নিলামের প্রথম রাউন্ডে দল না পাওয়া রাহানে কেন কলকাতার অধিনায়ক
Published: 4th, March 2025 GMT
আইপিএলের বাকি তিন সপ্তাহ। এমন সময়ে কাল ঘোষণা এল—কলকাতা নাইট রাইডার্সকে এবার নেতৃত্ব দেবেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান অজিঙ্কা রাহানে। সেই রাহানে, যে কিনা এই আইপিএলের নিলামে প্রথম রাউন্ডে দলই পাননি।
শেষ পর্যন্ত নিলামের দ্বিতীয় দিনের শেষ দিকে তাঁকে ভিত্তিমূল্য ১ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে দলে নিয়ে নেয় কলকাতা। তখন ভাবা হচ্ছিল, বিকল্প হিসেবেই রাহানেকে কিনে রাখছে কলকাতা। তবে শেষ পর্যন্ত সেই রাহানেই হলেন কলকাতার অধিনায়ক। কেন?
ব্যাটিং রেকর্ড বিবেচনায় নিলে কলকাতার একাদশে রাহানের জায়গা পাওয়াটাই মুশকিল। এই দলে ওপেনার হিসেবে আছেন সুনীল নারাইন, কুইন্টন ডি কক, রহমানউল্লাহ গুরবাজ।
আছেন অংকৃশ রঘুবংশী, ২০ বছর বয়সী যে ব্যাটসম্যান নিজের প্রথম মৌসুমেই গতবার ব্যাটিং করেছিলেন ১৫৫ স্ট্রাইক রেটে। ভেঙ্কটেশ আইয়ার, আন্দ্রে রাসেল, রিংকু সিং ও রমনদীপ সিং তো আছেনই। এবার তারা দলে নিয়েছে ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন আলীকেও। মানে সব মিলিয়ে বিধ্বংসী এক ব্যাটিং লাইনআপ। সে ক্ষেত্রে এই দলে রাহানের জায়গা কই?
রাহানেকে নিয়ে ভিন্ন কোনো বিশেষ পরিকল্পনা থাকলে তাঁকে নিশ্চয় নিলামের শেষ দিনে দলে নিত না কলকাতা!
আরও পড়ুন৪ রানে নেই ৬ উইকেট, ঢাকা লিগে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং–বিপর্যয়২ ঘণ্টা আগেমূলত কলকাতা বিপদে পড়েই তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছে। পরিকল্পনা পরিবর্তন হয়ে লাভটা হয়েছে রাহানের। বলে রাখা ভালো, রাহানেও উড়ে এসে জুড়ে বসা কেউ নয়। আইপিএলে রাজস্থানকে দুই মৌসুম নেতৃত্ব দিয়েছেন রাহানে। ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১১টি ম্যাচে। ২০২০–২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের যে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়, সেটি এসেছে এই রাহানের নেতৃত্বেই। ভারতের ক্রিকেটে এখনো মুম্বাইকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই রাহানে।
রাহানে কেন অধিনায়ক, সে প্রসঙ্গে ফেরা যাক। আসলে আইপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা এবারের মৌসুমে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। সে কারণেই রাহানের দিকে ছুটেছে দলটি। রাহানে ছাড়া কলকাতাকে নেতৃত্ব দিতে পারতেন কুইন্টন ডি কক, রাসেল কিংবা নারাইন। এই তিনজনের মধ্যে রাসেল ও নারাইনের একাদশে জায়গা নিশ্চিত।
তবে রাসেল চোটপ্রবণ, নারাইন অধিনায়ক হিসেবে আইএলটি-টোয়েন্টিতে হয়েছেন ব্যর্থ। সব মিলিয়ে আবুধাবি নাইট রাইডার্সকে ৩০ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে মাত্র ৯টিতে জেতাতে পেরেছেন নারাইন। তাই তাঁদের নিয়ে ভাবেনি কলকাতা। ডি ককের যেহেতু একাদশে জায়গা নিশ্চিত নয়, বিদেশি এই ক্রিকেটারকে নিয়ে কেন ঝুঁকি নেবে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি?
আইয়ারও অধিনায়ক হতে পারতেন। আলোচনাটা আসলে তাঁকে নিয়েই বেশি ছিল। ২০২১ সাল থেকে আইয়ার দলের সঙ্গে আছেন। এবার কলকাতা তাঁকে ধরে রেখেছে ২৩ কোটি ৭৫ লাখ রুপি দিয়ে।
১৭২.৪৯২০২৩ সালের আইপিএলে রাহানের স্ট্রাইক রেট
টাকার অঙ্ক দেখে বোঝাই যাচ্ছে, এই দলে আইয়ারের গুরুত্ব! তবে আইয়ার টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও কখনো নেতৃত্ব দেননি। আর রাহানে ৫৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দিন শেষে কলকাতা টিম ম্যানেজমেন্ট অভিজ্ঞতাকেই বেছে নিয়েছে। আইয়ারের কপালে জুটেছে সহ-অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। মানে আইয়ার আগামীর পরিকল্পনায় আছেন। তবে এ মুহূর্তে আইয়ারের হাতে দায়িত্ব না ছাড়াকেই নিরাপদ ভাবছে দলটি।
প্রশ্ন আছে, রাহানের ব্যাটিং–সামর্থ্য নিয়ে। টুকটুক ব্যাটিংয়ের জন্য টি-টোয়েন্টিতে ব্রাত্য হয়েই যে পড়েছিলেন রাহানে। তবে ২০২৩ সাল থেকে টি-টোয়েন্টিতে নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়ার চেষ্টায় আছেন রাহানে। কখনো পেরেছেন, কখনো পারেননি। সব মিলিয়ে আইপিএলে ১২৩ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা রাহানে ২০২৩ সালের আইপিএলে ব্যাটিং করেছিলেন ১৭২.৪৯ স্ট্রাইক রেটে।
রাহানে–আইয়ার জুটি দেখা যাবে আইপিএলেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আহমেদাবাদ ফাইনালের মতো হৃদয় ভেঙে দেবে না তো অস্ট্রেলিয়া!
