অটোরিকশাচালককে হত্যার প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে গাজীপুরের শ্রীপুরে বেতঝুড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন স্থানীয় লোকজন। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে তাঁরা এই অবরোধ শুরু করেন।এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখার সময় সকাল সাড়ে ১০টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলছিল।

ওই অটোরিকশাচালকের নাম রিটন মিয়া (৩৫)। তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার শিরিরচালা গ্রামের মো.

দুলাল মিয়ার ছেলে। গতকাল সোমবার রাত পৌনে আটটার দিকে শ্রীপুরের বেতঝুড়ি গ্রামে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। তাঁর স্বজনদের অভিযোগ, তাকওয়া পরিবহন নামের একটি বাসের লোকজন রিটনকে হত্যা করে সড়কে ফেলে যান। রিটনের লাশ পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় তাকওয়া পরিবহনের বাসচালক জনি মিয়াকে (২৯) আটক করেছে পুলিশ।

সরেজমিন দেখা যায়, শ্রীপুর পৌর এলাকার বেতঝুড়ি গ্রামে মহাসড়কের দুই পাশে কয়েক শ লোকজন হাতে লাঠি নিয়ে সড়কের ওপর অবস্থান করছেন। তাঁরা এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে এর দ্রুত বিচার দাবি করে মিছিল করছিলেন। শ্রীপুর থানা-পুলিশ ও মাওনা হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলছেন।

সড়কে অবস্থান নেওয়া নিহত রিটন মিয়ার ভাতিজি তাসলিমা খাতুন বলেন, তাঁর চাচা মহাসড়কে অটোরিকশা চালান। গতকাল তাকওয়া পরিবহনের একটি বাস ওই অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে অটোরিকশার কাঁচ ভেঙে যায়। জরিমানা আদায়ের জন্য তাঁর চাচা দৌড়ে বাসের সামনে দাঁড়ান। এ সময় তাকওয়া পরিবহনের ভেতরে থাকা চালক ও সহকারী মিলে তাঁর চাচাকে জোর করে বাসে তুলে নেন। ভেতরে রেখেই ব্যাপক মারধর করেন। একপর্যায়ে তাঁকে হত্যা করে বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, ওই ঘটনায় বাস ও এর চালককে আটক করেছে পুলিশ। তবে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা নিচ্ছে না পুলিশ।

নিহত রিটন মিয়ার আরেক স্বজন মিজানুর রহমান বলেন, জরিমানা চাওয়ার কারণে তাকওয়া পরিবহনের লোকজন রিটনকে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় মামলা নিয়ে বিচারের আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা সড়ক ছেড়ে যাবেন না।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর বহন র অবর ধ ল কজন ত কওয়

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বৈষম্যবিরোধীদের ‘পৃষ্ঠপোষক’কে নিয়োগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগ দপ্তরে অনুসন্ধান কাম তথ্য কর্মকর্তা পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ‘পৃষ্ঠপোষক’ রাশেদুল ইসলামের নিয়োগের পেছনে কয়েকজন সমন্বয়ক প্রভাব খাটিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতারা। তাঁরা বলেন, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ নিয়োগ দিয়েছে প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এ কথাগুলো বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পাসের ছয়টি ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন, ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাকিব হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফুয়াদ রাতুল, ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব আল শাহরিয়ার শুভ, ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সিকদার ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি শামিন ত্রিপুরা। লিখিত বক্তব্য দেন রাকিব হোসেন।

রাকিব হোসেন বলেন, ‘রাশেদুল ইসলাম রাবির সমন্বয়কদের পৃষ্ঠপোষক। তিনি স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক। সবার জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই মেহেদী সজীব, ফাহিম রেজাসহ স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের আরও কয়েকজন সদস্য রাবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক প্যানেলে আছেন। আমাদের ধারণা, অতীতের আওয়ামী লীগের মতো মেহেদী সজীব, ফাহিম রেজাসহ কতিপয় সমন্বয়কেরা নিজেদের প্রভাব খাটিয়েছে এবং এই নিয়োগের পেছনে তাঁরা জড়িত থাকতে পারেন। স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই নিয়োগ সম্পন্ন করেছে প্রশাসন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য নিয়োগসহ একাধিক নিয়োগে সমন্বয়কদের প্রভাব রয়েছে দাবি করে রাকিব হোসেন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ জন সমন্বয়কের মধ্যে ১২ জন সম্মত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য নিয়োগে কলকাঠি নেড়েছে। আমাদের আশঙ্কা, সমন্বয়ক পরিচয়ের প্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নিয়োগের মধ্য দিয়ে প্রশাসনকে জিম্মি করে রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন সমন্বয়কদের এই অংশ শুধু নিয়োগ প্রক্রিয়া নয়, আরও অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাব বিস্তার করছে। এ ছাড়া অতীতে জনসংযোগ দপ্তরে নিয়োগ পাওয়া প্রশাসকও সমন্বয়ক মেহেদী সজীবের বিভাগের ঘনিষ্ঠ শিক্ষক। তা ছাড়া বিভিন্ন হল প্রাধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাঁর প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল।’

আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য কর্মকর্তা পদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘পৃষ্ঠপোষক’কে নিয়োগ১৭ ঘণ্টা আগে

রাশেদুল ইসলামের নিয়োগ ২৪-এর অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী ও দুই হাজার শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানির শামিল বলে মন্তব্য করেন রাকিব হোসেন। অবিলম্বে তাঁর নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, রাশেদুল ইসলামের একাডেমিক ফলাফল এবং সামগ্রিক বিষয়ে উপাচার্য অবগত নন। এই নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হওয়ায় তাঁরা নিয়োগ দেওয়ার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। অতি দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়ার সংস্কার এবং অনতিবিলম্বে রাশেদুলের নিয়োগ বাতিল করতে হবে।’

গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে রাশেদুল ইসলামকে অ্যাডহক ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরে অনুসন্ধান কাম তথ্য কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেন। এ নিয়োগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