গঙ্গার পানি চুক্তি: ফারাক্কা ব্যারেজ পরিদর্শনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল
Published: 4th, March 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ভারতে গেছে। আলোচনার আগে আজ মঙ্গলবার ফারাক্কা ব্যারেজ পরিদর্শনে গেছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল।
গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি পর্যালোচনা এবং নদীসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকার ১১ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল পাঁচ দিনের সফরে সোমবার কলকাতায় পৌঁছায়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিন্ন নদীর ন্যায্য পানির দাবির পাশাপাশি গঙ্গা চুক্তি নবায়নের কথা জানানো হবে।
ভারত বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর ডিসেম্বরে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে উভয় দেশ নতুন করে চলমান বাস্তবতা যাচাই করতে চাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে বুধবার কলকাতায় ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বৈঠকে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন, তিস্তা ধরলাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীর ন্যায্য পানির দাবি জানাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
কলকাতায় দুদিনের বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা সরেজমিনে ফারাক্কার বাঁধ পরিদর্শন করবেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল এরইমধ্যে ফারাক্কা পৌঁছেছেন। মঙ্গলবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পানিসম্পদ বিষয়ক দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি নবায়ন নিয়ে আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন ফারাক্কার বিধায়ক। ৩০ বছরের এই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর।
বিএইচ
.উৎস: SunBD 24
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া কি ইউক্রেনকে রক্ষা করতে পারবে ইউরোপে
উত্তেজনা ও নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ তিন দিনের বিদেশ সফরে শেষে কিয়েভে ফিরে গেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গত শুক্রবার তাঁর ওই সফর শুরু হয়েছিল। সেদিন হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ঘরভর্তি সাংবাদিক ও ক্যামেরার সামনে এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে তুমুল বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান জেলেনস্কি।
ওই বাগ্বিতণ্ডার পর ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক ভেস্তে যায়। পরে জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছিল বলে হোয়াইট হাউসের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি যুক্তরাজ্যে চলে যান জেলেনস্কি। গত শনিবার লন্ডনে তিনি উষ্ণ অভ্যর্থনা পান। ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার তাঁকে স্বাগত জানান। ব্রিটিশ রাজা চার্লসের (তৃতীয়) সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন জেলেনস্কি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজে বের করতে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের আমন্ত্রণে রোববার লন্ডনে একটি জরুরি সম্মেলন করেছেন ইউরোপের নেতারা। সম্মেলনের পর তাঁরা জেলেনস্কির প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানানোর কথা বলেছেন।
লন্ডনে সম্মেলন শেষে স্টারমার ইউক্রেনকে রক্ষা করতে ইউরোপীয় নেতাদের একটি ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। তবে সম্ভাব্য ওই জোটে কে কী অবদান রাখবে, তা জানানো হয়নি।
ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বতর্মান সম্পর্ক এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউরোপ কী পরিকল্পনা করছে সেই আলোচনায় আসা যাক।
ট্রাম্প–জেলেনস্কি সম্পর্ক এখন কোন পথেশুক্রবার ওভাল অফিসে বাগ্বিতণ্ডার পর গত শনিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি পোস্ট দিয়েছিলেন জেলেনস্কি।
একটি পোস্টে জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘নিজেদের যৌথ লক্ষ্য বুঝতে হলে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রকে পরস্পরের প্রতি সৎ এবং খোলাখুলি হতে হবে।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র আরও দৃঢ়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়াক।
হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ফক্স নিউজকে সাক্ষাৎকার দেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, সেখানে পরিস্থিতি সত্যই খুবই কঠিন ছিল এবং তিনি আমেরিকা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দেওয়ার সুযোগ গ্রহণ করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি সেটা গ্রহণ করছেন না।
জেলেনস্কির সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার পর এখন পর্যন্ত ট্রাম্প এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে ইউক্রেনে সব ধরনের সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে গতকাল সোমবার তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে খনিজ সম্পদ চুক্তির পথ এখনো খোলা রয়েছে।