‘ভরা গ্যালারিকে চুপ করিয়ে দেওয়ার মতো সন্তুষ্টি আর কিছুতে নেই’– ২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর আহমেদাবাদে কথাটি বলেছিলেন প্যাট কামিন্স। দুবাইয়ের গ্যালারিও আজ ভারতীয় সমর্থকে পরিপূর্ণ থাকবে। কামিন্সের অনুপস্থিতিতে নিশ্চিতভাবেই তাঁর সেই কথা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবেন স্মিথ-ম্যাক্সওয়েলরা। তাই ভারতবাসীর মনে একটা ভয়-শঙ্কা কাজ করছেই। আহমেদাবাদের ফাইনালের মতো হৃদয় ভেঙে দেবে না তো অস্ট্রেলিয়া! এই ভয়ের উল্টো পিঠে ভারতের জন্য রয়েছে প্রতিশোধের সুবর্ণ সুযোগও। মরুর দেশে আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিতে কে বাজিমাত করবে?
অস্ট্রেলিয়ার জন্য গ্রুপ পর্বটা একেবারেই আদর্শ ছিল না। বৃষ্টির কারণে পাকিস্তানে তাদের দুটি ম্যাচ পরিত্যক্ত। তার পর তড়িঘড়ি করে ফ্লাইট ধরে দুবাইয়ে উড়ে আসতে হয়েছে সেমির জন্য। তার ওপর দলের সেরা তিন পেসার– কামিন্স, স্টার্ক, হ্যাজেলউডসহ নিয়মিত ছয়জন নেই। দলটির নাম অস্ট্রেলিয়া বলেই হেলাফেলা করা যায় না। আইসিসি ইভেন্টে যাদের রেকর্ড অনন্য। হলুদ জার্সি গায়ে জড়ালেই অপরিচিত জনসন-ইংলিসরা দানব হয়ে ওঠেন। যেমনটা ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে করেছিলেন ট্রাভিস হেড। দু’দলের সর্বশেষ সেই ওয়ানডে ম্যাচে ভারতের ২৪০ রান তাড়া করতে নেমে পঞ্চাশের আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে ১৩৭ রানের নান্দনিক এক ইনিংস খেলে চোখের পলকে ভারতকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ট্রাভিস হেড। এর আগে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও ভারতকে কাঁদিয়েছিলেন তিনি। আজও কি তিনি জ্বলে উঠবেন? নাকি অন্য কোনো নবীন হয়ে উঠবেন ট্রাভিস হেড! কিংবা অভিজ্ঞ স্টিভ স্মিথ বা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ঝলক দেখা যাবে আজ?
দুই বছর আগের সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা সবচেয়ে তরতাজা ভারত অধিনায়কের। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য প্রতিশোধ শব্দটা আনতে চাইলেন না রোহিত, ‘অস্ট্রেলিয়া কঠিন এক প্রতিপক্ষ। গত তিন ম্যাচে আমরা যে চিন্তাধারা নিয়ে মাঠে নেমেছি, যেভাবে খেলেছি; এই ম্যাচেও আমাদের একই মনোভাব থাকবে।’ এমনকি অস্ট্রেলিয়ার সেরা একাদশের ছয়জন না থাকার পরও তাদের মনোভাবে কোনো পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন না রোহিত, ‘অনেক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়া পরাশক্তির মর্যাদা ধরে রেখেছে। তারা কঠিন লড়াই করবে, সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আর সেমিফাইনালে তো উভয় দলের ওপরই জয়ের চাপ থাকে। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেদের কাজটা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সঠিকভাবে সম্পাদন করা।’ সেমির আগে ভারত একাদশ নির্বাচন নিয়ে কিছুটা সমস্যায় রয়েছে। স্পিনার বরুন চক্রবর্তীকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এমনিতেই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ৫ উইকেট তুলে নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টকে চাপে ফেলে দিয়েছেন। অবশ্য বরুন ক্লিক করায় ভারতের সামনে নতুন বিকল্পও খুলে গেছে। দুবাইয়ের মন্থর পিচে সম্ভবত চার স্পিনার নিয়ে নামতে যাচ্ছে ভারত। সে ক্ষেত্রে আজও কপাল পুড়ছে পেসার হার্সিত রানার।
ভারত যে অলআউট স্পিন আক্রমণ নিয়ে নামছে, সেটা অস্ট্রেলিয়া ভালোই বুঝে গেছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি পরিষ্কার করেই বলেছেন অসি অধিনায়ক স্মিথ, ‘শুধু বরুন নন, ভারতের স্কোয়াডে থাকা সব স্পিনারই ভালো। তাদের স্পিনারদের আমরা কেমন খেলব; বিশেষ করে মাঝের ওভারগুলোতে, সেটার ওপর আমাদের জয়-পরাজয় নির্ভর করছে। ভারতের স্পিন খেলাই আমাদের এ ম্যাচে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’ দুবাইয়ের আবহাওয়া আজ শুষ্ক থাকবে। গত দুই ম্যাচের মতো আজ অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে বৃষ্টির বাধা আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।