২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে উন্নত অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। দেশটির ষোড়শ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগড়িয়ার মতে, সে জন্য আগামী ২৪ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্তত ৭ দশমিক ৯ শতাংশ হতে হবে, তবে তা অসম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তিনি। যদিও প্রবৃদ্ধির সাম্প্রতিক সরকারি পরিসংখ্যানের কারণে এই উচ্চাশা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পানাগড়িয়ার হিসাব, এখন ভারতের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৭০ ডলার। উন্নত অর্থনীতি হয়ে উঠতে গেলে তা ১৪ হাজার ডলারে উন্নীত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আগামী ২৪ বছরে মাথাপিছু আয় বাড়তে হবে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। তার অর্থ, ২০৪৭-৪৮ অর্থবছর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখতে হবে অন্তত ৭ দশমিক ৯ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি।

এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব নয় বলেই মনে করেন পানাগড়িয়া। গত ২১ বছরে ভারতের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। তা ১০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়াতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার এনে শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রের উন্নতি দরকার বলে মনে করেন তিনি। তৈরি করতে হবে শোভন কাজ; এখন যে প্রযুক্তি হাতে আছে, তার সঙ্গে যোগ করতে হবে আরও পুঁজি ও দক্ষতা।

অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০৫০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ ধরে নিয়ে তাঁর এই পূর্বাভাস।

কিন্তু সম্ম্প্রতি ভারতের প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর-ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধির গতি বাড়লেও তা আটকে গেছে ৬ দশমিক ২ শতাংশে। ৮ শতাংশই তো নয়ই, বার্ষিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও দিচ্ছে না কোনো মূল্যায়ন সংস্থা।এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশেই আটকে যাবে। চলতি অর্থবছরেও তা ৬ দশমিক ৩ থেকে ৬ দশমিক ৪ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থা। আইএমএফ মনে করছে, কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে।

এদিকে বাংলাদেশও ২০২০ সালে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত অর্থনীতির হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু এরপর কোভিডের অভিঘাত এবং তারপর ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রবৃদ্ধির গতি অনেকটাই কমে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুসারে, ২০৪১ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১০ শতাংশে উঠে যাওয়ার কথা। সেই লক্ষ্য অর্জন এখন সুদূর পরাহত বলেই মনে করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব দ ধ র হ র র প রব দ ধ র ৬ দশম ক ৭ দশম ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এডিপি বাস্তবায়নে সুপারিশ উপেক্ষিত, ৩ বছরে ব্যয়ের লক্ষ্য ৯,০৮,৬০০ কোটি টাকা

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)-এর গতি বাড়াতে অর্থ বিভাগ ২০১৮ সালে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছিল। গত ছয় বছরেও সেগুলোর বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। ফলে এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়ানো সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উন্নয়নখাতে তিন বছরে ৯,০৮,৬০০ কোটি টাকা খরচ করার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।

এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়াতে ২০১৮ সালে  অনুষ্ঠিত বাজেট মনিটরিং কমিটির সভায় বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছিল অর্থ বিভাগ। এ সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল- অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পের বিপরীতে অর্থায়ন নিশ্চিত করা; নতুন অগ্রাধিকার প্রকল্পের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান না হলে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে বা স্থগিত রেখে নতুন প্রকল্পে অর্থায়ন করা; সর্বোচ্চ বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত ১০০টি প্রকল্পে বৈদেশিক সাহায্যের ছাড় ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কর্তৃক নিয়মিত পরিবীক্ষণ সভা করা; দক্ষ প্রকল্প পরিচালকের অভাব পূরণে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা এবং প্রবৃদ্ধি সহায়ক ১০টি বড় প্রকল্প সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা। 

জানা গেছে, এই সুপারিশগুলো এখন পর্যন্ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তাই সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন লক্ষ্য অনুযায়ী হচ্ছে না।

এদিকে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য আগামী তিন অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ৯ লাখ ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ করার প্রাথমিক লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এরমধ্যে আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে এডিপির আকার হবে দুই লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে তা সামান্য বাড়িয়ে প্রাক্কলন করা হয়েছে দুই লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এরপর ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে তা ৪৩ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে তিনলাখ ৪১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন বেশ খারাপ। এটি অর্থবছরের পুরোটা জুড়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে । কারণ চলতি অর্থবছরে জুলাই- জানুয়ারি পর্যন্ত ( সাত মাস) এডিপি বাস্তবায়ন হার অর্ধেকের কাছকাছি যাওয়া সম্ভব হয়নি। এ পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের এডিপি আকার খুব কম করে বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যেমন আগামী অর্থবছরে এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের চেয়ে মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যা আগে কখনো ঘটেনি। সব সময় এডিপির আকার অন্ততপক্ষে ৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জন্য যে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি হাতে নেওয়া হয়েছিল বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে এর সিংহভাগ অর্থই খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চলতি অর্থবছরের এডিপি মোটা অঙ্কের কাটছাট করা হচ্ছে। কাটছাটের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপি’র আকার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে মূল এডিপি থেকে সংশোধিত এডিপি’র আকার কমেছে ১৮ শতাংশ। এটিও একটি রেকর্ড। এর আগে খুব কম সময়ই এডিপি এতো পরিমাণ কমানো হয়েছে।

অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের জন্য একটি বড় আকৃতির এডিপি হাতে নিয়েছিল বিগত রাজনৈতিক সরকার। এই এডিপিতে অনেক রাজনৈতিক প্রকল্প ছিল, যা তত্বাবধায়ক সরকার কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করে বাস্তবায়ন স্থগিত করে রেখেছে। ফলে এডিপি বাস্তবায়ন হারও বেশ কমে গেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এডিপি চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে মূল এডিপি তো নয়ই, সংশোধিত এডিপিও পুরোটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সংশোধিত এডিপি’র সর্ব্বোচ্চ ৯৫ ভাগ বাস্তবায়ন করা গেছে। অর্থ বিভাগের করা ‘অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২’ তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে, ২০১৭-২০১৮ এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে। এই দুই অর্থবছরে সংশোধিত এডিপি’র বাস্তবায়ন হার ছিল ৯৫ শতাংশ। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম বাস্তবায়নের বছর ছিল ২০১৯-২০২০ অর্থবছর। এই অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল মাত্র ৮০ শতাংশ।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংশোধিত এডিপি ৪৯ হাজার কোটি টাকা কমল
  • ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স
  • পাওনা আদায়ে রিংশাইন টেক্সটাইলের ৬টি প্লটের বরাদ্দ বাতিল
  • প্রবাসী আয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ
  • ফেব্রুয়ারির ইতিহাসে রেকর্ড রেমিট্যান্স
  • রোজার আগের মাসে প্রবাসী আয় ২৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • রিং সাইনের অর্ধবার্ষিকে লোকসান বেড়েছে ৬ শতাংশ
  • এডিপি বাস্তবায়নে সুপারিশ উপেক্ষিত, ৩ বছরে ব্যয়ের লক্ষ্য ৯,০৮,৬০০ কোটি টাকা
  • রিংসাইন টেক্সটাইলের দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