কিশোরগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধে মৃত্যু, আটক ৫
Published: 4th, March 2025 GMT
কিশোরগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় শরিফুল ইসলাম (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। হত্যায় জড়িত সন্দেহে পাঁচ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত শরিফুল ইসলাম (৩৫) মহিনন্দ ইউনিয়নের আগপাড়া গ্রামের মজলু মিয়ার ছেলে। তিনি মহিনন্দ বাজারে একটি চুল কাটার সেলুন পরিচালনা করতেন।
আরো পড়ুন:
বরিশালে যুবদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা
পতেঙ্গা সৈকতে পুলিশের এস আইয়ের উপর হামলা, গ্রেপ্তার ১০
আহতরা হলেন- এখলাস মিয়া, রাজন, ইদ্রিস মিয়া, আফসর আলী ও তানিয়া সুবর্ণা।
ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মাইজপাড়া গ্রামের আব্দুর রাশিদের ছেলে এখলাস মিয়ার সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল একই এলাকার আবু সালেহ ও তার স্বজনদের। গতকাল বিকেলে এ নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এই ঘটনার জেরে ইফতারের পর প্রতিপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এখলাস মিয়ার বাড়িতে হামলা চালায়। হামলায় এখলাস মিয়া, তার ফুফাতো ভাই শরিফুল ইসলামসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শরিফুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন।
এলাকাবাসী জানান, শরিফুল ইসলাম তার মামার বাড়িতে ইফতারের দাওয়াত খেতে যান। সেখান তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আহতদের মধ্যে পাঁচ জনকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/রুমন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহত আটক ক শ রগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
পায়রায় জাহাজে কাটা পড়ছে জাল-দড়ি, নিঃস্ব হচ্ছে জেলেরা
বরগুনার পায়রা নদীতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার জাহাজে কাটা পড়ছে শত শত জেলের জাল-দড়ি। এতে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে অন্তত ৬ শতাধিক জেলে। জেলেরা বলছেন, নৌ সীমানায় নির্দিষ্ট চ্যানেল না থাকায় সুবিধামতো জাহাজ চালিয়ে জাল-দড়ি কাটছে জেলেদের। তবে জেলেদের দ্বারা হামলার শিকারের দাবি করেছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে বরগুনার তালতলীর তেঁতুল বাড়িয়া এলাকার জয়নাল মৃধা পাঁচ জেলেসহ মাছ শিকার করছিলেন পায়রা নদীতে। এ সময় তালতলীর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা বোঝাই ১৬টি জাহাজ এসে লণ্ডভণ্ড করে ফেলে জয়নাল মৃধার জাল-দড়ি। পরে ধারদেনা করে ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে জাল-দড়ি মেরামত করে ১৩ দিন পর ২২ ফেব্রুয়ারি ফের পায়রা নদীতে মাছ শিকারে যান তিনি। ওই দিন ভোর রাতে আবারো তালতলীর খোট্টারচরে নির্মিত ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা বোঝাই জাহাজে লণ্ডভণ্ড করে ফেলে জয়নাল মৃধার জাল-দড়ি।
জয়নাল মৃধা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘এখন আমি ধারদেনায় ডুবে গেছি। আমিসহ পাঁচটি পরিবার এই জাল-দড়ির উপর নির্ভর করে। আমরা এখন খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি আর জাল-দড়ি নিজেরাই মেরামত করছি। কারণ এখন আর জাল-দড়ি মেরামত করার পেশাদার শ্রমিক ভাড়া করার সামর্থ্য আমার নেই।’’
আরো পড়ুন:
‘রমজানে মাছের ঘাটতি হবে না’
পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে মধ্যরাতে
তার অভিযোগ এবারই প্রথম নয়, গত দেড় বছর ধরে এমনভাবে বার বার জাল-দড়ি কাটা পড়ছে কয়লার জাহাজে। জেলেদের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহে পায়রা অন্তত ৫০ কিলোমিটার এলাকায় ৬ শতাধিক জেলের জাল-দড়ি কাটা পড়েছে কয়লার জাহাজে। বার বার জাল-দড়ি কাটা পড়ায় ঋণের বোঝায় অসহায় হয়ে পড়েছেন নদী পাড়ের জেলেরা।
জয়াল ভাংগা এলাকার জেলে জাহিদ হোসেন, মোস্তাফিজ, খবির মোল্লা, নিলু মাঝিসহ এ এলাকার সকল জেলে এখন ব্যস্ত কয়লার জাহাজে কাটা পড়া জাল-দড়ি মেরামত করতে। নৌরুটে জাহাজ চলাচলে নির্দিষ্ট চ্যানেলের দাবি তুলেছেন তারা।
জেলেরা জানান, কয়লা বোঝাই জাহাজে জাল-দড়ি কাটা পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে এই এলাকার জেলেরা।
নিলু মাঝি রাইজিংবিডি-কে জানান, এমনিতেই নদীতে ইলিশসহ সব মাছ কম ধরা পড়ে। তারপর আবার দেড় বছর ধরে কয়লার জাহাজে কাটা পড়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। জেলেদের এই লোকসানের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তিনি।
জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ থাকায় প্রভাব পড়েছে উপজেলার মৎস্য ব্যবসায়। জয়াল ভাংগা এলাকার মাছের আড়ৎদার সেলিম মাঝি জানান, এই এলাকার জেলেরা মাছ ধরতে না পারায় অলস সময় কাটছে তালতলীর আড়ৎদার-পাইকারদের। কর্মহীন হয়ে পড়েছে মৎস্য শ্রমিকরা।
এমন ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন কয়লা নিয়ে আসা জাহাজ চালকরাও। সামিরা-১ জাহাজের সেকেন্ড ক্যাপ্টেন ইউসুফ আলী জাল-দড়ি কাটার বিষয়টি স্বীকার করলেও তার দাবি পায়রায় আসলে তাদের উপর হামলা করে জেলেরা।
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সদস্য ও সিনিয়র সাংবাদিক আরিফ রহমান বলেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে অযোগ্য স্থানে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কুফলে ভুগছে জেলেরা। ঘনবসতিপূর্ণ জেলে পল্লীতে ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তৎকালীন প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বরিশাল ইলেকট্রিফেকশন কোম্পানি এ কাজটি করেছে। এখন প্রতিদিন জেলেদের জাল-দড়ি কাটা পড়ে পথে বসছেন তারা।
তিনি জানান, ইলিশের প্রজননের অন্যতম স্থান পায়রা নদী। কিন্তু সেই নদীতে এভাবে কয়লার জাহাজ আসা-যাওয়া করলে ইলিশের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তবে নির্দিষ্ট নৌরুট সৃষ্টির আগে জেলেদের সমস্যা নিরসনে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংলাপের কথা জানালেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন। তিনি আরো বলেন, ‘‘জেলেদের মাছ শিকারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করবো।’’
জাহাজে কাটা পড়ে চলতি বছরে অন্তত ৫ কোটি টাকার জাল-দড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি জেলেদের।
ঢাকা/বকুল