অবশ্য ওই বাগ্বিতণ্ডার পর রিপাবলিকানদের বেশির ভাগ নেতা ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ‘সাবেক-প্রেমিকার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। স্পিকার মাইক জনসন জেলেনস্কিকে চলে যেতে বলেছেন।
অবশ্য কেউ কেউ ট্রাম্পের সমালোচনাও করেছেন। মধ্যপন্থী রিপাবলিকান নেব্রাস্কার কংগ্রেসম্যান ডন বেকন বলেছেন, ‘এটা আমেরিকার বিদেশনীতির জন্য একটি খারাপ দিন ছিল।’
আলাস্কার সিনেটর লিসা মুরকোস্কি বলেছেন, ‘যেভাবে ট্রাম্প প্রশাসন আমাদের মিত্রদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং পুতিনকে কাছে টেনে নিচ্ছে, তা দেখে আমার খুবই জঘন্য লাগছে।’
ইউরোপের নেতারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেনশুক্রবার সন্ধ্যায় জেলেনস্কি হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক নেতাই তাঁকে সমর্থন জানিয়ে পোস্ট করেন। তবে এর উল্টো পোস্টও ছিল। এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো নাম ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। মেলোনি লিখেছেন, তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর চমৎকার সম্পর্ক ধরে রাখতে চান।
আর হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর ওরবান ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করে লিখেছেন, ‘ট্রাম্প সাহসের সঙ্গে শান্তির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।’
অন্যদিকে, লন্ডন সম্মেলনে বেশির ভাগ নেতা খুবই সতর্কতার সঙ্গে বলেছেন, তাঁরা এখনো মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন জরুরি।
সম্মেলনের শেষে স্টারমার চার পয়েন্টের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। ওই পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও বাড়ানো, যাতে ভবিষ্যতে রাশিয়া আবার আক্রমণ করলে তা প্রতিহত করা যায়। এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ গঠন করা। এর আওতায় ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ রেখে কী চাইছেন ট্রাম্প৬ ঘণ্টা আগেইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কী হবেস্টারমার ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর যে পরিকল্পনার কথা বলেছেন, সেখানে পদাতিক সেনা বাড়ানোর পাশাপাশি আকাশে বিমান বাড়ানোর কথাও বলা আছে। ওই পরিকল্পনায় বিভিন্ন পক্ষের সমর্থনের কথা বলা আছে। তবে স্টারমার খুবই সতর্কতার সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে প্রতিটি দেশকে নিজেদের ভেতর আলোচনা করার সুযোগ রেখেছেন।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা এই পরিকল্পনা বিবেচনায় নিতে রাজি আছে।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মিতে ফ্রেডিরিকসেন বলেছেন, এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে তিনি রাজি আছেন।
সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন বলেছেন, তাঁর দেশ ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে প্রস্তুত আছে যদি এতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আরও একটি সম্মেলন আয়োজনের জন্য চাপ দিয়েছেন। ওই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন তিনি।
অন্যদিকে, পোল্যান্ড এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, তারা সেনা পাঠাবে না। অথচ দেশটি কিয়েভের সবচেয়ে সরব সমর্থকদের একজন ছিল। ইউক্রেনে মানবিক ও সামরিক সহায়তা পাঠানো নিয়েও পোল্যান্ড কিছু সীমা ধার্য করে দেওয়ার কথা বলেছে।
আরও পড়ুনইউক্রেনে এক মাসের আংশিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিচ্ছে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য: মাখোঁ০৩ মার্চ ২০২৫রাশিয়া কী বলছেওভাল অফিসে শুক্রবারের কাণ্ডের পর এখন পর্যন্ত এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেননি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তবে ক্রেমলিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ‘এটা ছিল কিয়েভের চূড়ান্ত কূটনৈতিক ব্যর্থতা।’
গতকাল সকালে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ইউক্রেন বিষয়ে লন্ডন সম্মেলনের সমালোচনা করেছেন।
পেসকভ বলেছেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে ইউক্রেনের জন্য তহবিল বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সেখানে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এটা নিশ্চয়ই একটি শান্তি পরিকল্পনার অংশ না, বরং এটা যুদ্ধ অব্যাহত রাখার জন্য করা হয়েছে।’
তবে রাশিয়া শান্তি আলোচনায় আগ্রহী জানিয়েছ পেসকভ আরও বলেন, ‘বাকি সবকিছু নির্ভর করছে কী ধরনের শান্তি পরিকল্পনা করা হবে এবং আলোচনার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হবে তার ওপর। এই প্রক্রিয়ার জন্য যেকোনো গঠনমূলক সমর্থন ও গঠনমূলক উদ্যোগকে এখন স্বাগত জানানো হবে।’
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রকে নিয়েই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একমত ইউরোপ০২ মার্চ ২০২৫