সাদার ওপর লাল-কালো নকশার ইট-সুরকিতে তৈরি শতবর্ষ পুরোনো মসজিদ। বড় বড় স্তম্ভের ওপর পাঁচটি খিলান ও তিন গম্বুজের মসজিদটি যেন এক শিল্পকর্ম। খিলানের ওপর মসজিদের দেয়ালজুড়ে লতা-পাতা আর ফুলের মোটিফ, সাবেকি গ্রামবাংলার কারুকার্য। অপূর্ব শৈলীর এই মসজিদের অবস্থান নিরিবিলি এক গ্রামে। চারদিকে ফসলের খেত আর পাখির কূজন। গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথিকদের একবার না একবার থামতে হয় মসজিদটির সামনে। এর নির্মাণশৈলীতে মুগ্ধ না হয়ে যে উপায় নেই।

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পূর্ব মিঠানালা গ্রামে এই মসজিদের অবস্থান। সবুজ-শ্যামল গ্রামটিতে পাখপাখালির কূজন ছাড়া নেই তেমন কোনো কোলাহল। এই গ্রামের মধ্যভাগে স্থাপিত শতবর্ষী একটি মসজিদটি দৃষ্টি কাড়ে সবার। এলাকার মানুষের নামাজ পড়ার সুবিধার্থে ১৯১৬ সালে মসজিদটি স্থাপন করেন স্থানীয় জনহিতৈষী ব্যক্তি হাজী গোলাম সুলতান। তার নাম অনুসারে তৈরি মসজিদটি এলাকায় হাজী গোলাম সুলতান জামে মসজিদ নামে পরিচিত।

হাজী গোলাম সুলতানের নাতি ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের বাসিন্দা হাজী গোলাম সুলতান ছিলেন সম্পদশালী ব্যক্তি। গোলাম সুলতানের বাবা এলাহী বক্সের চার ছেলের সবাই মিয়ানমারের রেঙ্গুনে খাদ্যপণ্যের ব্যবসা করতেন। সেই সন্তানদের একজন হাজী গোলাম সুলতান এলাকাবাসীর নামাজ পড়ার সুবিধার্থে এই মসজিদ স্থাপন করেন।

১৯১৬ সালে মসজিদটির প্রাথমিক কাঠামো স্থাপন হলেও ১৯২০ সালে মিয়ানমার থেকে কারিগর এনে বর্মি স্থাপত্যরীতিতে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির ভেতরে ও বাইরে ফুল পাখি আর লতাপাতার কারুকাজ স্থাপত্যটিকে অনন্য করে তুলেছে। প্রায় এক বিঘা জায়গার ওপর স্থাপিত মসজিদটির চারপাশে আছে পোড়া ইট আর সুরকির তৈরি পুরু নিরাপত্তা দেয়াল। সুদৃশ্য মিনারের তিন গুম্বজবিশিষ্ট মসজিদটি চোখে পড়ে অনেক দূর থেকে।

ফরিদ আহমেদ চৌধুরী জানান, শুধু মসজিদ নির্মাণ করেই দায়িত্ব শেষ করেননি তার দাদা হাজী গোলাম সুলতান। মসজিদটির পরিচালন ব্যয় যাতে নির্বিঘ্নে চলতে পারে, সে জন্য তিনি মসজিদের নামে দান করে গেছেন ১২ একরের বেশি কৃষি জমি। এসব জমির আয় থেকে এখন মসজিদটি যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা হয়। তবে আক্ষেপের বিষয়ে, কয়েক দফায় সংস্কার করতে গিয়ে মসজিদটির পুরোনো কারুকাজ অনেকটাই হারিয়ে গেছে।

গত ৩০ বছর ধরে মসজিদটির মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পূর্ব মিঠানালা গ্রামের বাসিন্দা সালেহ আহমদ। তিনি জানান, এই জনপদের জন্য হাজী গোলাম সুলতান জামে মসজিদটি বেশ প্রাচীন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম সুলতান হলেও এটি এখন গ্রামের সব মানুষের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ঈদের নামাজের জামাতসহ বড় ধর্মীয় উৎসবগুলোয় মসজিদ প্রাঙ্গণ এখন প্রাণবন্ত থাকে সব সময়। মসজিদের কল্যাণে তাঁর উত্তরাধিকারীরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। মসজিদটির সৌন্দর্যের টানে এখন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এটি দেখতে আসেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মসজ দ র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

