গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে গুমের সঙ্গে জড়িত কতিপয় ব্যক্তির জন্য পুরো বাহিনী আতঙ্কগ্রস্ত বা প্যানিক স্ট্রিকেন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্য গুমের সঙ্গে জড়িত, তা তাঁদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার গুলশানের গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কমিশনপ্রধান। তিনি বলেন, গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নাগরিকদের গুম করার অভিযোগ আছে, তাঁদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনুসন্ধান করছে।

কমিশনপ্রধান বলেন, অপরাধীরা অনেক সময় আইনের হাত থেকে বাঁচতে তার ধর্ম, কমিউনিটি, সামাজিক গ্রুপ, ইত্যাদির আড়ালে লুকাতে চেষ্টা করে। এই প্রবণতাকে বলা হয় আইডেনটিটি বেজড ডিফেন্স বা কমিউনিটি শিল্ডিং। কিন্তু বিচার কখনো ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে হয় না, তা হয় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। কারণ, ফৌজদারি অপরাধ একটি ব্যক্তিগত দায়, এতে কমিউনিটিকে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কালিমা মোচন হবে এবং বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং সবাই আইনের অধীন। এটাই আইনের শাসনের মর্মবাণী। তাই গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায় পুরো বাহিনীর ওপর বর্তায় না। এই কমিশন ‘কমিশনস অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’–এর অনুবলে গঠিত হয়ে সম্পূর্ণ পক্ষপাতমুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করছে। এ জন্য এই কমিশনের কাজে কোনো বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যদের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

কমিশন জানায়, বগুড়া পুলিশ লাইনসেও গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়া গেছে। গত ১৫ বছরের মধ‍্যে এটি তৈরি করা হয়েছে।

কমিশনপ্রধান বলেন, ঢাকা, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ডিজিএফআই, সিটিটিসি ও র‍্যাবের নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কিছু গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়া মাত্রই তা পরিদর্শন করে অপরিবর্তিত রাখার নির্দেশনা প্রদান করে কমিশন। যেমন কমিশন গঠনের কয়েক সপ্তাহের মাঝেই ডিজিএফআইয়ের জেআইসি (আয়নাঘর) এবং র‍্যাব হেডকোয়ার্টারের টিএফআই পরিদর্শন করে আলামত ধ্বংসের প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য এই দুটিসহ মোট তিনটি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করা হয়েছে।

কমিশন জানায়, এখন পর্যন্ত কমিশনে ১ হাজার ৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্য থেকে প্রায় এক হাজারটি অভিযোগ ও তার সঙ্গে সংযুক্ত কাগজপত্রের যাচাই-বাছাই প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কমিশনে আসা ২৮০ জন অভিযোগকারীর জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৪৫ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। আবার গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা বা ভাগ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চলমান আছে।

কমিশনপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপার ও বিজিবির সেক্টর কমান্ডারদের কাছ থেকে ৫ আগস্টের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশইন করা ব্যক্তিদের তথ্য চাওয়া হলে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪০ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ তথ্যের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে কোনো গুমের শিকার ব্যক্তির নাম এখনো পাওয়া যায়নি। পুলিশ এবং বিজিবির পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রাপ্তি সাপেক্ষে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার ধামরাইয়ের মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ্ নামে গুমের শিকার ব্যক্তিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর বর্ডার দিয়ে পুশইন করার ব্যাপারে কমিশন জানে। এ বিষয়ে কমিশনের অনুসন্ধান চলছে বলে জানান কমিশনপ্রধান।

কমিশনপ্রধান আরও বলেন, ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন কারাগারে গত দুই-আড়াই বছরে আটক ১ হাজার ৬৭ জন বাংলাদেশির নাম–ঠিকানাসহ একটি তালিকা পাওয়া গেছে। আরও তথ্য পাওয়া গেলে কমিশনে প্রেরণ করা হবে বলে লিখিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাপ্ততালিকায় গুমের শিকার কোনো ব্যক্তির নাম আছে কি না তার অনুসন্ধান চলমান।

কমিশনপ্রধান বলেন, কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিল করা গুমসংক্রান্ত অভিযোগগুলোর মধ্য থেকে মোট ৭৪টি অভিযোগ তদন্ত ও নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এ ছাড়া কমিশনের সদস্যরা বিভিন্ন গণসচেতনতামূলক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ভিকটিম পরিবারসহ অংশীজনদের গুমসংক্রান্ত অপরাধ ও এর দায়সংক্রান্ত বিষয়ে অবহিত করেছেন।

কমিশন জানায়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা এবং অনুরূপ যেকোনো বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের মদদে, সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি কর্তৃক যেকোনো জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাঁদের শনাক্ত করা এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল, তা নির্ধারণ করার জন্য কমিশন গঠিত হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইন র সদস য তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

পাহাড়ে অপহরণের আলোচিত যত ঘটনা

পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত ও অপহরণ নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলে বিদেশি নাগরিক, রাজনৈতিক নেতাসহ নানাজনকে অপহরণের ঘটনা দেশ ছাড়িয়ে আলোচিত হয়েছে বহির্বিশ্বেও। সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে অপহরণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে, যা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ১৯৮৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত চাঞ্চল্যকর কিছু অপহরণের ঘটনা জানা যাক।

