সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ কিংবা হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার মতো প্রতিশ্রুতি ভারতের তরফ থেকে এসেছে বহুবার। ওই প্রতিশ্রুতি পর্যন্তই; বন্ধ হচ্ছে না গুলি, থামছে না সীমান্ত হত্যা। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় অনেকের ঘরে নেমে আসে তিমির, থামে না রোদন। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড যেন প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কে কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে।

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা সেই ফেলানীর ছবি এখনও গেঁথে আছে অনেকের হৃদয়পটে। সেই ঘটনা দেশ-বিদেশে তৈরি করেছিল চাঞ্চল্য। তবু ফেলানী হত্যার সঙ্গে জড়িত বিএসএফ সদস্যদের বেকসুর খালাস দেন আদালত। এরপর মামলা ভারতের সুপ্রিম কোর্টে গড়ালে বিচার হয়নি আজও।
দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন এ ধরনের প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগও জানিয়ে আসছে। আর সীমান্তে যারা জীবন দিচ্ছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরাও বলছেন, কেউ নিয়ম ভাঙলে প্রচলিত আইন প্রয়োগ করা হোক। 

গুলি করে প্রাণহানির মতো ঘটনা এড়ানোর দাবি তাদের। নানা সময় বাংলাদেশ-ভারতের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক, বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের সম্মেলনে উভয় দেশ প্রাণঘাতীর অস্ত্রের ব্যবহার না করার ব্যাপারে একমত হলেও সীমান্তে সেটির কার্যকারিতা দেখা যায় না।

সীমান্তে যে গুলি বন্ধ হয়নি, এর সত্যতা মিলেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বিশ্লেষণেই। গেল ২০২৪ সালেই সীমান্তে প্রাণ গেছে ৩০ জনের। এর মধ্যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতেই মারা যান ২৫ জন। আর নির্যাতনে প্রাণ নিভেছে চারজনের। এ বছরের জানুয়ারিতে মারা গেছেন দু’জন। সর্বশেষ গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক আল-আমীন নিহত হন।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারির মর্মন্তুদ ঘটনার স্মৃতিচারণ করে গতকাল সোমবার ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘মেয়েকে হারিয়ে কেউ যেন আমার মতো না কাঁদে। আমি চাই, সীমান্ত হত্যা পুরোপুরি বন্ধ হোক। সীমান্ত দেখলেই মেয়ের কথা মনে পড়ে, কান্না চলে আসে।’ তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন ফেলানী আমার হাত ধরেই ছিল। যেদিন ওকে মারা হয়, পরদিন ওর বিয়ের কথা ছিল। যারা এ ঘটনায় জড়িত, তাদের বিচার চাই। মামলাটি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হওয়ার কথা। বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ, ন্যায়বিচার পেতে তারা যেন আমাকে সহযোগিতা করে।’

ভারতকেন্দ্রিক মানবাধিকার সংগঠন বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সম্পাদক কিরিটী রায় সমকালকে বলেন, ‘সীমান্ত বাণিজ্যে দুই পাশের অনেকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত। হরিয়ানা-রাজস্থান থেকে কীভাবে গরু কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরসহ অন্যান্য সীমান্তে আসে? নিশ্চয়ই এর সঙ্গে অনেকে জড়িত। কারণ, বিএসএফ সীমান্তে গুলি চালায়। বাংলাদেশ কাগুজে প্রতিবাদ জানায়। এতে কার্যকর কোনো ফল আসে না। ফেলানীর মামলাটি চূড়ান্ত শুনানির জন্য চার থেকে পাঁচ বছর ধরে পড়ে আছে।’

আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির বলেন, ‘সীমান্তে এনফোর্সমেন্ট অ্যাক্টে শত শত লোক গ্রেপ্তার হয়। গুলি না করে সীমান্তে কেউ নিয়ম ভাঙলে ওই আইন প্রয়োগ করা যায়।’

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে বিএসএফ সাড়ে ১৩ বছর বয়সী ফেলানীকে হত্যা করে। ১৪ বছর বয়সী স্বর্ণা দাসকে হত্যা করা হয় সেই ঘটনার ১৩ বছর পর; ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাতে। মায়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরায় থাকা ভাইকে দেখতে যাওয়ার সময় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে মারা যায় স্বর্ণা দাস। স্বর্ণা মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামে নিরোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। ওই ঘটনার শোক না কাটতেই ৯ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় জয়ন্ত কুমার সিংহ জাম্বু (১৫)।

গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সীমান্তে অপ্রীতিকর ঘটনা বা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেটির সমাধানে আইনি পথ রয়েছে। কাউকে হত্যা করা কোনো সমাধান নয়।’ এসব হত্যাকাণ্ড কিন্তু একতরফা বলে মনে করেন তিনি। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যারা সীমান্ত অতিক্রম করে, তারা নিতান্তই সাধারণ লোকজন। তাদের হত্যা করা আসলে এক প্রকার নিষ্ঠুরতা এবং এই নিষ্ঠুরতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও সীমান্তে ফেলানীর মতো হত্যাকাণ্ড আর দেখতে চান না। গত শনিবার কক্সবাজারে এক অনুষ্ঠান শেষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘সীমান্তে হত্যা অব্যাহত থাকলে বিজিবি আরও কঠোর হবে। অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটুক আর যা-ই ঘটুক, হত্যা চূড়ান্ত সমাধান হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার বিএসএফকে জানিয়ে দিয়েছি– এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ চালিয়ে যাব। আর যদি একটি হত্যার ঘটনাও ঘটে, তাহলে আমরা আরও কঠোর অবস্থানে যাব।’ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যদি এসব ঘটনা চলতে থাকে, আমরা আমাদের প্রতিবাদ আরও জোরদার করব।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করা হলে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। তবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনার স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ও দ্বিপক্ষীয় প্রটোকল মেনে চললে হতাহতের ঘটনা ঘটবে না। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এ রকম দ্বিপক্ষীয় দুটি প্রটোকল হলো– জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইন্স ফর বর্ডার অথরিটিজ অব দ্য টু কান্ট্রিজ, ১৯৭৫ এবং দ্য ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান, ২০১১।

জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইন্স ফর বর্ডার অথরিটিজ অব দ্য টু কান্ট্রিজ প্রটোকলের ধারা ৮(আই) অনুসারে, এক দেশের নাগরিক যদি বেআইনিভাবে অন্য দেশে প্রবেশের চেষ্টা করে বা কোনো অপরাধে জড়ায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আত্মরক্ষায় যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে, তবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করাটাই বাঞ্ছনীয়।

আর্টিকেল ৮(এম) অনুসারে, সীমান্ত দিয়ে যদি গরু পাচার করা হয়, তাহলে গরু ও পাচারকারীর সম্পর্কে তথ্য অপরপক্ষের সীমান্তরক্ষীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। কাছাকাছি থানার পুলিশের কাছে মামলা করে গরু উদ্ধারে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সীমান্ত হত্যাকাণ্ড 
আসকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালে সীমান্তে মারা গেছেন ৪৮ জন। এর মধ্যে গুলিতে ৪২ ও নির্যাতনে ৬ জন। এ ছাড়া আহত হন ২৬ জন। ২০২১ সালে মারা গেছেন ১৮; এর মধ্যে গুলিতে ১৬ জন। ২০২২ সালে ২২ জন; এর মধ্যে গুলিতে ১৬ জন। ২০২৩ সালে প্রাণ গেছে ৩১ জনের; ২০১৪ সালে ৩০ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত আরও দু’জন নিহত হন।

শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন রাসেল 
২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে এখনও দিনাতিপাত করছেন রাসেল মিয়া। লালমনিরহাট উত্তর-বাংলা কলেজে অনার্সপড়ুয়া রাসেল সমকালকে বলেন, সেই দিন সীমান্ত এলাকায় গরু চরাচ্ছিলেন বাবা। প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ বাবা খবর পাঠান তাঁকে সহযোগিতা করতে সীমান্ত এলাকায় যেতে। গিয়ে দেখি, ১০ থেকে ১৫ জন কৃষক মাঠে কাজ করছিল। এ সময় হঠাৎ ভুট্টা ক্ষেতের আড়াল থেকে বিএসএফ ধাওয়া দেয়। তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম। আমার বয়স ছিল সবচেয়ে কম। ভয়ে পাশের নদীতে ঝাঁপ দিই। কিছু সময় পর মনে হলো, বিএসএফ চলে গেছে। পানি থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময় গুলি করা হয়। সব মিলিয়ে ৪৮টি স্প্লিন্টার লাগে। পরে উদ্ধার করে আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকার আগারগাঁওয়ের চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। ততক্ষণে আমার এক চোখ পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। এখনও সেই চোখে দেখি না। আরেক চোখেও সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালে থাকার সময় পত্রিকায় লেখালেখির পর আসক খোঁজ-খবর নেয়। এর পর ভারতীয় দূতাবাস থেকে যোগাযোগ করে। দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সে দু’বার নেওয়া হয়েছিল। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। অন্যের ওপর যাতে নির্ভরশীল হতে না হয়, এটার ব্যবস্থা হলে নির্ভার থাকতাম। জড়িতদের বিচার চাই আমি।