বর্মি স্থাপত্যশৈলীর অপূর্ব মসজিদ (আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল নয়টায় তুলবেন)

সাদার ওপর লাল-কালো নকশার ইট-সুরকিতে তৈরি শতবর্ষ পুরোনো মসজিদ। বড় বড় স্তম্ভের ওপর পাঁচটি খিলান ও তিন গম্বুজের মসজিদটি যেন এক শিল্পকর্ম। খিলানের ওপর মসজিদের দেয়ালজুড়ে লতা-পাতা আর ফুলের মোটিফ, সাবেকি গ্রামবাংলার কারুকার্য। অপূর্ব শৈলীর এই মসজিদের অবস্থান নিরিবিলি এক গ্রামে। চারদিকে ফসলের খেত আর পাখির কূজন। গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথিকদের একবার না একবার থামতে হয় মসজিদটির সামনে। এর নির্মাণশৈলীতে মুগ্ধ না হয়ে যে উপায় নেই।

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পূর্ব মিঠানালা গ্রামে এই মসজিদের অবস্থান। সবুজ-শ্যামল গ্রামটিতে পাখপাখালির কূজন ছাড়া নেই তেমন কোনো কোলাহল। এই গ্রামের মধ্যভাগে স্থাপিত শতবর্ষী একটি মসজিদটি দৃষ্টি কাড়ে সবার। এলাকার মানুষের নামাজ পড়ার সুবিধার্থে ১৯১৬ সালে মসজিদটি স্থাপন করেন স্থানীয় জনহিতৈষী ব্যক্তি হাজী গোলাম সুলতান। তার নাম অনুসারে তৈরি মসজিদটি এলাকায় হাজী গোলাম সুলতান জামে মসজিদ নামে পরিচিত।

হাজী গোলাম সুলতানের নাতি ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের বাসিন্দা হাজী গোলাম সুলতান ছিলেন সম্পদশালী ব্যক্তি। গোলাম সুলতানের বাবা এলাহী বক্সের চার ছেলের সবাই মিয়ানমারের রেঙ্গুনে খাদ্যপণ্যের ব্যবসা করতেন। সেই সন্তানদের একজন হাজী গোলাম সুলতান এলাকাবাসীর নামাজ পড়ার সুবিধার্থে এই মসজিদ স্থাপন করেন।

১৯১৬ সালে মসজিদটির প্রাথমিক কাঠামো স্থাপন হলেও ১৯২০ সালে মিয়ানমার থেকে কারিগর এনে বর্মি স্থাপত্যরীতিতে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির ভেতরে ও বাইরে ফুল পাখি আর লতাপাতার কারুকাজ স্থাপত্যটিকে অনন্য করে তুলেছে। প্রায় এক বিঘা জায়গার ওপর স্থাপিত মসজিদটির চারপাশে আছে পোড়া ইট আর সুরকির তৈরি পুরু নিরাপত্তা দেয়াল। সুদৃশ্য মিনারের তিন গুম্বজবিশিষ্ট মসজিদটি চোখে পড়ে অনেক দূর থেকে।

ফরিদ আহমেদ চৌধুরী জানান, শুধু মসজিদ নির্মাণ করেই দায়িত্ব শেষ করেননি তার দাদা হাজী গোলাম সুলতান। মসজিদটির পরিচালন ব্যয় যাতে নির্বিঘ্নে চলতে পারে, সে জন্য তিনি মসজিদের নামে দান করে গেছেন ১২ একরের বেশি কৃষি জমি। এসব জমির আয় থেকে এখন মসজিদটি যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা হয়। তবে আক্ষেপের বিষয়ে, কয়েক দফায় সংস্কার করতে গিয়ে মসজিদটির পুরোনো কারুকাজ অনেকটাই হারিয়ে গেছে।

গত ৩০ বছর ধরে মসজিদটির মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পূর্ব মিঠানালা গ্রামের বাসিন্দা সালেহ আহমদ। তিনি জানান, এই জনপদের জন্য হাজী গোলাম সুলতান জামে মসজিদটি বেশ প্রাচীন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম সুলতান হলেও এটি এখন গ্রামের সব মানুষের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ঈদের নামাজের জামাতসহ বড় ধর্মীয় উৎসবগুলোয় মসজিদ প্রাঙ্গণ এখন প্রাণবন্ত থাকে সব সময়। মসজিদের কল্যাণে তাঁর উত্তরাধিকারীরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। মসজিদটির সৌন্দর্যের টানে এখন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এটি দেখতে আসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