তিন বিদেশি অপহরণ (২০০১)

২০০১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির নানিয়ারচরে অপহৃত হন ডেনমার্কের উন্নয়ন সংস্থা ড্যানিডার তিন কর্মকর্তা। ড্যানিডা নিযুক্ত সড়ক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কেমসেক্স ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে রাঙামাটি-মহালছড়ি সড়কের প্রশস্ততা বাড়ানোর কাজে তথ্যানুসন্ধানের জন্য ওই ব্যক্তিরা সেখানে গিয়েছিলেন। তিনজনই ছিলেন ইউরোপীয়। এই ঘটনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও আলোড়ন তোলে।

অপহৃত তিনজন বিদেশির মধ্যে টারবেন মিকেলসন (৩৮) ও নিলস হুলগার্ড (৬৩) ছিলেন ডেনমার্কের অধিবাসী। অপরজন টিম সেলবি (২৮) ছিলেন ইংল্যান্ডের নাগরিক। অপহরণের পর দেশ দুটির রাষ্ট্রদূত তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে দেখা করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপহৃতদের উদ্ধারে নানামুখী তৎপরতা শুরু করে। আলোচনাও চলতে থাকে। অপহরণকারীরা ৯ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন।

দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে ফলাও করে এই সংবাদ প্রকাশ হতে থাকে। ১৯ ফেব্রুয়ারি সরকারদলীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার রাঙামাটিতে এক ব্রিফিংয়ে অপহরণকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান গণমাধ্যমকর্মীদের। একই সময়ে তিনি অপহরণের জন্য পার্বত্য চুক্তির বিরুদ্ধে থাকা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেন। পার্বত্য চুক্তির পরের বছর দলটির জন্ম হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দলটিকে অপহরণের দায় দেয়।

১৯ ফেব্রুয়ারি অপহৃত মিকেলসনের লেখা একটা চিরকুটও প্রদর্শন করেন দীপংকর তালুকদার। ওই চিরকুট তিনি স্ত্রীর উদ্দেশে লিখেছিলেন। তাতে তাঁরা অপহরণকারীদের জিম্মায় ভালো আছেন বলে বার্তা দিয়েছিলেন। অবশ্য মিকেলসনের উৎকণ্ঠিত স্ত্রী ডিভিনা টরবেন পরে ইংল্যান্ড থেকে সন্তানদের নিয়ে রাঙামাটি চলে আসেন। রাঙামাটির কাউখালীর এক দুর্গম এলাকা থেকে ১৭ মার্চ এই তিন বিদেশির মুক্তি মিলেছিল।

মুক্তির পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করে, তাদের সঙ্গে অপহরণকারীদের ব্যাপক (১০০টির বেশি) গোলাগুলি হয়। কিন্তু অপহৃত তিন বিদেশি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, উদ্ধারের সময় অপহরণকারীদের সঙ্গে কোনো গোলাগুলি হয়নি। তাঁরা কেবল দু-একটি গুলির শব্দ শুনেছেন।

শেল অয়েলের ৬ জন অপহরণ (১৯৮৪)

১৯৮৪ সালে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি সিজকমুখ এলাকা থেকে অপহৃত হন তেল অনুসন্ধানকারী শেল অয়েলের ছয় কর্মকর্তা। প্রথমে তিনজনকে মুক্তি দেওয়া হয়। বাকি তিনজনকে প্রায় এক মাস পর এক কোটি টাকা ও সোনার বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হয় বলে ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল প্রথম আলো পত্রিকার খবরে প্রকাশ হয়েছিল। পার্বত্য চুক্তির আগে সংঘটিত আলোচিত এ ঘটনার জন্য জেএসএসের সামরিক সংগঠন শান্তিবাহিনীকে দায়ী করা হয়।

টেলিটকের পাঁচ কর্মী অপহরণ (২০১৩)

২০১৩ সালের ৮ জুলাই রাঙামাটির বাঘাইছড়ি থেকে অপহরণ করা হয় মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান টেলিটকের পাঁচ কর্মীকে। তাঁদের কাছ থেকে মুক্তিপণও দাবি করা হয়। এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অপহরণের ১৭ দিন পর ২৬ জুলাই খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় তাঁরা জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পান।

মুক্তির পর টেলিটকের কর্মী মো. আখতারুজ্জামান বলেছিলেন, অপহরণের পর তাঁদের তিন দিন একটি মাটির ঘরে রাখা হয়েছিল সশস্ত্র পাহারায়। এরপর বিভিন্ন পাহাড়ে ঘোরানো হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখন জানায়, অপহৃতদের মুক্তির জন্য কোনো মুক্তিপণ দিতে হয়নি।

জেএসএসের ৭০ নেতা-কর্মী অপহরণ (২০১৩)