গ্রামে গ্রামে আতঙ্ক
উত্তরাঞ্চল থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছেই। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পালাবদলের পর কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ সীমান্তে একাধিক স্থানে উত্তেজনার পাশাপাশি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত ১৩ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের দক্ষিণ পাকা নিশিপাড়া এলাকায় বিএসএফের গুলিতে আবদুল্লাহ (৩০) নিহত হন। তিনি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। এ সময় বিএসএফ গুলি চালায়। গত ২ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে গরু আনতে গেলে এক বাংলাদেশিকে বিএসএফ গুলি করে। আহত ব্যক্তি সাইফুর রহমান (৪৫) স্থানীয় কৃষক।

গত ৫ জুলাই ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর নাগরভিটা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে রাজু মিয়া (২৮) নামে এক যুবক নিহত হন। রাজু মিয়ার লাশ বিএসএফ দু’দিন পর ফেরত দেয়।

সর্বশেষ গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফতেপুর ও রঘুনাথপুর ক্যাম্পের মাঝ এলাকা দিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশের অভিযোগে ভারতের ১১৫ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের রেসক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা বারিকুল ইসলাম নামের এক বাংলাদেশিকে আটকের পর নির্যাতন করলে তিনি মারা যান। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সোনামসজিদ সীমান্ত দিয়ে তাঁর পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

এ ছাড়া দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে ১০ সেপ্টেম্বর বিএসএফের গুলিতে আব্দুর রহিম (৩২) নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। একইভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের তেলকুপি সীমান্তে জমিতে সেচ দিতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে আহত হন হাবিল আলী ও বেলাল হোসেন নামে দুই কৃষক।

এর আগে জানুয়ারিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের আজমতপুর সীমান্তের বাগিচাপাড়া এলাকায় বিএসএফ সদস্যরা গুলি ছোড়ে। এ সময় আহত হন শহিদুল ইসলাম নামে এক কৃষক। এ ছাড়া চৌকা সীমান্তে বেড়া নির্মাণ নিয়ে সীমান্তে অস্থিরতায় সৃষ্ট সংঘর্ষে আহত হন পাঁচজন। লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম সীমান্তে সম্প্রতি বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া বসানোর চেষ্টা করলে বিজিবি বাধা দেয়।

কামাল চোরাকারবারি ছিলেন না
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা সীমান্তে গুলিতে কামাল হোসেন (৩৫) নিহত হন। পরিবারের দাবি, চোরাকারবারি ভেবে গুলি করে তাঁকে হত্যা করা হয়। কামাল চোরাকারবারি ছিলেন না। এ ঘটনায় বিজিবির তীব্র প্রতিবাদের মুখে বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করে ২৬ ঘণ্টা পর লাশ হস্তান্তর করে।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় কুমিল্লার সদর দক্ষিণের পাহাড়পুর এলাকায় বিএসএফের গুলিতে নিহত হন কামাল। এ সময় বিএসএফ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে তাঁর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।

কামালের বড় ভাই হিরন মিয়া বলেন, তাকে চোরাকারকারি ভেবে বিএসএফ গুলি চালিয়ে হত্যা করে। সে পিঁপড়ার বাসা ভেঙে পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করত। এতে যা আয় হতো, তা দিয়ে সংসার চলত। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছিল কামাল। তার মৃত্যুতে আর্থিক সংকটে আছে পরিবারটি। 

ছয় মাসে সিলেট সীমান্তে ৯ হত্যাকাণ্ড
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ সীমান্তে গত ৬ মাসে ৮ বাংলাদেশি হত্যার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনকে বিএসএফ ও ছয়জনকে ভারতীয় খাসিয়ারা গুলি করে হত্যা করে। সবচেয়ে বেশি হত্যা হয়েছে সিলেট সীমান্তে। সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সীমান্তে একদিনের ব্যবধানে দুই বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ। সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের মাছিমপুর সীমান্তে গত ৮ জানুয়ারি বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারান সাইদুল ইসলাম (২৩)। সুপারি নিয়ে মাছিমপুর সীমান্তের গামাইতলা এলাকা দিয়ে যাওয়ার পথে বিএসএফ সদস্যরা তাঁকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ৬ জানুয়ারি রাতে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের বাল্লা সীমান্তের বড়কিয়া এলাকায় জহুর আলী (৫০) নামে এক বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে বিএসএফ ও ভারতীয় লোকজনের বিরুদ্ধে। পরদিন লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ।

২২ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে শ্রমিক গোপাল বাক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে বিজিবি। আগের দিন পাহাড় থেকে বাঁশ আনতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি।

