনও মীর রাশেদুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর কার্যালয়ে যান। তবে ইউএনও ব্যস্ত থাকায় তাঁরা অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় উপজেলা বিএনপির সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দলটির কয়েকজন নেতা-কর্মী ওই কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। সেখানে জামায়াত নেতাদের দেখে উত্তেজিত ও ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘এরা কেন এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে?’ বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। এরপর মজিবুর রহমান কক্ষ থেকে বেরিয়ে তাঁদের অন্য নেতা-কর্মীদের ডাকেন। তিনি সেখানে আবার ফিরে গিয়ে ইউএনওর সামনেই জামায়াতের ওই নেতাদের মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ইউএনও কার্যালয়ের কর্মীরা তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

ঘটনার প্রসঙ্গে উপজেলা জামায়াতের আমির কে এম হেসাব উদ্দিন জানান, সুজানগরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করায় বিএনপির ক্যাডাররা ইউএনওকে মারধর ও তুলে আনার জন্য গিয়েছিল। এ সময় বাধা দিলে জামায়াতের চার নেতাকে বিএনপির ক্যাডাররা বেধড়ক মারধর করেছে।

উপজেলা জামায়াতের আমিরের দাবি, গত ৫ আগস্টের পর বিএনপির নেতারা সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির গডফাদার হয়েছেন। চাঁদাবাজি, অবৈধ বালু উত্তোলন, মাদক কারবারি, চুরি-ডাকাতি, অপহরণ, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছেন। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মজিবুর রহমান খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আজম বিশ্বাস বলেন, ‘যাঁরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেন, তাঁরা আমাদের দলের হতে পারে না। আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে বলেছি। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতেও আলোচনা চলছে।’

সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা মামলা করেননি। তাঁরা এলেই মামলা ও যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিজ কার্যালয়ে এ ধরনের ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন ইউএনও মীর রাশেদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমার কক্ষে মারধর ও সরকারি কাজে বাধাদানের ঘটনা ঘটেছে, কাজেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ ব এনপ র ম রধর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

যানজট নিরসনে সড়কে ইউএনও, লাঠিপেটার অভিযোগে পরিবহনশ্রমিকদের অবরোধ

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে বাসচালককে লাঠিপেটার অভিযোগ এনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা তাঁরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের মুক্তাগাছা পৌর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ জন্য থানার সামনের এলাকার রাস্তার ওপর থেকে বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে পৌর বাস টার্মিনালে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও রাস্তার ওপর বাস দাঁড়িয়ে থাকে এবং যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট রোধে আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ইউএনও আতিকুল ইসলাম পৌরসভার পুরোনো বাসস্ট্যান্ড মোড় এলাকায় যান। ওই সময় সড়কের ওপর ইসলাম পরিবহনের একটি বাস দাঁড়িয়ে ছিল। ইউএনও বাসটিকে সরিয়ে নিতে বলেন। ওই ঘটনা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তখন পরিবহনশ্রমিকেরা চালককে মারধর করার অভিযোগ এনে ইউএনওর বিচার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।

বাসটির চালক মো. আকাশ ওরফে ভুলু (৪৬) প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনিরামবাড়ি থেকে বাস নিয়ে বাস স্টপেজে দাঁড়ানোর আগেই ইউএনও স্যার আমার বাসে উঠে পড়েন। তিনি নিজের গাড়ির চালককে লাঠি আনতে বলতে থাকেন। আমি তখন বলি, রোজা রেখেছি, আমাকে মাফ করে দেন। কিন্তু তিনি কোনো কথা না শুনে আমার হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন।’

লাঠিপেটার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাসগুলো পৌর বাস টার্মিনালে সরিয়ে নেওয়া হবে। তারপরও রাস্তার ওপর বাস দাঁড়াচ্ছিল। আজ সকালে রাস্তার ওপর বাস দাঁড় করিয়ে রাখায় কারণ জানতে চেয়েছিলাম। এ কারণে চালকেরা ইস্যু সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।’

মুক্তাগাছা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক বাবুল মিয়া বলেন, ‘ভুল–বোঝাবুঝি থেকে এ ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। আজ বিকেলে আমরা আলোচনায় বসে বিষয়টি মিটমাট করে নেব। ইউএনও রাস্তার যানজট কমাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আজ হয়তো ইউএনও রাগের মাথায় ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন।’

মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, বাসের চালককে ইউএনও মারধর করেছেন—এমন অভিযোগে শ্রমিকেরা সড়ক আটকে দিয়েছিলেন। পরে সেনাবাহিনী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় ইটভাটা মালিক সমিতির বিক্ষোভ
  • বাসচালককে পেটানোর অভিযোগ ইউএনওর বিরুদ্ধে, মহাসড়কে বিক্ষোভ
  • যানজট নিরসনে সড়কে ইউএনও, লাঠিপেটার অভিযোগে পরিবহনশ্রমিকদের অবরোধ
  • ইউএনওর কক্ষে ঢুকে জামায়াত নেতাদের বেধড়ক মারলেন বিএনপি নেতারা, ইউএনওকে হুমকি
  • ইউএনওর সামনে ৪ জামায়াত নেতাকে পেটালেন বিএনপি নেতারা
  • টিসিবির কার্ড বিতরণ নিয়ে সন্দেহ, ঘেরাও-অবরোধ
  • মনিরামপুরে টিসিবির পণ্যের দাবিতে সড়ক অবরোধ, ইউএনওর অপসারণ দাবি
  • আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে পুরস্কার বিতরণে ক্ষোভ
  • আ’লীগ নেতাকে নিয়ে ডিসির পুরস্কার বিতরণ, ক্ষোভ