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার কাট্টলীবিল থেকে জেএসএসের ৭০ নেতা-কর্মীকে অপহরণ করা হয় ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। লংগদু ও বাঘাইছড়ি থেকে নৌকাযোগে রাঙামাটি সদরে জেএসএসের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। একটি সশস্ত্র দল কাট্টলীবিল এলাকায় নৌকাটিকে জিম্মি করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এ ঘটনার জন্য জেএসএস ইউপিডিএফকে দায়ী করে। তবে ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।
অপহরণের এই ঘটনা অপহৃত ব্যক্তিদের সংখ্যার বিচারে সবচেয়ে বড়। অপহৃত ব্যক্তিদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি দিতে এক বছরের মতো সময় পার হয়। মুক্তিপণও দিতে হয়েছিল বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।

কল্পনা চাকমা অপহরণ (১৯৯৬)

১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির নিজ বাড়ি থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ১২ জুন ছিল ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই বছরের ১৩ জুন এ ঘটনায় বাঘাইছড়ি থানায় মামলা করেন কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা। তবে ৩৯ জন কর্মকর্তা তদন্ত করেও বারবার মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। গত বছরের ২৩ এপ্রিল কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলাটি রাঙামাটির আদালতে খারিজ করে দেওয়া হয়।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অপহরণ (২০২৪)

বম জনগোষ্ঠীর কিছু তরুণ ও যুবকের উদ্যোগে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সংগঠন ২০২২ সালে প্রকাশ্যে আসে। সংগঠনটির কার্যক্রম মূলত বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি এবং রাঙামাটির বিলাইছড়ি এলাকায় দেখা যায়। গত বছরের ২ এপ্রিল কেএনএফ রুমা বাজারে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে।

রাত ৯টার দিকে কেএনএফের সশস্ত্র দল ব্যাংকে হামলা চালায়। তারা ব্যাংকের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং অন্য লোকজনকে জিম্মি করে। এরপর পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কাছ থেকে দুটি সাব-মেশিনগানসহ (এসএমজি) ১৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করেন কেএনএফ সদস্যরা। তাঁর মুক্তির জন্য ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ৪৮ ঘণ্টা পর মুক্তি দেওয়া হয় তাঁকে।

দুই নেত্রী অপহরণ (২০১৮)

২০১৮ সালের ১৮ মার্চ হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দয়া সোনা চাকমাকে অস্ত্রের মুখে কুতুকছড়ি এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়৷ এ ঘটনার প্রতিবাদে ২১ মার্চ খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় ইউপিডিএফ। এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিককে দায়ী করা হয়। এর আগের বছর ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর মূল ইউপিডিএফ ভেঙে তপনজ্যোতি চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিকের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ইউপিডিএফ শুরু থেকে ছিল প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন। অপহরণের ৩১ দিন পর ১৯ এপ্রিল খাগড়াছড়ির মধুপুর এলাকায় অপহৃত ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

পাঁচ পিসিপি নেতা অপহরণ (২০২৫)

১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় সদরে যাওয়ার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় অপহৃত হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। তাঁরা সবাই জেএসএস সমর্থিত ছাত্রসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) নেতা। অপহৃতরা হলেন রিশন চাকমা, মৈত্রীময় চাকমা, দিব্যি চাকমা, লংঙি ম্রো ও অলড্রিন ত্রিপুরা।
পিসিপির (জেএসএস) কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপুণ ত্রিপুরা এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁদের দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তি চাইছি। অপহৃতরা সবাই পিসিপির নেতা-নেত্রী’। অপহরণের ঘটনায় জেএসএসের অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন ইউপিডিএফের সংগঠক অংগ্যা মারমা।

যেসব কারণে অপহরণ

সমতলে বেশির ভাগ অপহরণের ঘটনা থাকে মূলত মুক্তিপণ আদায়কেন্দ্রিক। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক অপহরণের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর বিবাদ। জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, অপহরণ সমতলেও হচ্ছে। পাহাড়ে বিভিন্ন বিবদমান দল রয়েছে, সেটি এ ধরনের ঘটনার একটি কারণ। এ ছাড়া এর পেছনে পাহাড়ের প্রশাসনের ভূমিকাও কিছুটা দায়ী। পার্বত্য চুক্তির আগে-পরে আন্দোলন, চুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রগতি কম থাকা কিংবা আরোপিত অনেক বিষয় এসব ঘটনার পেছনে কাজ করে। আসল রোগ না সারানোর কারণে অপহরণ কিংবা সংঘাতের মতো উপসর্গ দেখা দেয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বনানীতে ছুরিকাঘাতে নিহত পারভেজের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে: ছাত্রদল সভাপতি
  • পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু ২৫ এপ্রিল
  • আট দিন পর চবির অপহৃত ৫ শিক্ষার্থী উদ্ধার
  • ক্রাচ হাতে, হুইলচেয়ারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের মানববন্ধন
  • কলেজ কর্তৃপক্ষের কি কোনো দায় নেই
  • আরাকান আর্মির উপস্থিতি ভিডিওতে যেভাবে এসেছে তা সঠিক নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • পাহাড়ে অপহরণের আলোচিত যত ঘটনা
  • বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের মতো ছড়াচ্ছে সাইবার অপরাধ
  • জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নজরে রাখার নির্দেশ দিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • বরিশালে র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে হামলা, গুলিতে তরুণ নিহত