২৬ ডিসেম্বর সিলেটের জৈন্তাপুরের সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে মারুফ মিয়া (১৬) নামের এক কিশোর নিহত হয়। একদিন পর ২৭ ডিসেম্বর রাতে গোয়াইনঘাটের সীমান্তবর্তী ভিতরগুল গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে সবুজ মিয়া (২২) খাসিয়াদের গু‌লিতে মারা যান। গত ৫ নভেম্বর একই উপজেলার সীমান্তবর্তী টিপরাখলা-ঘিলাতৈল এলাকায় খাসিয়ার গুলিতে মারা যান জমির আহমদ (২৫)। গত ২৬ ডিসেম্বর একই উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ী গ্রামের সাহাব উদ্দিনে ছেলে মারুফ আহমদ (২০) খাসিয়ার গুলিতে আহত হন। পরে তিনি মারা যান। ৪ ডিসেম্বর কোম্পানীগঞ্জসংলগ্ন ভারত সীমান্তের অভ্যন্তর থেকে আশরাফ উদ্দিন (৬৫) নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে বিজিবি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এসএফ র গ ল ত প ইনব বগঞ জ র স ম ন ত এল ক য় ব এসএফ সদস স প ট ম বর ব এসএফ স প রব শ র পর ব র র ড স ম বর ল ইসল ম ইন ড য় বর ড র ক রব র বন ধ হ ঘটন র এ সময় ঘটন য় র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতীয়রা সীমান্ত আইন না মানলে আরও কঠোর হবে বিজিবি: ডিজি 

সীমান্তে ভারতীয়রা আইন না মানলে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়ে বিজিবির  মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিক। তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা কোনোভাবে কাম্য নয়। ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের গ্রেপ্তারের পর যথাযথ সম্মান দিয়ে তাদের কাছে আমরা হস্তান্তর করি। সেটা কতটুকু আর করা যাবে, যদি তারা না করে।

আজ শনিবার দুপুরে বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের প্রশিক্ষণ মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে নবসৃজিত উখিয়া ব্যাটালিয়নসহ (৬৪ বিজিবি) চারটি ইউনিট উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। 

সম্প্রতি ভারতের নয়াদিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সীমান্ত হত্যা নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে- জানতে চাইলে বিজিবি প্রধান বলেন, সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনার বিষয়টি প্রাধান্য এক নম্বরে ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যুবক নিহত হয়েছে। সেই ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত বিএসএফ সদরদপ্তর থেকে শুরু করে সবখানে বিজিবির পক্ষ থেকে অত্যন্ত জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। 

তিনি বলেন, বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনের পরে এই ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি, যেন অবৈধভাবে ভারতের অভ্যন্তরে কেউ অনুপ্রবেশের চেষ্টা না করে। তবে আমরা জোরালো শক্ত ও কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানানোর পরে কিছু ছবি পেয়েছি। সেখানে সংঘবদ্ধ ১৫-২০ জন অবৈধভাবে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ করছিল। তখন বিএসএফ বাধা দেওয়ার পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত হয়। 

বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, সেই সংঘাতে বিএসএফ রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে ওই যুবকের পেটে লাগে। দুর্বল জায়গায় রাবার বুলেটেও কেউ মারা যেতে পারে। বাংলাদেশি যুবককে আহত অবস্থায় তারা (বিএসএফ) হাসপাতালে নিয়ে অপারেশন করিয়েছিল; তারপরেও তাকে বাঁচানো যায়নি।

মহাপরিচালক আরও বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ হোক আর যাইহোক; হত্যা কোনো চূড়ান্ত সমাধান হতে পারে না। আরও যদি একটি (হত্যা) করা হয় আমরা পরবর্তীতে আরও কঠোর অবস্থানে যাবো।
আমরা চেষ্টা করছি, ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে কেউ অনুপ্রবেশের চেষ্টা না করে।

মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে কোনো শঙ্কা আছে কি-না জানতে চাইলে বিজিবি ডিজি বলেন, কেউ যদি মিয়ানমার সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ না করে, (মাদক ছাড়া) তার নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি নেই। নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকলে আমরা (বিজিবি) তৈরি আছি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩ বাংলাদেশিকে আটক করে বিএসএফ, বিজিবির চেষ্টায় ফেরত
  • ভারতে আটক ২ বাংলাদেশি নারীকে হস্তান্তর করল বিএসএফ
  • বাধার পরও ৬০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ
  • নিহত বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর করেছে বিএসএফ
  • দহগ্রাম সীমান্তে ফের কাঁটাতারের বেড়া দিল বিএসএফ
  • ভারতীয়রা সীমান্ত আইন না মানলে আরও কঠোর হবে বিজিবি: ডিজি